সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আবার সে এসেছে ফিরিয়া...যেন গল্পের বই থেকে বাস্তবে প্রতিফলন। ১০ হাজার বছর আগে থেকে আজকের জেটযুগে এসে পড়েছে হারিয়ে যাওয়া প্রাণীরা! তুষারযুগের সেই ভয়ংকর নেকড়েরা ফের দাপিয়ে বেড়াবে আজকের পৃথিবীতে। এও কি সম্ভব? যদি অবিশ্বাস হয়, তাহলে জেনে রাখুন, প্রযুক্তির জাদুতে সব হয়। সত্যিই তারা ফিরতে পারে। হলও তাই। তুষারযুগে বিলুপ্তপ্রায় ডায়ার উলফের সমতুল্য এক চারপেয়ে লোমশ প্রাণীকে ফিরিয়ে আনছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। দুই ছানার জন্ম হয়েছে সবে। তাদের রাখা হয়েছে আমেরিকার গোপন জায়গায়। চেহারায় তো বটেই, বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, এই বয়সেই তাদের আচার-আচরণ অবিকল ডায়ার উলফ বা ভয়ংকর নেকড়েদের মতোই। বলা হচ্ছে, নতুন করে লিখতে জীববিজ্ঞানের ইতিহাস। বাকিটা...ক্রমশ প্রকাশ্য!

আসুন, একটু ঘুরে আসা যাক তুষারযুগে। পৃথিবী তখন বরফে ঢাকা। উষ্ণতা বলতে কিছু নেই। জনমানসহীন বিশ্ব শাসন করছে রাক্ষুসে সব প্রাণী। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে লড়াই করে শক্তিপ্রদর্শনে মত্ত! কোনও কিছুরই যেমন স্থায়িত্ব নেই, তেমনই কালের গতিতে স্থায়ী হয়নি তুষারযুগ। ১০-১১ হাজার বছর পর তার অবলুপ্তি ঘটে। যোগ্যতমের উদ্বর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে গিয়েছে এ যুগের প্রাণীরাও। কিন্তু না, এখনও হারায়নি। কেউ কেউ রয়ে গিয়েছে তারই মধ্যে, নিজেদের সামান্য চরিত্র, চেহারা নিয়ে!
প্রাচীন যুগের ডায়ার উলফ। ছবি: সংগৃহীত।
শুনে অবাক হচ্ছেন? তাহলে তুষারযুগের ডায়ার উলফ বা ভয়ংকর নেকড়েদের প্রত্যাবর্তন ঠিক কীভাবে ঘটল, খুলেই বলা যাক। এর নেপথ্যে রয়েছে খাঁটি প্রযুক্তি। CRISPR প্রযুক্তি বা জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনাটি ঘটিয়েছে মার্কিন বিজ্ঞানীরা। জানা যাচ্ছে, আমেরিকার ওয়াইহো, ইদাহো থেকে খননকাজে উঠে এসেছিল তুষারযুগের প্রাণীর কঙ্কাল, দাঁতের অংশ। পরীক্ষা করে জানা যায়, তা ডায়ার উলফের। এরপরই জিন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে হারিয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফেরানোর চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমে এসব দেহাংশ ব্যবহার করে কোষ তৈরি করা হয়। তারপর সেসব কুকুরের ডিম্বাণুর কোষের সঙ্গে মিশিয়ে সারোগেট পদ্ধতি ব্যবহার করেন গবেষকরা। কুকুরেরই গর্ভে ৬২ দিন ধরে নিষেকের পর জন্ম নেয় সাদা ধবধবে দুই ছানা। এখন তাদের বয়স তিনমাস আর ছ'মাস।
প্রাণী বিশেষজ্ঞ ম্যাট জেমস জানিয়েছেন, এই বয়সেই তাদের আচার-আচরণ প্রায় তুষারযুগের সেসব নেকড়েদের মতো। তাঁর কথায়, "পূর্বপুরুষের জিনের প্রকৃতি অনুযায়ী, বন্য, হিংস্র আচরণ তাদের থাকবে। তবে আমার ধারণা, বড় পশু শিকারের মতো শক্তি বা সক্ষমতা তাদের হবে না। এটা তো সেই সময়কার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ছিল। এখন এর প্রয়োজন হবে না।'' তবে প্রাণীবিজ্ঞানী ভিনসেন্ট লিঞ্চ মেনে নিয়েছেন যে হুবহু হারিয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফেরানো সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, কোনও কোনও বৈশিষ্ট্য থাকবে। এই প্রকল্প সফল হলে বিজ্ঞানীদের ভাবনা, তুষারযুগে এমন আরও কিছু লোমশ প্রাণীকে এভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হবে। তবে কি একদিন ডাইনোসরও ফিরে আসবে? প্রশ্ন কৌতূহলী মহলের।