দীপঙ্কর মণ্ডল: দীর্ঘদিন বাড়িতে আটকে থাকার প্রভাব পড়ছে শিশুমনে। মানসিকভাবে পড়ুয়াদের চাঙ্গা রাখতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে স্কুলশিক্ষা দপ্তর। রবিবার থেকে এই বিষয়ে শুরু হচ্ছে ওয়েবিনার। পাশাপাশি সরস্বতী পুজোর আগে স্কুলে (School) আংশিক ক্লাস চালু নিয়েও হতে চলেছে আলোচনা।
শনিবার স্কুলশিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ থেকে দূরে থাকা ও সমবয়সিদের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের মনে প্রভাব পড়ছে। ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার অসুবিধা হওয়ায় মনস্তাত্ত্বিক আচরণও প্রভাবিত হচ্ছে। যার প্রতি যত্ন না নিলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলশিক্ষা বিভাগ বিশেষ ওয়েবিনার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা পড়ুয়াদের মানসিক সহায়তা প্রদান করার জন্য সহায়ক হবে।
রাজ্যে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হয়েছে। তা উল্লেখ করে স্কুল চালুর দাবিতে সরব নানা মহল। শ্রেণিকক্ষ ফের খুলতে চেয়ে শিক্ষা দপ্তরের চিঠি গিয়েছে নবান্নে। বিকাশ ভবনের শিক্ষা কর্তারা মনে করছেন সোমবার নাগাদ সবুজ সংকেত আসতে পারে। মাঝে অল্প কিছুদিন বাদ দিলে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। দ্বিতীয় দফায় স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস হয়েছে ১৬ নভেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি। গত দু’বছরে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একদিনও ক্লাস হয়নি।
[আরও পড়ুন: IPL 2022: বিদেশে নয়, চলতি বছর শর্তসাপেক্ষে আইপিএল হবে দেশের মাটিতেই!]
চিকিৎসকদের একটি অংশ বলছে, টানা বাড়িতে থাকার ফলে মানসিক অবসাদে ভুগছে ছাত্রছাত্রীরা। সেইমতো স্কুল শিক্ষা দপ্তর ২৩ জানুয়ারি থেকে ওয়েবিনার সিরিজ করবে। সিরিজের নাম ‘উজ্জীবন চর্চা।’ শিক্ষাবিদদের পাশাপাশি আলোচনা হবে মনোবিদদের সঙ্গেও। আলোচনা নির্যাস জমা পড়বে দপ্তরে। বিশেষজ্ঞদের নিদান কার্যকর করবে রাজ্য সরকার।
স্কুলে পঠন-পাঠন চালু না হওয়ার প্রতিবাদে এদিনও শিক্ষকদের বিক্ষোভ দেখা গিয়েছে বিভিন্ন জেলায়। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মহারাষ্ট্রে সংক্রমণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও সে রাজ্যে ২৪ জানুয়ারি প্রাথমিক স্তর থেকে পঠন-পাঠন পুনরায় চালু হচ্ছে। অথচ এ রাজ্যে এখনও বিষয়টি আলোচনার স্তরে। সমিতির শিক্ষকরা এদিন উত্তর ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া-সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভে শামিল হন।
হাওড়ার বাগনানে বক্তব্য রাখেন সমিতির সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা। তিনি বলেন, “শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাজ্যের শত শত শিক্ষক ‘চলো স্কুলে পড়াই’ কর্মসূচি পালন করছে। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মাঠে, ক্লাবঘরে বা বারান্দায় কোথাও পাড়ায় পাড়ায় পড়ানো শুরু করেছেন। যতদিন না সরকার প্রাথমিক স্তর থেকে স্কুল চালু করবে ততদিন পড়ানোর কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।”
স্কুল খোলা নিয়ে মাঠে নেমেছেন রাজনীতিকরাও। বিরোধীদের প্রশ্ন, বার, পার্লার, সেলুন-সহ বিনোদনের সব জায়গা খোলা। তবে স্কুল বন্ধ কেন? রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য, সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল কলেজ খোলার পক্ষে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়ার পথে রাজ্য সরকার যেতে চায় না। সেই কারণেই বাস্তব পরিস্থিতি দেখে নেওয়া হচ্ছে। অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান আর স্কুল-কলেজের তফাৎ আছে। এটা যাঁরা বোঝেন না, তাঁদের দায়িত্বজ্ঞানের অভাব আছে।