সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তখন সবে পৃথিবী শাসন করতে শুরু করেছিল আমাদের পূর্বপুরুষরা। সে কবেকার কথা। আদিম জনজাতি পুরোপুরি জঙ্গলবাসী। বিবর্তনের ইতিহাস বলছে, হোমো সাপিয়েন্স অর্থাৎ আজকের মানুষ তখনও বহু দূর। আমাদের শত শত পূর্বতন প্রজন্ম নিয়ান্ডারথালদের দখলে পৃথিবী বাসযোগ্য সব এলাকা। এবার অবশ্য সেই মানবজগতের বিবর্তনের ইতিহাসে যোগ হল নয়া তথ্য। জানা গেল, একা নিয়ান্ডারথালরাই নয়, একই সময় পৃথিবীর অপর প্রান্ত কিছুকাল শাসন করে গিয়েছে এক স্বল্প বিকশিত গোষ্ঠী - হোমিনিড। প্রায় ৬৫ বছর আগে উত্তর গ্রিসের গুহা থেকে উদ্ধার খুলি আধুনিক প্রযুক্তি দ্বারা পরীক্ষানিরীক্ষা করে হোমিনিডদের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। যুগান্তকারী ব্যাপারই বটে!
১৯৬০ সালে উত্তর গ্রিসের পেত্রালোনার গুহায় একটি খুলি পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, তা খুব বেশি হলে ১ লক্ষ ৭০ হাজার বছরের পুরনো হবে। অর্থাৎ নিয়ান্ডারথালদের সমসাময়িক। অথচ খুলির ধরন বেশ খানিকটা পৃথক। ফলে সংশয় একটা তৈরি হয়েইছিল, এরা ঠিক কারা। সম্প্রতি মানবজাতির বিবর্তন নিয়ে কাজ করা একদল বিজ্ঞানী সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুলির আসল পরিচয় উদ্ধার করেছেন। সাধারণত ঐতিহাসিক কোনও সামগ্রীর বিশদ পরিচয়ের জন্য 'কার্বন ডেটিং' করা হয়। কিন্তু সাড়ে ছ দশক আগে উদ্ধার হওয়া খুলি সম্পর্কে জানতে তাঁরা ইউরেনিয়াম-থোরিয়াম অর্থাৎ উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয় পদার্থ দিয়ে ডেটিং করেন। তাতেই অবাক করা ফলাফল!
জানা যায়, ওই খুলি অন্তত ২ লক্ষ ৮৬ হাজার বছর আগেকার। তিন থেকে ছ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকায় গড়ে উঠেছিল হোমো হাইডেলবারজেনেসিস গোষ্ঠী। তার অনেকটা পরে ইউরোপে উত্থান ঘটেছিল নিয়ান্ডারথালদের। ইউরেনিয়াম-থোরিয়াম ডেটিং থেকে আরও জানা যাচ্ছে, আফ্রিকায় প্রথম বসতি গড়লেও পরবর্তী সময় হাইডেলবারজেনেসিস গোষ্ঠীর কিছুটা অংশ ইউরোপে চলে যায়, নিয়ান্ডারথালদের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে শুরু করে। তবে বিশেষ বংশবিস্তার করতে পারেনি। তাই স্বল্প সংখ্যক হোমিনিড বেশ কিছু কাল ছিল। পরে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়। এদিকে, নিয়ান্ডারথালরা বিবর্তিত হয়ে হোমো সাপিয়েন্স এসেছে। প্রায় ৩ লক্ষ বছর আগের খুলির এমন সত্য উদঘাটন নিঃসন্দেহে বিবর্তনের ইতিহাসে চমকপ্রদ অধ্যায়।
