দেব গোস্বামী, বোলপুর: পৌষমেলায় এবার রেকর্ড ভিড়ের আশা। পারদ চড়ছে হোটেল-গেস্ট হাউসের ভাড়ায়। বোলপুর-শান্তিনিকেতনে বেসরকারি হোটেলগুলিতে ‘প্যাকেজ যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি প্যাকেজ যুদ্ধে শামিল বিশ্বভারতীর বিভিন্ন গেস্ট হাউস। আগামী ২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর, বেসরকারি হোটেলগুলিতে ভাড়া এক ঝটকায় দ্বিগুণ কোথাও তিনগুণ বেশি করা হয়েছে। এছাড়াও জিএসটি এবং খাবারের খরচ আলাদা। চড়া দরে জেরবার পর্যটকরা। সঙ্গে টোটো ভাড়াও তিনগুন বাড়িয়েছে টোটো চালক-সহ ইউনিয়ন। বোলপুর স্টেশন থেকে শান্তিনিকেতন, টোটো ভাড়া এক লাফে বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
তবে ২০১৯ সালের পর পূর্বপল্লির মাঠে মেলা ফেরায় খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হস্তশিল্পীরা। মেলা থেকে অল্প দূরের হোটেলগুলি প্রান্তিক, সোনাঝুড়ি, শ্যামবাটি এলাকায় বুকিং প্রায় শেষ। হোটেল মালিকদের দাবি, এবছর মেলার বুকিং প্রায় সম্পূর্ণ। পূর্বপল্লির মেলার মাঠ থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও হোটেলেই ঘর খালি পাওয়া যাচ্ছে না। বুকিং শেষ অনলাইনেও। অন্যদিকে হাহাকার ট্রেনের টিকিতেও। হাওড়া থেকে বোলপুর-শান্তিনিকেতন অথবা হাওড়াগামী ট্রেন টিকিট পাওয়া মুশকিল হয়ে উঠেছে।
বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস, তারা মা এক্সপ্রেস, ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস-সহ প্রায় সব ট্রেনেই লম্বা ওয়েটিং লিস্ট। মেলায় আগত পর্যটকদের ভিড় সামাল দিতে যাত্রী স্বাচ্ছন্দের কথা মাথায় রেখে এখন পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ পূর্ব রেল ঘোষণা করেনি। হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, সারা বছরই পর্যটকদের জন্য ভাড়া একই নেওয়া হয়। শুধু পৌষমেলা এবং বসন্ত উৎসবে দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিনিকেতনে প্যাকেজ সিস্টেমে ভাড়া নেওয়া হয়। কলকাতার বাসিন্দা সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজন্যা দত্ত বলেন, "এবার হোটেল ভাড়া কোথাও তিন দিনে চার গুণ কোথাও পাঁচ গুণ বাড়ানো হয়েছে প্যাকেজে। যা মধ্যবিত্তদের পক্ষে অসম্ভব। যদিও হোটেল ব্যবসায়ী গণেশ ঘোষ ও সুজয় হাজরা বলেন, "পূর্বের মতোই অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি ২৩ থেকে ২৫ ডিসেম্বর, অন্যটি ২৬ থেকে ২৮ ডিসেম্বর, তিনদিনের এই প্যাকেজ করা হয়েছে। একদিন বা দু’দিনের জন্য হোটেল ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না।"
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, পৌষমেলা উপলক্ষেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গেস্ট হাউস রতন কুটির, পূর্বপল্লি এবং ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউসেও তিন দিনের প্যাকেজ করা হয়েছে। ভাড়াও দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। তবে রবীন্দ্র ঐতিহ্য ও ভাবনা অনুসরণ করেই শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় এই বছর শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা হতে চলেছে পূর্বপল্লির মাঠেই। বাঙালির প্রাণের উৎসবে অংশগ্রহণ করতেই যাবতীয় প্রস্তুতি থেকে হোটেল বুকিং সেরে ফেলছেন পর্যটকেরা।
বীরভূম জেলা প্রশাসনও জোরকদমে শুরু করেছে মেলার প্রস্তুতি। শান্তিনিকেতন জুড়েই যেন উৎসবের আমেজ।