সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানব সভ্যতার ইতিহাস ও বিবর্তনবাদে প্রথম ধাপই মানুষের আগুনের ব্যবহার। সেই দিন থেকে আধুনিক যুগের সূচনা ধরা হয়। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য, দলিলও তো স্থায়ী নয়। লাগাতার গবেষণায় সেসব স্থান, কাল, পাত্র বদলে বদলে যায়। সাম্প্রতিক গবেষণার রিপোর্টে মানুষের আগুন ব্যবহার নিয়ে উঠে এল নয়া তথ্য। গবেষকদের দাবি, ইতিহাসে যে সময়ের উল্লেখ রয়েছে, তার চেয়েও আগে মানুষের পূর্বপুরুষ শিখে নিয়েছিল আগুনের ব্যবহার। একাধিক নিদর্শন তার সাক্ষী। সময়ের হিসেব বলছে, ৫০ হাজার বছর নয়, অন্তত ৪ লক্ষ বছর আগে জঙ্গলে নিয়ান্ডারথালরা পরম বন্ধু হিসেবে চিনেছিল অগ্নিকে। তবে কি ইতিহাস নতুন করে লেখার পালা?
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের সাফোকের কাছে এক গ্রামে পাওয়া গিয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। সেখানে খননকাজ চালিয়ে নয়া তথ্য উঠে এসেছে বিশেষজ্ঞদের হাতে। এখান থেকে পাওয়া কিছু পাথর, লোহা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সেসব প্রাকৃতিক নয়, বরং তা প্রাকৃতিক সামগ্রীর পরিবর্তিত রূপ। মনে করা হচ্ছে, অতি উচ্চ তাপমাত্রায় সেসব আগুনে পোড়ানোর পর আজকের এই নমুনায় পরিণত হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কোথাও শক্ত মাটির তালকে প্রায় ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়েছে, কোনওটা আবার দিনের পর দিন শুধু আগুনের মধ্যেই রেখে দেওয়া হয়েছে। আর এই সময়সীমা অন্তত ১ থেকে ৪ লক্ষ বছর আগেকার। তবে কি ওই সময়েই মানুষ শিখে ফেলেছিল আগুনের ব্যবহার? এই প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা।
ব্রিটেন ছাড়াও ইউরোপের নানা জায়গা থেকে এমন কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মিলেছে বলে খবর। সেসব বিশ্লেষণ করে গবেষকদের দাবি, হোমো সাপিয়েন্স অর্থাৎ আজকের মানুষ নয়, সময়সীমা অনুযায়ী নিয়ান্ডারথালরা প্রথম আগুনের ব্যবহার শুরু করে। কারণ হোমো সাপিয়েন্সরা আফ্রিকা থেকে আসে আজ থেকে লাখ খানেক বছর ধরে। তারও আগে অর্থাৎ ৪ লক্ষ বছর আগেই আগুনের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মত, কখনও উত্তাপ পেতে, কখনও শিকারের মাংস ঝলসে নিতে, কখনও আবার বন্যদের হামলা থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে - বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগুনের ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্ক বিকাশের সহায়ক হয়ে উঠেছে। এছাড়া সমাজবদ্ধ হতেও শিখিয়েছে। বিখ্যাত 'নেচার' পত্রিকায় এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই নয়া তথ্য মানব সভ্যতার ইতিহাস নতুন করে লিখতে পারে।
