সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত হয় স্বাভাবিক নিয়মেই। কিন্তু সূর্যাস্তের পরও আকাশটা আলোয় ভরে থাকে। মহাশূন্য থেকে রাতও আলোকিত দেখায়। এমন আজব দৃশ্য দেখে বাংলার বিখ্যাত ছড়াকার যোগীন্দ্রনাথ সরকারের 'মজার দেশ'-এর কথা মনে পড়ে যায়, যার প্রথম পংক্তি - 'এক যে ছিলো মজার দেশ/ সব রকমে ভালো/ রাত্তিরেতে বেজায় রোদ/দিনে চাঁদের আলো।' কিন্তু কেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে রোদেলা রাত্তির দেখা যায়? তার ব্যাখ্যা দিলেন সদ্য স্পেস স্টেশনে ১৪ দিন কাটিয়ে ফেরা ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। জানালেন, মহাকাশ স্টেশনের কক্ষপথের কৌণিক অবস্থান এর মূল কারণ।
অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের অংশ হয়ে সপ্তাদুয়েক আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কাটিয়ে এসেছেন শুভাংশু শুক্লা। এখন সেসব দিনের কথা ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আনছেন তিনি। সেখানেই ব্যাখ্যা করলেন স্পেস স্টেশন থেকে কেন সূর্যাস্তের পরও আলো দেখা যায়। আসল কারণ হল এর অবস্থান। শুভাংশুর ব্যাখ্যা, পৃথিবী ও সূর্য সাপেক্ষে মহাকাশ স্টেশন এমন এক কৌণিক অবস্থানে রয়েছে, তাতে সর্বদাই সূর্যের বিচ্ছুরণ দৃশ্যমান হয়। ঠিক যেমনটা হয় অত্যন্ত উচ্চ অক্ষরেখা সংলগ্ন এলাকায়, সূর্য যেন অস্তাচলে গিয়েও নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়। নিজের এক্স হ্যান্ডলে একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি জানাচ্ছেন, সূর্য এবং স্পেস স্টেশনের কক্ষপথের 'বিটা অ্যাঙ্গল'ই এর কারণ। যখন বিটার কৌণিক অবস্থান শূন্য ডিগ্রি, তখন স্পেস স্টেশনের অর্ধেকটা সূর্যালোকের আওতায় আসে। আর সেই অবস্থান ৯০ ডিগ্রি হলে সেখানে সর্বক্ষণ সূর্যস্নানের মতো পরিস্থিতি।
শুভাংশুর পোস্ট করা ভিডিওতে ৯০ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানে কীভাবে স্পেস স্টেশন সর্বদা আলোকিত হয়ে থাকে। তাঁর ব্যাখ্যা, যে সময় তাঁরা স্পেস স্টেশনে ছিলেন তখন তার অবস্থান ছিল বেশ জটিল। ৬০ ও ৯০ ডিগ্রির মাঝামাঝি। একে বিজ্ঞানের পরিভাষায় 'হাই বিটা অ্যাঙ্গল' বলে, যখন তির্যকভাবে সূর্যের আলো পড়ে। তবে শুধু আলোকিতই নয়, তীব্র সূর্যরশ্মির তেজ থেকে স্পেস স্টেশনকে আড়াল করা যায় না। আর অতিরিক্ত তাপের কারণে নভশ্চরদের গতিবিধি সীমিত হয়ে যায়। স্পেস স্টেশনের ঘূর্ণনের সঙ্গে সূর্যের প্রতিফলন এভাবেই বদলে বদলে যায়। আসলে শুভাংশুরা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং সময়ে স্পেস স্টেশনে ছিলেন। সেই সময়টুকু সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে গিয়েছেন। সেসব অভিজ্ঞতার কথাই তিনি শেয়ার করছেন সকলের সঙ্গে।
