shono
Advertisement
wild fire

মারমুখী বুনো হাতি, তেড়ে আসছে বাঁদরের দল! উত্তরের লোকালয়ে বন্যদের তাণ্ডব, দাবানলের ফল?

চিন্তায় বনদপ্তর।
Published By: Paramita PaulPosted: 09:27 PM Apr 07, 2025Updated: 10:44 PM Apr 07, 2025

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: পাহাড়-সমতলের জঙ্গলে একের পর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের জের! অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে বন্যপ্রাণ। প্রাণ বাঁচাতে লোকালয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বাঁদর, চিতাবাঘ। মানুষ দেখামাত্র দাঁত খিচিয়ে তেড়ে আসছে বাদরের দল। খেপে মারমুখী বুনো হাতির দল সোমবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে চারজনকে পিষে মেরেছে। চা বলয়ে বাড়ছে চিতাবাঘের আতঙ্ক। পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় বনদপ্তর।

Advertisement

গত রবিবার ক্রান্তি ব্লকের রাজাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের ষোলোঘড়িয়া এবং উত্তর বারঘরিয়া আপালচান্দ চেল টু-এর এলাকার এক মহিলা সহ দু'জনকে পায়ে পিষে ও পেটে দাঁত ঢুকিয়ে মারে বুনো হাতি। এর আগে বৃহস্পতিবার চাপড়ামারি ও বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল এলাকা বুনো হাতির কবলে পড়ে দু'জনের মৃত্যু হয়। শুধু হাতির হামলা নয়। নিজেদের বসত এলাকা আগুনে পুড়ে ছাই হতে বাঁদরেরাও মারমুখী হয়েছে। মানুষ দেখামাত্র দাঁত খিচিয়ে তেড়ে আসছে। পাহাড়ি ভাল্লুকের দল সমতলমুখী হতে শুরু করেছে। দলে দলে চিতাবাঘ আশ্রয় নিয়েছে জঙ্গল সংলগ্ন চা বাগানে।

ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির পরিবেশপ্রেমী সংস্থা গ্রিন লেবেল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কর্ণধার অনির্বাণ মজুমদার বলেন, "এর আগে হাতি, বাঁদরের মতো বন্যপ্রাণীদের এতটা হিংস্র হতে দেখিনি। কয়েকদিন ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের জেরে ওদের আচরণ অদ্ভুতভাবে পালটেছে। সামনে মানুষ, গবাদিপশু-সহ যা পাচ্ছে আক্রমণ করতে তেড়ে আসছে। এই মুহূর্তে বনকর্মীদের জঙ্গলে যাওয়া রীতিমতো বিপজ্জনক হয়েছে।" বনদপ্তরের কর্মীরাও পরিস্থিতির কথা অস্বীকার করছেন না। তাঁদের মতে, জঙ্গলের পশুপাখি এখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে। নিজেদের বসতি এলাকা হারিয়ে মারমুখী হয়েছে। লোকালয়ের যে এলাকাগুলোতে এতদিন ময়ূরের দেখা মেলেনি এখন সেখানেও ময়ূর চড়ে বেড়াচ্ছে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি শহর এলাকায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বাদরের দল। চিতাবাঘ যে কোথায় ঘাপটি মেরেছে তার ঠিকঠিকানা নেই। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল এস কে মোলে বলেন, "সীমিত ক্ষমতা নিয়ে আমরা পরিস্থিতির মোকাবিলা করছি। কিন্তু সাধারণ মানুষ সহযোগিতার হাত না-বাড়ালে সব শেষ হয়ে যাবে। জঙ্গল রক্ষা পাবে না। বিপদ বাড়বে।"

কেন এমনটা বলবেন না?
কয়েক সপ্তাহে পাহাড়-সমতলে হেক্টরের পর হেক্টর সবুজ জঙ্গল এলাকা পুড়ে খাক হয়েছে। আগুনের তাপে ঝলসে মরেছে সাপ, তক্ষকের মতো হাজারো সরীসৃপ। পুড়ছে ঘাস জঙ্গলে ময়ূরের বাসা, ডিম আরও অনেক পাখিদের ঘরসংসার। ওই পরিস্থিতিতে দিশাহারা হাতি, গন্ডার, বাইসন, হরিণের দল পালাতে শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে কখনও জঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে আসছে শাবক-সহ হাতির দল। চিতাবাঘের দল নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে চা বাগানে। সেখানেই বাড়ছে মানুষের সঙ্গে সংঘাত।

বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দার্জিলিং পাহাড়ের পুলবাজার বিজনবাড়ি ব্লকের মেগিটার জঙ্গলে আগুন লাগে। সেই রেশ না কাটতে কার্শিয়াং বন বিভাগের জঙ্গলে আগুন লাগে। কার্শিয়াং বন বিভাগের অধীন মহানদী ও লংভিউ চা বাগান এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় লংভিউ চা বাগান। এরপর দাউদাউ করে জ্বলেছে বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগের তারঘেরা, আপালচাঁদ, আমবাড়ি, বেলাকোবা রেঞ্জের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি বনবিভাগের রামসাই, লাটাগুড়ি, চালসা, ডায়ানা জঙ্গল। চাপড়ামাড়ি জঙ্গল এলাকাতেও আগুন লেগেছে। পুড়ে ছাই হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। চালসা রেঞ্জের পানঝোড়ার বড় এলাকা পুড়েছে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে লাটাগুড়ির জঙ্গলে। গরুমারা জঙ্গলের রামশাই এলাকায় গন্ডারের বিচরণ এলাকা পুড়ে ছাই হয়েছে। বিধ্বংসী আগুনে পুড়েছে দার্জিলিং পাহাড়ের সুকিয়া পোখারি বন বিভাগের রংভং-২ এলাকার দু'হেক্টর পাইনের জঙ্গল। সেখানেই ছিল ভাল্লুকের আস্তানা। প্রশ্ন উঠেছে ওই পরিস্থিতিতে বন্যপ্রাণেরা রীতিমতো উদ্বাস্তু। ওরা থাকবে কোথায়!

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পাহাড়-সমতলের জঙ্গলে একের পর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের জের!
  • অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে বন্যপ্রাণ।
  • প্রাণ বাঁচাতে লোকালয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে বাঁদর, চিতাবাঘ।
Advertisement