রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: উত্তরবঙ্গে বন্যপ্রাণীদের বিচরণভূমির সম্প্রসারণ চায় বনদপ্তর। এই কারণে সেখানকার সব বনাঞ্চলকে এক সুতোয় গাঁথার উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য বনদপ্তর। একেবারে সিঙ্গলীলা থেকে আলিপুরদুয়ারের জলদাপাড়া ও কোচবিহার বনাঞ্চল পর্যন্ত সব অরণ্যের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন বন আধিকারিকরা। এক বনাঞ্চল থেকে আরেক বনাঞ্চলে যাতে সহজেই বন্যপ্রাণীরা চলাচল করতে পারে, সেই কারণে এই উদ্যোগ বলে জানা গিয়েছে।
একসময় একটি বনাঞ্চলের সঙ্গে আরেকটি বনাঞ্চলের এই সংযোগই ছিল। কিন্তু বনকর্তারা জানতে পেরেছেন যে চা বাগান ও বসতি গড়ে ওঠায় সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এবং দিন দিন এই বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। আর সেই কারণে এক বনাঞ্চলের সঙ্গে আরেক বনাঞ্চলের সংযোগ তৈরি করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কীভাবে এই সংযোগ গড়ে তোলা হবে?
গণ্ডারদের চারণভূমি জলদাপাড়া। ফাইল ছবি।
রাজ্য বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বনাঞ্চলের সঙ্গে আরেকটি বনাঞ্চলের মধ্যে সংযোগস্থলে ৩০০ মিটার চওড়া একটি করিডর তৈরি করা হবে। সেই করিডর প্রথমে একেবারে বাড়ি ঘর-সহ যা যা থাকবে, তা সরিয়ে মুক্ত করে দেওয়া হবে। তার পর সেখানে গাছ লাগিয়ে ভরে দেওয়া হবে। যাতে এই করিডর দিয়ে সহজেই বন্যপ্রাণী যাতায়াত করতে পারে। প্রথমে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে যে কোনও দুটি বনাঞ্চলের মাঝে এই প্রকল্প চালু করা হবে। তার পর সেই করিডরে বুনোদের যাতায়াত সফল হলে অন্যান্য বনাঞ্চলেও ধীরে ধীরে তা করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে বন্যপ্রাণ বিভাগের রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল দেবল রায় বলেন, “পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে প্রথমে একটি জায়গায় আমরা এটা চালু করব। তার পর সেখানে সফল হলে অন্যত্র একই পদ্ধতিতে করিডর তৈরি করা হবে। কাজ চলছে। এটা একদিনের ব্যাপার নয়। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে ১৪টি করিডোর চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে সাত করিডোরের মাধ্যমে এটা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করছি।’’
জানা গিয়েছে, দার্জিলিংয়ের সিঙ্গলীলা থেকে পর পর মহানন্দা, বৈকুন্ঠপুর, নেওড়া, গরুমারা, জলপাইগুড়ি, জলদাপাড়া, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প ও কোচবিহার বনাঞ্চল অবস্থিত। এর মধ্যে সিঙ্গলীলা, নেওড়া, গরুমারা, জলদাপাড়া ও বক্সা টাইগার রিজার্ভ ন্যাশনাল পার্ক – এই পাঁচটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে। এই সব বনাঞ্চলের মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় বর্তমানে যোগসূত্রও রয়েছে। কিন্তু তা পাকাপাকি করতে চাইছে বনদপ্তর। আবার অনেক জায়গায় একেবারে এই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সংযোগ ফিরিয়ে দিলে সহজেই এক বনাঞ্চলের বন্যরা অন্যান্য বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে পারবে।