সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সে বহু ঝড়ঝঞ্ঝা, বিক্ষুব্ধ সময়ের কথা। মহাশূন্যে নিজেদের গতিতে চলে ফিরে বেড়াচ্ছিল উল্কার দল। মহাকর্ষ বলের বিচিত্র টানে আবার মহাশূন্যেই মিলিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কিছু খণ্ডাংশ অবশ্য আছড়ে পড়ছিল কোনও কোনও গ্রহের উপরও। পৃথিবী সৃষ্টির মুহূর্তে এমনই সব তাণ্ডব ঘটেছিল। এখন বিভিন্ন গ্রহের জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে মহাকাশপ্রেমীদের কৌতূহল তুঙ্গে। বিশাল চেহারার জন্য সৌরজগতে 'গুরুগ্রহ' বলে পরিচিত বৃহস্পতি। পৃথিবী থেকে সাড়ে ৮০০ মিলিয়ন মাইল দূরের গ্রহটির বয়স কত? তা নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর অবশেষে একটা সময়রেখা বের করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হচ্ছে, উল্কার ধ্বংসাবশেষ বৃহস্পতির জন্মদাগ রেখে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ পৃথিবীর বুকের শিলাখণ্ডও তার সাক্ষ্য বহন করে।
জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইটালির মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এনিয়ে গবেষণা চালিয়েছিলেন। তাঁদের গবেষণা কাজ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এক বিজ্ঞান পত্রিকায়। তাতে জানা যাচ্ছে, সাড়ে চার হাজার কোটি বছরেরও বেশি সময় আগে, যখন সদ্য সৌরজগত তৈরি হয়েছে, বৃহস্পতির আবির্ভূত হওয়ার সময়ও তখনই। তবে অন্যান্য গ্রহের তুলনায় গুরুগ্রহের বিবর্তন হয়েছে অনেক দ্রুত। তার রাসায়নিক পরিবর্তন, গড়ন সব কিছুতেই উল্কাপাতের প্রভাব বেশি। উল্কাবৃষ্টির তথ্য-পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে বড় বড় হিসেবনিকেশ করে তবেই বৃহস্পতি সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য জানা গিয়েছে।
উল্কাখণ্ডেই লুকিয়ে গ্রহের জন্মসময়।
পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, উল্কাপাতের ফলে ছিটকে আসা ক্ষুদ্র খনিজ কণা থেকে বোঝা যায় জন্মকাল। মহাশূন্যে ক্রমশ গ্রহাণু, উল্কাদের গতিবিধি, সংঘর্ষের ফলে উচ্চ তাপশক্তি বলয় থেকে ছিটকে এসে কোন কণা কত দ্রুত শীতল হচ্ছে, সেই সময়সীমা বের করতে পারলেই বোঝা যাবে কোন গ্রহের কত বয়স। বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, বৃহস্পতির ক্ষেত্রে গলিত কণা থেকে শীতল হওয়া এবং ধীরে ধীরে জমাট বাঁধার যে গতিপ্রকৃতি, সেটাই জন্ম সময়।
সেই সময়টা কবে? মোটের উপর সৌরজগত তৈরির ১ হাজার ৮০০ কোটি বছর পর। উল্কাখণ্ডের অংশ নাকি খুব দ্রুত শীতল হয়ে যায়। তারপর গ্যাসীয় পদার্থ জমে জমে এত বিশাল আকার হয় তার। সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহৎ গ্রহ বৃহস্পতি। গবেষকদলের অন্যতম বিজ্ঞানী ড. দিয়েগো তুরিনির কথায়, ''একমাত্র উল্কাখণ্ডই এই রেকর্ড ধরে রাখতে পারে। গ্রহ জন্মের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ সেটাই।'' তবে বৃহস্পতির জন্মরহস্য উদঘাটনের নেপথ্যে পৃথিবীরও অবদান কম নয়। পৃথিবীর মাটিতে গলিত অবস্থার খনিজ পাথর বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য হাতে এসেছে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।
