সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ২০২৩ সালের শেষে এসে তা আর কোনও কল্পবিজ্ঞানের বিষয় নয়। বরং চ্যাটজিপিটি থেকে ডিপফেক এখন দৈনন্দিন চর্চায় জড়িয়ে গিয়েছে। আর ততই জাগ্রত হচ্ছে প্রশ্নটা। শেষের সেদিন কি সত্যিই ভয়ংকর? এআই কি মানব সভ্যতার ‘ফুলস্টপ’ হয়ে দাঁড়াবে?
প্রশ্নটা মোটেই সহজ নয়। আর উত্তরও এখনই জানা সম্ভব নয়। তবু এই বছরের শেষে এসে প্রশ্নটাকে আর অবহেলা করা যাবে না। অথচ সেই কবে বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং (Stephen Hawking) এই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সেটা ২০১৪ সালের ঘটনা। ‘লাস্ট উইক টুনাইট’ নামের এক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন তিনি। আর সেখানে সটান জানিয়ে দিয়েছিলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (Artificial Intelligence) কারণেই নাকি বিলুপ্তি ঘটতে পারে মানব সভ্যতার! পরে বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিশদে নিজের বক্তব্য গুছিয়ে বলেছিলেন তিনি। জানান, ”আপনারা যদি বুদ্ধিমান যন্ত্র তৈরি করতে থাকেন, একদিন তা আমাদের অস্তিত্বের জন্য়ই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।” হকিংয়ের সাফ কথা ছিল, কোনওদিন এমন এআই প্রোগ্রাম যদি বানিয়ে ফেলা যায়, যার চৈতন্য মানুষের চৈতন্যের সমকক্ষ, তাহলে অচিরেই তা মানুষকেও ছাপিয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। কেননা যন্ত্রেরা যদি বুদ্ধিমান হয়, তবে তারা সহজেই অনেক কিছু শিখে যেতে থাকবে, এবং তা কাজে লাগিয়ে নিজেদের আরও উন্নত করে ফেলবে। তাদের বিবর্তন হবে খুব দ্রুত। তুলনায় মানুষের বিবর্তন যেহেতু অনেক ধীরগতিতে হয়, তাই তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে খারিজ দ্রুত শুনানির আর্জি, প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ মহুয়া]
সেদিন তাঁর কথায় আশঙ্কা ছড়ালেও ততদিন পর্যন্ত এআই ছিল বহু দূরবর্তী বিষয়। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরে সভ্যতার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে এআই। গত বছরের নভেম্বরে আত্মপ্রকাশ করেছিল চ্যাটজিপিটি। ওপেনএআই সংস্থার এই চ্যাটবট অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে এসে দেখা যায় সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা কনজিউমার সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন হয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলেছে। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আশঙ্কা। সকলের কাজ কেড়ে নিতে এসে গিয়েছে চ্যাটজিপিটি। সে কপিরাইটার হোক কিংবা প্রোগ্রামার, সবার কাজেই ভাগ বসাতে পারে সে। আপাতত সব কাজে সে সমান পটু না হলেও, শিগগিরি আপডেট হতে হতে সে আরও নিখুঁত হয়ে উঠবে। এমনকী, গোটা দশেক বা তারও বেশি লোকের কাজ সে একাই হয়তো করে দেবে! ফলে নানা ক্ষেত্রেই চাকরি হারানো মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
এ তো গেল চ্যাটজিপিটির (ChatGPT) বিপদ। এর পর ভয় দেখাতে শুরু করল ডিপফেক (Deepfake)। দেখা গেল স্রেফ মানুষের কাজ কেড়ে নেওয়াই নয়, অন্য বিপদও ডেকে আনতে পারে এআই। কী এই ডিপফেক? এ এমন এক প্রযুক্তি যা আপনার ভিডিও বানিয়ে দেবে। অথচ আদপে ভিডিওতে আপনি ছিলেনই না! অর্থাৎ যে কাউকে বিপদে ফেলার এক অনায়াস কৌশল। অভিনেত্রী রশ্মিকা মন্দানার ডিপফেক ভিডিও নিয়ে তুমুল বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। পরে একে একে আরও নাম উঠে আসতে থাকে। এমনকী প্রধানমন্ত্রীকেও দেখা যায় মহিলাদের সঙ্গে গরবা নাচতে! স্বাভাবিক ভাবেই মোদি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই এই এআই প্রযুক্তিকে উন্নত করা উচিত। এই প্রযুক্তি সকলের কাছে পৌঁছানো উচিত। কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই প্রযুক্তি যেন সমাজের জন্য নিরাপদ হয়। বর্তমান দিনে ডিপফেক একটা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।” এদিকে গাজার সঙ্গে যুদ্ধেও ইজরায়েল ব্যবহার করেছে এআই। অর্থাৎ যুদ্ধের হালহকিকতও সে বদলে দিতে পারে।
[আরও পড়ুন: সংসদে হামলাকারীরা বিজেপি সাংসদের অতিথি! মুখে ‘জয় ভীম’ স্লোগান]
প্রসঙ্গত, ভারত-সহ ২৭টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্বাক্ষর করেছে এআই সংক্রান্ত এক ঘোষণায়। ব্রিটেনে হওয়া সেই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে এআইয়ের ঝুঁকির দিকটি খতিয়ে দেখতে একসঙ্গে কাজ করার। ভারত ছাড়াও যে দেশগুলি স্বাক্ষর করেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চিন, ফ্রান্স, জার্মানি প্রভৃতি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এত সাবধানতাতেও কি লাভ হবে? এআই তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পাশাপাশি কাজ চলছে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স নিয়েও। এই এজিআই কিন্তু একসঙ্গে অনেক কাজ করতে সক্ষম। যা অচিরেই আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে সভ্যতার জন্য। শেষপর্যন্ত কী হবে তা সময় বলবে। ২০২৩ কিন্তু ‘সিঁদুরে মেঘে’র সন্ধান দিয়ে গেল।