শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: ডাক নাম 'ভুতি'। ভালো নাম ক্রেস্টেড পচার্ড। শরীরজুড়ে ধূসর কালো, সাদা ও বাদামি রঙের কম্বো। মাথার পেছনে লম্বাটে ঝুটি। সোনা গলানো রঙের চোখ যা আর পাঁচটা হাঁসের থেকে তাদের আলাদা করে। নিবাস সুদূর ইউরোপ। তবে 'ভুতি' নামেই বাংলায় তার পরিচিতি।
শীত পড়লে তাদের পছন্দের ঠিকানা হিমালয়ের পাদদেশের তিস্তা নদী। পছন্দের জায়গা তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন গজলডোবা এলাকা। হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর দল বেঁধে উড়ে আসে ওরা। এবার বাসা বেঁধেছে সেখান থেকে আরও কিছুটা দক্ষিণে। তিস্তার ১২ নম্বর স্পার এলাকায় ঝাঁক বেধে আসা ভুতি হাঁসের দেখা পেয়ে আহ্লাদিত তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। ভুতি এবার একা নয়। সঙ্গী করে এনেছে নর্দার্ন পিন টেইল বা পিন ল্যাজা হাঁসকে। পরিযায়ী পাখির উপর সমীক্ষা করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই এই দুই হাঁস নজর কেড়েছে পাখি প্রেমীদের। বিদেশি অতিথি হাঁসের নিরাপত্তায় এলাকায় সচেতনতার প্রচার ও শুরু করছেন তাঁরা। তাতে সাড়াও পাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের কাছ থেকে।
তিস্তা পাড়ের এই এলাকা জলপাইগুড়ি খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। এক থেকে পনেরো নম্বর নদী স্পার সংলগ্ন এই এলাকা সারদাপল্লি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য কুসুমবালা মণ্ডল। অতিথি হাঁস রক্ষায় তিনিও সামিল হয়েছেন প্রচারে। তাতে নিরাপত্তার প্রশ্নে অনেকটাই ভরসা পাচ্ছেন পাখি এবং পরিবেশ কর্মী সংগঠনের সদস্যরা। জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডঃ রাজা রাউত জানান, "প্রতিবছর এই বিদেশি হাঁসের দল তিস্তায় আসে। শীতের এই সময় তিস্তার গজলডোবা এলাকায় বিদেশি এই হাঁসের দেখা মেলে। গত বছর সিকিমে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়ে তিস্তায়। পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই কারনে পরিযায়ীদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশের দিকে উড়ে যায়। এই বছর পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় আবার ঝাঁক বেধে পরিযায়ী পাখির দল আসা শুরু করেছে।"
ব্যতিক্রম এই বছর। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন তিস্তা নদীতেও পরিযায়ী হাঁসের দেখা মিলছে। প্রথম পর্যায়ের পাখি সমীক্ষায় গিয়ে ভুতি হাঁস বা ক্রেস্টেড পচার্ড এর সঙ্গে নর্দার্ন পিন টেইল বা পিন ল্যাজা হাঁস ও ক্যামেরা বন্দি করেছেন তারা। রাজাবাবুর কথায়, "বেশ ভালো সংখ্যায় এসেছে এই দুই প্রজাতির হাঁস। তিস্তার স্বচ্ছ জলে দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাও এদের উপর নজর রাখছেন। চোরা শিকারিরা যাতে কাছে ঘেঁষতে না পারে তার জন্য দিনরাত নজরদারি চলছে।" তাঁর মত, আতিথেয়তা এবং নিরাপত্তা পেলে আগামী দিনে তিস্তা ব্যারেজের গজলডোবার পাশাপাশি তিস্তা নদীর এই স্পার এলাকায় পরিযায়ী পাখির আনাগোনা আরও বাড়বে।