সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘অন্ধজনে দেহ আলো’! বিজ্ঞানের উন্নতিতে এখন এটাও বাস্তব। বলা ভালো, সম্ভব। এমনই যুগান্তকারী ‘চক্ষু প্রতিস্থাপন’ প্রক্রিয়ার উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর প্রয়োগও হয়েছে সম্প্রতি। এবং ফলাফল, অত্যন্ত সন্তোষজনক। দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন এমন রোগীদের পুনরায় ‘দৃষ্টিদান’ করেছে একটি মাইক্রোচিপ, যার পোশাকি নাম প্রাইমা সিস্টেম।
একটি আন্তর্জাতিক ট্রায়ালের অংশ হিসাবে উদে্যাগটি নেওয়া হয়েছিল। ইউরোপের পঁাচটি দেশের ১৭টি হাসপাতালের ৩৮ জন রোগী ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। দেখা গিয়েছে, এর মধে্য লন্ডনের একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘প্রাইমা সিস্টেম’-এর ‘ইমপ্ল্যান্ট’ বা প্রতিস্থাপন হয়েছে অত্যন্ত সফলভাবে। সাফলে্যর হার শতকরা ৮৫ শতাংশ। রোগীরা এই ‘আই ইমপ্ল্যান্ট’-এর পর সংখ্যা, বর্ণমালা ইত্যাদি ভালোভাবে পড়তে পেরেছেন, এমনকী পরিচিতদের মুখও চিনতে সক্ষম হয়েছেন। উল্লেখ্য, গবেষণার নেপথে্য ছিলেন ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডন এবং মুরফিল্ডস আই হসপিটালের ক্লিনিক্যাল রিসার্চাররা। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, যে সমস্ত রোগীরা নির্দিষ্ট কিছু কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, তঁাদের ক্ষেত্রেই ‘প্রাইমা সিস্টেম’ নামের ইলেক্ট্রনিক আই ইমপ্ল্যান্টটি কাজ করবে। এই তালিকায় রয়েছেন ‘জিওগ্রাফিক অ্যাট্রপি’ (জিএ)-উইথ ড্রাই এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডি-জেনারেশন (এএমডি)-এর রোগীরা। বিশেষ করে জিএ-র ক্ষেত্রে এখনও সে অর্থে কোনও চিকিৎসা নেই। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ এর শিকার। এই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে নতুন এই ‘ইমপ্ল্যান্ট’ অত্যন্ত উপযোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ইউসিএল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মাহি মুকিত। তঁার কথায়, ‘‘কৃত্রিমভাবে দৃষ্টিশক্তি পাওয়ার ইতিহাসে এই প্রক্রিয়া একটি নয়া যুগের সূচনা করল। চোখের আলো হারিয়েছেন যঁারা, তঁারা এর মাধ্যমে অর্থবহভাবে দৃষ্টি ফিরে পাবেন। এ রকম আগে কখনও হয়নি।’’
তা কীভাবে এগোয় গোটা ‘ইমপ্ল্যান্ট’ প্রক্রিয়া? বিজ্ঞানীদের মতে, এর জন্য করা হয় ভিটরেক্টোমি, যেখানে চোখের ভিতরে লেন্স এবং রেটিনার মধ্যস্থলে উপস্থিত ভিট্রিয়স জেলি সরিয়ে ফেলা হয়। এবং সেখানে অত্যন্ত পাতলা (আল্ট্রা থিন) একটি মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপন করা হয়। চিপটি দেখতে অনেকটা মোবাইল ফোনের সিমকার্ডের মতো, আকৃতিতে ২ মিলিমিটার x ২ মিলিমিটার। অস্ত্রোপচারের এক মাস পর নতুন চিপটি অ্যাক্টিভেট করা হয়। তখন থেকে সেটি কাজ শুরু করে। অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে যে চশমা-জাতীয় যন্ত্রটি পরানো হয়, সেটিতে থাকে একটি ভিডিও ক্যামেরা, যা কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। রোগীর পরনে থাকা ওয়েস্টব্যান্ডের সঙ্গে গোটাটা সংযুক্ত থাকে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে তথ্য পরিচালিত হয়, যা পরে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালে রূপান্তরিত হয়ে রেটিনা, অপটিক্যাল নার্ভ সেলের মধ্য দিয়ে গিয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছয়। মস্তিষ্ক সেই তথ্যকেই বিশ্লেষণ করে ‘ভিশন’ হিসাবে দেখে।
