সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্যপ্রকাশে স্টেট ব্যাঙ্কের অতিরিক্ত সময় চাওয়ার আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। সোমবার আদালতের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও টালবাহানা নয়, আগামিকাল অর্থাৎ ১২ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ড(Electoral Bond) সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনকে (Election Commission) দিতে হবে স্টেট ব্যাঙ্ককে (SBI)। একইসঙ্গে জানানো হয়েছে, ১৫ মার্চ বিকেল ৫ টার মধ্যে নিজেদের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত নথি প্রকাশ্যে আনবে নির্বাচন কমিশন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দেয় সুপ্রিমকোর্ট। নির্দেশ দেওয়া হয়, ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) ৬ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে যাবতীয় তথ্য দেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। এরপর সেই তথ্য জনসমক্ষে আনবে কমিশন। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মাত্র ২ দিন আগে ৪ মার্চ শীর্ষ আদালতে এসবিআই জানায়, ওই সময়সীমার মধ্যে বন্ডের তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। ওই তথ্য জমা দিতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। সোমবার সেই মামলায় এসবিআই-এর আর্জি শোনে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ। শীর্ষ ব্যাঙ্ক আদালতকে জানায়, সমস্ত নথি একত্রিত করে কমিশনকে জমা দিতে কিছুটা সময় লাগবে তাদের। পালটা এসবিআইকে শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে, ‘২৬ দিন ধরে কী করছিলেন? কেন বন্ধ নথি খোলা হয়নি?’ আদালত জানায়, ‘শুধুমাত্র একটি সিলড কভার খুলতে হত এসবিআইকে। তা সংগ্রহ করতে হত এবং তা নির্বাচন কমিশনকে জমা দিতে হত।’ সেটা না করে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চাওয়ার জন্য এদিন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ককে ভর্ৎসনা করে আদালত এবং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয় আগামিকাল অর্থাৎ ১২ মার্চের মধ্যে কমিশনকে সমস্ত নথি তুলে দেওয়ার জন্য। এবং ১৫ মার্চ বিকেল ৫ টার মধ্যে এই নথি কমিশনকে প্রকাশ করতে হবে সেটাও জানিয়ে দেয় আদালত। সব মিলিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বেশ চাপে স্টেট ব্যাঙ্ক।
[আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা কংগ্রেসের]
দেশের রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে নির্বাচনী বন্ড পদ্ধতি চালু করেছিল মোদি সরকার। যেখানে, কোনও রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে হলে কিনতে হত নির্বাচনী বন্ড। সেই বন্ড নিজেদের সময়মতো ব্যাঙ্ক থেকে ভাঙিয়ে নিত দলগুলি। এর মাধ্যমে গোপন থাকত দাতার নাম ও পরিচয়। কেন্দ্রের দাবি ছিল কালো টাকার লেনদেন রুখতেই এই পদক্ষেপ। ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩-এর মধ্যে ছ’বছরে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। এর মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৬৫৬৪ কোটি টাকা। কংগ্রেস পেয়েছিল ১১৩৫ কোটি টাকা। তৃণমূল কংগ্রেস ১০৯৬ কোটি টাকা পেয়েছিল। তবে নির্বাচনী বন্ডকে আদালত ‘অবৈধ’ ঘোষণা ও সমস্ত তথ্য প্রকাশ করার নির্দেশের ফলে এবার প্রকাশ্যে চলে আসবে কারা কাকে কত টাকা চাঁদা দিয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর পৌরহিত্যে বৈঠক! শূন্যপদে নিয়োগ দুই নির্বাচন কমিশনারকে]
কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি সরকারের চাপের মুখে পড়ে এই তথ্য প্রকাশে দেরি করতে চাইছে স্টেট ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কের তরফে আদালতের কাছে সময় চাওয়ার আবেদনের পর কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, “এসবিআই শুধু ভারতের বৃহত্তম ঋণদাতা নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড ব্যাঙ্ক। এদের ৪৮ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ৬৬,০০০ এটিএম পরিচালনা করে। দেশে এবং দেশের বাইরে প্রায় ২৩,০০০ শাখা রয়েছে। এহেন SBI-এর মাত্র ২২,২১৭টি ইলেক্টোরাল বন্ডের ডেটা দিতে পাঁচ মাস সময় লাগে? এক ক্লিকেই এই তথ্য পাওয়া সম্ভব। নামগুলি বেরিয়ে আসবে বলেই বিজেপি এত ভয় পাচ্ছে?” সোমবার এই মামলার শুনানিতে বিরোধীদের স্বস্তি দিয়ে আদালতের তরফে ‘এসবিআই’কে জানিয়ে দেওয়া হল, আগামিকালের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে ইলেক্টরাল বন্ড সংক্রান্ত তথ্য।