দীপঙ্কর মণ্ডল: প্রায় এক বছর পর কাল অর্থাৎ শুক্রবার রাজ্যের স্কুলগুলির ঝাঁপ খুলছে। কোভিড (COVID-19) স্বাস্থ্যবিধি মেনে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হবে। একই দিনে সকাল ছ’টা থেকে ১২ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বামেরা। এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকরা সংশয়ে। যদিও বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত দিনেই নবম-দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে। “আমরা সিদ্ধান্ত বদল করব না। আগামিকাল থেকেই রাজ্যের স্কুলগুলি খুলবে”, বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, অভিভাবকদের সম্মতি না নিয়ে কোনও পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে পারবে না। শিক্ষামন্ত্রীর আবেদন, “কেউ বাড়ির ছেলে বা মেয়ের অসুস্থতার কথা গোপন করবেন না। মাস্ক, স্যানিটাইজার, দূরত্ব বিধি-সহ কোভিড (Corona Virus) বিধি মেনে স্কুল হবে। প্রশাসনও নজর রাখছে। ঝুঁকি নিয়ে কিছু করা যাবে না। কোন অবস্থাতেই কোভিড বিধি ভঙ্গ করা যাবে না। সবাইকে সতর্ক থাকতে বলছি।” বেসরকারি স্কুলগুলি জানিয়েছে, কোনও ছাত্র বা ছাত্রী গত ১৪ দিনের মধ্যে বিদেশে গেলে তাদের কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি এমনকী ঠান্ডা লাগার কথাও গোপন করা যাবে না।
[আরও পড়ুন: বাম ছাত্র-যুবদের আন্দোলনে পুলিশের ‘অত্যাচার’, প্রতিবাদে বাংলা বন্ধের ডাক বামফ্রন্টের]
স্কুল খোলার প্রথম দিন সবাই আসছে না। কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে শুরুর দিনে শুধুমাত্র দ্বাদশ এবং মাধ্যমিকের ছাত্রীদের ক্লাস হবে। সরস্বতী পুজোর পর নবম থেকে দ্বাদশের সবাইকে স্কুলে আনার কথা ভাবা হবে বলে জানিয়েছেন বেথুনের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী। অন্যদিকে, বেসরকারি স্কুলগুলিতে নবম এবং একাদশে অভিভাবকদের একটি অংশ সম্মতি দেননি। আইসিএসই স্কুলগুলির সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি সুজয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা স্কুল চালু করছি। সম্মতি দেননি এমন অভিভাবকের সংখ্যা কম। কয়েকদিনের মধ্যে নিশ্চয়ই তাঁরা সম্মতি দেবেন।” সংগঠনের পাশাপাশি তিনি রামমোহন মিশন স্কুলের প্রিন্সিপালের দায়িত্বেও আছেন। রামমোহন মিশন স্কুলে ‘টিফিন ব্রেক’ থাকবে না। সবমিলিয়ে তিনঘণ্টা ক্লাস হবে। অভিভাবকদের একটি সুরক্ষা বিধির ভিডিও পাঠানো হয়েছে। মহানগরের বেসরকারি স্কুলগুলিতে স্যানিটাইজার টানেল-থার্মাল গান আছে। পড়ুয়াদের মাস্ক, স্যানিটাইজার, নিজস্ব জলের বোতল ও গ্লাভস পরে আসতে বলা হয়েছে।
কোভিডের কারণে এবার সরকার নির্ধারিত ফি-ও নিচ্ছে না মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন মেন ফর গার্লস। টানা বন্ধ থাকার পর স্কুল ফের খোলা প্রসঙ্গে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিপাশা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “অভিভাবকদের নিয়ে ইতিমধ্যে ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। সবাইকে সুরক্ষা বিধি মেনে স্কুলে পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে। আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে কিছু মাস্ক এবং ফেস শিল্ড কিনেছি। পড়ুয়াদের এগুলি বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।”
বেসরকারি স্কুলগুলিতে ২০ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক পরীক্ষা থাকার কারণে একাদশের পড়ুয়াদের স্কুলে আসার আগ্রহ কম। কোভিড সতর্কতায় অনেক বেসরকারি স্কুলে, নবম থেকে দ্বাদশের ব্যাচগুলিকে সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লাস করানো হবে। ভিন দেশ বা ভিন রাজ্য ফেরত কারও সঙ্গে যোগাযোগ না হলে ভয়ের কিছু নেই বলে মনে করেন পূর্ব মেদিনীপুর আটাত্তর হাই স্কুলের শিক্ষক তরুনাভ দাস। তাঁর মতে, “গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলিতে যারা পড়ে তাদের সঙ্গে বাইরের লোকজনের সংস্পর্শ প্রায় নেই বললেই চলে। এই কারণে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকরা কলকাতার তুলনায় অনেকটা নিশ্চিন্তে আছেন।” শহুরে পড়ুয়াদের একটি অংশ অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছে।