সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এখনও দৈর্ঘ্যে বাড়ছে। বছরভর একটু একটু করে ‘লম্বা’ হয়েই চলেছে মাউন্ট এভারেস্ট। আনুমানিক বিচারে সেই মাত্রা বছরপ্রতি প্রায় ০.০১ থেকে ০.০২ ইঞ্চি (০.২-০.৫ মিলিমিটার)। ফলত, যে এভারেস্টের উচ্চতা বর্তমানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৮৪৮ মিটার (মতান্তরে ৮.৮৫ কিলোমিটার) বলে সর্বজনবিদিত, তা সর্বদা পরিবর্তনশীল বলে জানাচ্ছেন বেজিংয়ের চায়না ইউনিভার্সিটি অফ জিও সায়েন্সেস-এর ভূবিজ্ঞানী জিন-জেন দাইয়ের নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানীদের দলটি।
বরং তাঁদের আরও দাবি, আগের তুলনায় এখন এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির হার বেশি। তবে শুধু একা এভারেস্টই নয়, বিগত প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর ধরে ক্রমশ ‘উচ্চতর’ হতে থাকা হিমালয় পর্বতের ধারা মেনে দৈর্ঘ্যে একটু একটু করে বেড়েই চলেছে হিমালয়ের অন্যান্য উচ্চ শৃঙ্গগুলিও। যেমন লোৎসে, মাকালু। এই বিষয়ে বিস্তারিত লেখা রয়েছে জার্নাল নেচার জিও সায়েন্সে।
কিন্তু এর নেপথ্য কারণ কী?
বিজ্ঞানীদের মতে, এমনিতে ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষর জেরেই যে হিমালয়ের এই ক্রম ‘উত্থান’–তা আগেই জানা গিয়েছিল। তবে বিশেষ করে এভারেস্টের উচ্চতা এত দ্রুত প্রতি বছর কেন বাড়ছে, তার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু আন্তঃসংযুক্ত কারণ। প্রথমত, আঞ্চলিক নদীপ্রবাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বদল আসা। অন্তত ৮৯,০০০ বছর আগে কোশী নদীর সঙ্গে মিশে যায় অরুণ নদী। যার জেরে এভারেস্টের উচ্চতা অন্তত ৪৯ ফুট থেকে ১৬৪ ফুট (১৫ থেকে ৫০ মিটার) তখনই বেড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, আইসোস্ট্যাটিক রিবাউন্ড নামে একটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া।
এক্ষেত্রে যেটা হয়েছে সেটা হল, দুই নদী মিশে যাওয়ায় যৌথভাবে তাদের ক্ষয় করার শক্তি বাড়ে। যার ফলে হিমালয় পার্বত্য এলাকায় যেখানে এভারেস্টের অবস্থান, সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে মাটি এবং শিলা ক্ষয় হয়ে গিয়ে অন্যত্র সরে যায়। ফলে ভূপৃষ্ঠের ওই নির্দিষ্ট স্থানটির ওজন কমে এবং তার নিচের অংশটির উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। বিষয়টি অনেকটা জাহাজ বা নৌকার কার্গো খালি করা হলে যেভাবে যানটি ক্রমশ জলতলের উপরে উঠতে থাকে, ঠিক তেমন। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের গবেষক, অ্যাডাম স্মিথও জিপিএস মেজারমেন্ট সংক্রান্ত প্রমাণের মাধ্যমে হিমালয়ের অন্যান্য পর্বতশৃঙ্গের তুলনায় এভারেস্টের দৈর্ঘ্য দ্রুত হারে বেড়ে যাওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছেন।