shono
Advertisement

সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ডাক না পেয়ে আক্ষেপও ছিল সুপ্রিয়া দেবীর

বাঙালির ‘নীতা’, ‘অনসূয়া’ হারিয়ে গেল The post সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ডাক না পেয়ে আক্ষেপও ছিল সুপ্রিয়া দেবীর appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:58 PM Jan 26, 2018Updated: 02:28 PM Jan 26, 2018

নির্মল ধর: না, সুপ্রিয়া দেবী তাঁর অভিনয় জীবনের দুই ‘বেঞ্চ মার্ক’ চরিত্র, ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নীতা কিংবা ‘কোমল গান্ধার’ ছবির প্রতিবাদী নাট্যাভিনেত্রী অনসূয়ার জন্য কোনও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাননি। পেয়েছিলেন বিদগ্ধ দর্শকের কাছে যথেষ্ট সম্মান। স্বাধীনতার নির্মম নিয়তিতে শিকড় ছিঁড়ে উদ্বাস্তু হয়ে এপার বাংলায় চলে আসা নিম্নমধ্যবিত্ত এক তরুণীর আশা-স্বপ্ন, জীবনসংগ্রামের এক অনিবার্য পরিণতি উত্তর বাংলার পাহাড়ে পাহাড়ে ধ্বনিত হয়েছিল, ‘দাদা, আমি কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলাম’ এই কটি শব্দের হাহাকারে। জাতীয় নাট্য আন্দোলনের অন্যতম আদর্শবান সদস্য হিসেবে অভিনেত্রী অনুসূয়া যেমনভাবে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে মানতে পারেনি, তেমনই মুখর হয়েছিল দলত্যাগী দুই সদস্যদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সুপ্রিয়া দেবীর অভিনয় জীবনের এই দুটি চরিত্র বাংলা সিনেমায় যেমন আইকনিক চরিত্র হয়ে আছে। তেমনই অভিনেত্রী হিসেবে তিনি নিজেকে বাংলা সিনেমায় এক দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। ছিলেন এবং থাকবেনও।

উত্তমলোকে আজ খোলা বেণুদির রান্নাঘর ]

পরবর্তী প্রায় ষাট বছরে সুপ্রিয়া শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। বেশিরভাগ চরিত্রেই তিনি গ্ল্যামারস নায়িকা, আবার কখনও তেমন গ্ল্যামারস না হলেও উত্তম-সৌমিত্র বা অনিল চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে সম্ভ্রম আদায়কারী নায়িকা তো বটেই। সতীর্থ সুচিত্রা সেনের কাছে সুললিত ও বাঙালিপনা সৌন্দর্যের কারণে একটু পিছিয়ে থাকলেও অভিনয়ে এবং নাচে তিনিই ছিলেন এগিয়ে। ‘আম্রপালী’ (১৯৫৯) তার বড় উদাহরণ। সংখ্যাগুরু দর্শকের জনপ্রিয়তার নিরিখে সুচিত্রা সেন নিশ্চয়ই তালিকার শীর্ষে। কিন্তু সুপ্রিয়া দেবী তাঁর প্রায় সারাটা অভিনয় জীবনে নিজের ক্ষমতা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন। অসিত সেনের ‘স্বরলিপি’, অজয় করের ‘শুন বরনারী’, মঙ্গল চক্রবর্তীর ‘তিন অধ্যায়’, উত্তমকুমারের পরিচালনায় ‘বনপলাশীর পদাবলী’, কিংবা হেমচন্দ্র চন্দ্রর ‘নতুন ফসল’ (১৯৬০), এমনকী ১৮৭৯-তে ‘দেবদাস’ ছবিতে পারোর পরিবর্তে চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিনয় করেও সুপ্রিয়া প্রমাণ করেছিলেন তাঁর অভিনয়ের ভার্সাটিলিটি। হ্যাঁ, তিনি সহশিল্পী সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মতো কমেডি করতে পারতেন না ঠিকই, কিন্তু অভিজাত সোসাইটির মহিলা চরিত্রে ছিলেন অনবদ্য। উদাহরণ, ‘শুধু একটি বছর’, ‘উত্তরায়ন’, ‘কাল তুমি আলেয়া’ বা ‘চিরদিনের’। পোশাক এবং হেয়ার স্টাইলেও নতুনত্বের চমক সুপ্রিয়া এনেছেন বারবার। তবে নিশ্চিতভাবেই তাঁকে সবথেকে ভাল লাগে ঘরোয়া মধ্যবিত্ত বাঙালি চেহারায়। যেমন, ‘সুরের পিয়াসী’, ‘অয়নান্ত’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘দুই পৃথিবী’ বা ‘বিষকন্যা’ ছবিগুলোতে।

[ উত্তম অধ্যায়ের অবসান, সুপ্রিয়া দেবীর প্রয়াণে শোকাহত মুখ্যমন্ত্রী ]

একান্তে বহুবার শুনেছি সত্যজিৎ রায় বা মৃণাল সেন কাজ করতে ডাকেননি বলে আক্ষেপ করতে। মাসখানেক আগেও অল্প সময়ের জন্য দেখা হয়েছিল ওঁর সঙ্গে। মেয়ে সোমাকে ‘সঙ্গী’ করে এসেছিলেন। বলেছিলেন, ‘কী গো তোমরা সব ভুলেই গেছো আমায়! দেখো, আমি কিন্তু ভুলিনি।’ শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও বাংলা সিনেমাঅন্ত প্রাণ ছিল তাঁর। অভিনয় ছিল ডিএনএ-তে, রক্তকণিকায়। নইলে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে অভিনয়ের প্রাথমিক স্কুলে থাকার সময়েই নীতা আর অনুসূয়ার মতো জীবনবোধে উত্তীর্ণ অমন কালাতিক্রম্য চরিত্রে প্রাণ সঞ্চার করতে পারেন! এমন অভিনয় ছিনিয়ে নেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই পরিচালক ঋত্বিক ঘটকেরও কম নয়। কিন্তু সুপ্রিয়া দেবীকে প্রণাম জানাতেই হয়। তাঁকে শেষ প্রণাম।

The post সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের ডাক না পেয়ে আক্ষেপও ছিল সুপ্রিয়া দেবীর appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement