সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বছরশেষে ইতিহাস গড়ল দক্ষিণ আমেরিকার বামপন্থী দেশ ভেনেজুয়েলা। তবে এই ইতিহাস কোনও গর্বের নয়। একদিকে প্রকৃতি নিয়ে আশঙ্কা আরেকদিকে মানবসভ্যতার কাছে লজ্জার! বিশ্বের প্রথম দেশ ভেনেজুয়েলা, যা বরফশূন্য। গলতে গলতে এ দেশের সমস্ত বরফ জল হয়ে গিয়েছে। যেটুকু বেঁচে আছে, তা কোনওক্রমে জলের বরফ ধর্ম ধরে রাখার এক অসীম সংগ্রাম বললে অত্যুক্তি হয় না। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক শতকে আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এই নাতিশীতোষ্ণ দেশটি অন্তত ৬ টি হিমবাহ গলনের সাক্ষী।
এমন সর্বনাশা কাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছিল ২০০০ সালের আগে থেকে। আন্দিজ পর্বতমালার অন্যতম আলোচিত হিমবাহ ছিল হামবোল্ট বা লা কোরোনা। তার গলনই ছিল অশনি সংকেত। যত দিন গিয়েছে, হামবোল্টের গলনের হার বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে হামবোল্টের মাত্র ০.২ শতাংশ অবশিষ্ট, বাকি সবটাই গলে জল! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামবোল্ট 'হিমবাহ' তকমা খুইয়েছে। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমবাহ বিশারদ ড. ক্যারোলিন ক্লাসনের কথায়, ''২০০০ সাল থেকেই ভেনেজুয়েলায় হিমবাহগুলির পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছিল। এখন যা হাল, তাতে হিমবাহ না বলে এই অংশকে বরফের প্রান্তর বলাই ভালো।''
আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে সুন্দর দেশ ভেনেজুয়েলা।
শুধু ভেনেজুয়েলাই নয়, আন্দিজ সংলগ্ন কলম্বিয়াতেও একই পরিস্থিতি প্রায়। সেখানে ৪৫০ হেক্টর এলাকা জুড়ে থাকা হিমবাহের অংশ এখন নেমেছে মাত্র দুয়ে। এক বিশেষজ্ঞের মতে, হিমবাহের সর্বনিম্ন আকার-আয়তনের মাপকাঠি এখনও সেভাবে কিছু নেই। সাধারণভাবে ১০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বরফপিণ্ডের অবস্থান হলে হিমবাহ বলে ধরা হয়। তবে ওজনও বিশেষ ফ্যাক্টর। এখন উষ্ণায়নের ফলে হিমবাহ ঠিক কতটা সংকুচিত হলে তাকে হিমবাহ বলা যাবে, তা জানা নেই। কিন্তু হামবোল্টের পরিণতিতে তাঁরা প্রমাদ গুনছেন। এভাবেই যদি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হিমবাহ শূন্য হয়ে যায় পৃথিবী, তাহলে চরম বিপদ আর আটকানো যাবে না। শেষের সেদিন এল বলে!
