অভিরূপ দাস: তেরো বছর আগে মারা গিয়েছেন নীল আর্মস্ট্রং। তিনিই পৃথিবীর প্রথম মানুষ যিনি চাঁদে পা রেখেছিলেন। মৃত্যুর এক দশক পরেও তাঁর চুলে হাত বোলানোর সুযোগ এই বাংলায়! রয়েছে চাঁদের মাটি স্পর্শ করার সোনালি সুযোগও। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের মিউজিয়ামে মিলছে ফ্যান্টাসিকে সত্যি করার মওকা। মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রংয়ের চুল, চাঁদের মাটি, মঙ্গলগ্রহের পাথর সযত্নে সংরক্ষিত রয়েছে সেখানে। মার্কিন নভোচারীর স্রেফ একটা চুলের দাম শুনলে চোখ কপালে উঠে যাবে। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা ডিরেক্টর সন্দীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, নীল আর্মস্ট্রংয়ের কেবল একটিমাত্র চুলের দাম ৩৬ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার তিনশো টাকা!
কীভাবে জোগাড় করা হল সেই এক টুকরো চুল? সেই গল্প হার মানাবে কোনও রূপকথাকেও। ১৯৩০ সালে মার্কিন মুলুকে জন্মেছিলেন নীল আর্মস্ট্রং। ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনের যুক্ত হয়ে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসাবে চাঁদে পা রাখেন। এহেন মহাকাশচারীর চুল নিয়ে চুলোচুলি কম হয়নি। চাঁদে পা রাখার পর নীল আর্মস্ট্রং বিশ্বখ্যাত। 'কাস্টমারের' প্রভাব-প্রতিপত্তি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন আর্মস্ট্রংয়ের নাপিতও। চাঁদে পা রাখা প্রথম মানুষ যে নাপিতের কাছে নিয়মিত চুল কাটাতেন, তিনি না জানিয়েই একদিন সংগ্রাহকের কাছে মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন কেটে নেওয়া কিছু চুল। জানতে পেরে আইনি পদক্ষেপ নেন নীল। শেষমেশ যদিও চুল ফেরত মেলেনি। ওই চুল পরে নিলামে বিক্রি করেন ওই সংগ্রাহক। সেখান থেকেই একটি চুল সংগ্রহ করেছেন ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা।
শীতের শহরে ঘোরাঘুরির জায়গা কম নেই। তবে অনেকেই এখনও খবর রাখেন না ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের এই জাদুঘরের। যে সংগ্রহ দেখে বিস্মিত ভারতের দ্বিতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লাও। অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, আমরা চাই স্কুলের খুদেরা এখানে আসুক আরও বেশি বেশি করে। এই সময়ে তাদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা উসকে দেওয়া একান্ত জরুরি। চাঁদের মাটি, মঙ্গলগ্রহের পাথর ছাড়াও এই মিউজিয়ামে রয়েছে ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার ডায়েরি। তার দামও মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট! অধিকর্তার দাবি, "মেঘনাদ সাহার ডায়েরির একটা পাতার একটা লাইনের দাম ভারতীয় মুদ্রায় ২৭ হাজার টাকার মতো!" জাদুঘরে দর্শকদের জন্য সাজানো রয়েছে নাসার শেষ স্পেস শাটল মিশনে ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী। ২০১১ সালের ৮ জুলাই মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিল চারজন মহাকাশচারী। ১৩ দিন তাঁরা ছিলেন ব্রহ্মাণ্ডে। ওই মিশনে মহাকাশচারীদের ব্যবহৃত কিছু দ্রব্য প্রদর্শিত রয়েছে জাদুঘরে।
তবে আইনস্টাইনের কোনও সই এখনও সংগ্রহ করতে পারেনি ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স। কারণ? "আইনস্টাইনের একটা ছোট্ট সইয়ের দাম সাড়ে সাত হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ছ'লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। ভাবতে পারছেন।" অধিকর্তার আক্ষেপ, "কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সাহায্য পাই না আমরা। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথাসম্ভব আর্থিক সাহায্য করেন আমাদের। বছরে এক কোটি টাকা তিনি অনুদান দেন আমাদের।"
