বাবুল হক, মালদহ: পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ কেনার নামে কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ। তুমুল শোরগোল মালদহের (Malda) ইংরেজবাজার পুরসভায়। বিষয়টি নিয়ে তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে এই বিষয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন চেয়ারম্যান।
অভিযোগ উঠেছে, আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল প্রকল্পের পাইপ কেনার ক্ষেত্রে বড়সড় ‘দুর্নীতি’ হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী প্রকল্পের পাইপের হদিশ মিলছে না। এমন অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে পুরসভার প্রশাসনিক মহলে। কয়েক কোটি টাকার হিউম পাইপ গায়েব হয়ে গিয়েছে বলে কাউন্সিলরদের একাংশের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিছু কর্মীর পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে পুরসভা কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটির পাইপ কেনার জন্য কত কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছিল এবং কত টাকার কত পরিমাণ পাইপ কেনা হয়েছে, তা জানতেই ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ।
[আরও পড়ুন: সি সেকশনের সময় অঙ্গ বাদ! চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে তুমুল বিক্ষোভ]
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে মালদহ শহরে বাড়ি বাড়ি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহের জন্য ১০১ কোটি টাকার প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এজন্য শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে ইংরেজবাজার বাজার ব্লকের কোতোয়ালি এলাকার দৈবকিপুরে মহানন্দা নদীতে জল উত্তোলক প্ল্যান্ট বসানো হয়। তার পর শহরে জলাধার তৈরি করা হয়। কিন্তু মাটির তলায় পাইপ বসানো নিয়ে বড়সড় ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ ওঠে। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে থাকা তৎকালীন কাউন্সিলর আশিস কুণ্ডু বলেন, ‘‘প্রকল্পের তথ্যে ১২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইন ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা যায় ২২৪ কিলোমিটার পাইপ দরকার। সেই কারণেই পাইপের হিসেব নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পাইপের সঠিক হিসেব বা তথ্য বলতে পারবেন পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার অরিন্দম হালদার। তিনিই সবকিছু জানেন।’’ যদিও অরিন্দমবাবু এই বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন জেলার বাইরে রয়েছি।’’
মালদহ শহরে মোট ২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। বহু ওয়ার্ডে পাইপ বসানোর কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজিত সাহা বলেন, ‘‘আমাদের ওয়ার্ডের কয়েকটি পাড়ায় পাইপ বসানো হয়নি। এরকম একাধিক ওয়ার্ডে আংশিক পাইপ বসেছে। তাই নতুন প্রকল্পের পানীয় জল পাওয়া যায় না।’’ এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। বুধবার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘কিছু পাইপ মজুত রয়েছে। তবে কত পাইপ কেনা হয়েছে, কত বসানো হয়েছে, কত টাকার টেন্ডার হয়েছিল, সেই সব তথ্য জানতে আমি রিপোর্ট চেয়েছি। এই বিষয়ে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’