সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোভিড ভুলবে না বিশ্ব। ভুলবে না তার কারণে হওয়া লকডাউনও। তবে শুধু পৃথিবী নয়। কোভিড এবং লকডাউনকে মনে রাখবে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহও চাঁদও। প্রশ্ন হল কেন? উত্তরটা চমকপ্রদ। ২০২০ সালে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী সেই লকডাউনের কারণেই কমে গিয়েছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। এবং তার মাত্রাও প্রায় ৮ থেকে ১০ কেলভিন।
সম্প্রতি ভারতীয় বিজ্ঞানীদের একটি দল জানাচ্ছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে রাতের বেলায় চাঁদের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রায় লক্ষ্যণীয় পতন ঘটেছিল। এমনটাই দাবি করেছেন ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির (পিআরএল) বিজ্ঞানী কে দুর্গাপ্রসাদ এবং জি এম্বিলি। নাসার লুনার রিকনোস্যান্স অরবিটারের কাছ থেকে ২০১৭-২০২৩ সাল পর্যন্ত চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে, তা খতিয়ে দেখেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাঁরা। গবেষণার রিপোর্ট 'মান্থলি নোটিসেস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি: লেটারস'-এ প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের অভিমত, ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রায় রাত্রিকালীন যে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছিল, তা তার পরবর্তী বছরগুলিতে দেখা যায়নি। কারণ, সেই সময় ধীরে ধীরে মানুষ কোভিডের প্রভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে এসেছিল। বিজ্ঞানীরা চাঁদের পৃষ্ঠতলের ছ’টি জায়গার তাপমাত্রার ‘রিডিং’ নিয়েছিলেন এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তার তারতম্যের দিকে নজর রেখেছিলেন। ২০২০ সালে চন্দ্রপৃষ্ঠের একটি জায়গায় সর্বনিম্ন সার্বিক তাপমাত্রা ছিল ৯৬.২ কেলভিন। আবার অন্য একটি জায়গায় ২০২২ সালে এই হার হয় ১৪৩.৮ কেলভিন।
এর সম্ভাব্য কারণ, কোভিডকালে অর্থাৎ ২০২০ সাল পৃথিবীজুড়ে লকডাউন চলছিল। মানুষ ছিল গৃহবন্দি। শিল্প ছিল বন্ধ, গাড়িঘোড়াও ছিল অচল। ফলত পৃথিবীজুড়ে গ্রিন হাউস গ্যাসগুলির নিঃসরণ হার ছিল অত্যন্ত কম। এমনকী, এরোসোল বা বায়ুবাহিত ধূলিকণার নির্গমনও ছিল কম। এরোসোল এবং গ্রিন হাউস গ্যাস তাপ (সূর্যরশ্মি) শোষণ করে রাখে। ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ে। কিন্তু কোভিডকালে এই দুয়েরই নিঃসরণ কমে যাওয়ায় পৃথিবীর তাপ শোষণ করে রাখা ও বিকিরণ – দুইই কম হয়েছিল। আর তাই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ, চাঁদেরও পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছিল।