ধীমান রায়, কাটোয়া: লুপ্তপ্রায় ধূসর নেকড়ের সংসার বাড়ছে। তাদের সংখ্যা বাড়ছে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে। তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে আউশগ্রাম জঙ্গলমহলে বসল ট্রাপ ক্যামেরা।
বর্ধমানের ডিএফও সঞ্চিতা শর্মা জানান, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছে নেকড়ে গণনা। তাঁর কথায়, "আউশগ্রামে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টি ধূসর নেকড়ের সন্ধান মিলেছে। সমীক্ষা শেষে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই ধারণা। পশ্চিম বর্ধমানের তুলনায় পূর্ব বর্ধমানে নেকড়ের সংখ্যা বেশি বলে মনে হচ্ছে। এনিয়ে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে সচেতনতা বাড়ানো হবে।"
আউশগ্রামে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জঙ্গলজুড়ে ইতিমধ্যেই বসানো হয়েছে ১৫টি ট্র্যাপ ক্যামেরা। পানাগড় রেঞ্জ এলাকায় রয়েছে আটটি ক্যামেরা। আউশগ্রাম-১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে ১৫ দিন করে ক্যামেরা লাগিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে বনবিভাগ। আদুরিয়া, খাণ্ডারি, যাদবগঞ্জ—সব জঙ্গলে চলছে এই সমীক্ষা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক অর্কজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলেন, “পানাগড়, দুর্গাপুর ও গুসকরা—তিনটি রেঞ্জে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। গণনা শেষ হলে পুরো রিপোর্ট আমরা বনদপ্তরের হাতে দেব।”
উল্লেখ্য, পশ্চিম বর্ধমানেও মিলেছে নেকড়ের অস্তিত্ব । বনদপ্তর সূত্রে খবর, জেলায় কমপক্ষে তিনটি পৃথক ‘প্যাক’ বা দলের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে, যাদের মোট সদস্যসংখ্যা ২০ টিরও বেশি। দুর্গাপুর, মলানদিঘি, কাঁকসা, লাউদোহা জুড়ে এই গণনা চলে। পানাগড়ের রেঞ্জার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই জঙ্গলে চোরাশিকারিদের উপদ্রব তেমন নেই বললেই চলে। আশপাশের মানুষও জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করেন না। ফলে বন্যপ্রাণীরা নিরাপদে রয়েছে। তাই নেকড়ে-সহ বহু প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে।”
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দ্রুত কমে যাওয়া ভারতীয় ধূসর নেকড়ের প্রজাতিকে রক্ষার ক্ষেত্রে এই সমীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরার ধরণ, বাস্তুতন্ত্রে ভূমিকা—সবই নথিবদ্ধ করা হচ্ছে। এতে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে মানুষকে সচেতন করতেও সুবিধা হবে। তাঁদের কথায়, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে নেকড়ের উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ধূসর নেকড়ের পাশাপাশি আউশগ্রামের জঙ্গলে বেড়েছে হায়নার সংখ্যাও। বনদপ্তরের ব্যাখ্যা, হায়না ও নেকড়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে—যা খাদ্যাভ্যাস থেকেই বোঝা যায়। হায়না সাধারণত মৃতদেহের মাংসে আগ্রহী, অন্যদিকে ধূসর নেকড়ে জীবন্ত শিকারেই বেশি নির্ভরশীল। ট্র্যাপ ক্যামেরা বলছে, খরগোশ, ময়ূর, এমনকী আশপাশের গ্রামগুলির ছাগলও শিকার করছে নেকড়েরা।
গতবছর পশ্চিম বর্ধমানে একটি নেকড়েকে পিটিয়ে মারার ঘটনাকে সামনে রেখে বনদপ্তর আরও সতর্ক। সেই ঘটনার পরই শুরু হয়েছিল এই বিস্তৃত সমীক্ষার পরিকল্পনা। উদ্দেশ্য—নেকড়ে সংরক্ষণ, তাদের চলাফেরা ও আচরণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য সংগ্রহ এবং গ্রামবাসীদের সচেতন করা।
