মলয় কুণ্ডু ও গৌতম ব্রহ্ম: মশার সঙ্গে এবার জুড়ল পোকার আতঙ্ক!
এডিস ইজিপ্টাইয়ের কামড়ে রাজ্যজুড়ে ডালপালা ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু৷ এর মধ্যেই সেই ডেঙ্গুর মুখোশ পরে শহরে হানা দিল ‘স্ক্রাব টাইফাস’৷
উপসর্গ দেখে বোঝার উপায় নেই৷ ডেঙ্গু, মেনিনজাইটিস, প্যারাটাইফয়েড, পাইরেক্সিয়ার সঙ্গে প্রচুর মিল রয়েছে এই রোগের৷
ধুম জ্বর, পেশিতে ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা, হজমের সমস্যা৷ ডাক্তারের চোখও অনেকসময় ধোঁকা খায়৷ সময়মতো চিকিৎসা শুরু না হলে শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হয়ে প্রাণসংশয় হয় রোগীর৷
রোগের বাহক উকুনের মতো একধরনের পোকা৷ পোকাগুলি এত ছোট যে খালি চোখে চট করে ধরা পড়ে না৷ বিছানায় কিংবা পোশাকে থেকে এরা দংশন করে৷ রক্তে মিশিয়ে দেয় জীবাণু৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মায়ানমারের প্রচুর সেনা এই রোগে মারা পড়েন৷ মার্কিন সেনার ৫৩০৭ তম ইউনিটও এই রোগে উজাড় হয়ে যায়৷ অর্থাত্ ডেঙ্গুর মতোই মহামারীর আকার নিতে পারে এই ‘স্ক্রাব টাইফাস’৷ কলকাতার ‘স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর অধিকর্তা ডা. নন্দিতা বসু উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ জানিয়েছেন, “এ রাজ্যে এই রোগ দেখা যায় না৷ শহরাঞ্চলে তো নয়ই৷ অত্যন্ত বিরল৷ শিশুদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপজ্জনক এই রোগ৷” ট্রপিক্যালের পক্ষ থেকে আক্রান্ত এলাকায় প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ আক্রান্ত শিশুদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলবেন ট্রপিক্যালের চিকিৎসকরা৷ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৯৩০ সালে জাপানে প্রথম সুসুগামুসি নামে এই পরজীবীর দেখা মেলে৷ এই পরজীবী রিকেটশিয়া শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত৷ এই পোকা কামড়ালে ধুম জ্বর ওঠে৷ গায়ে বের হয় ব়্যাশ৷ সঙ্গী হয় প্রবল মাথার যন্ত্রণা, পেটের সমস্যা৷
গত সপ্তাহে পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অজানা জ্বর নিয়ে একটি শিশু ভর্তি হয়৷ তিনদিন আগে মঙ্গলবার বিধাননগরের কাঁকুড়গাছির সৌমী সাহা নামে সাত বছরের আর একটি শিশু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয় ওই হাসপাতালেই৷ প্রথমে চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন মেনিনজাইটিস হয়েছে৷ ফলে এমআরআই করানো হয়৷ কিন্তু তাতে অস্বাভাবিক কিছুই ধরা পড়েনি৷ এর পর ডেঙ্গু হয়েছে কি না জানার জন্য এলাইজা টেস্টও হয়৷ তার রিপোর্টও ‘নেগেটিভ’ হয়৷ চিন্তায় পড়েন ডাক্তাররা৷ নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন৷ শিশু দু’টির ‘সেরোলজি টেস্ট’ করানো হয়৷ কলকাতার মধ্যে একমাত্র ওই বেসরকারি হাসপাতালেই ওই পরীক্ষার পরিকাঠামো রয়েছে৷ বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ জানান, “গত সপ্তাহে এমন দু’টি ‘কেস’ পেয়েছি৷ এগুলো ‘স্ক্রাব টাইফাস’৷ আগে শুধু গ্রামে-গঞ্জে দেখা যেত৷ এখন শহরের মানুষও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷” অর্থাৎ কলকাতা শহরেও ঢুকে পড়েছে এই ভয়ঙ্কর ‘সুসুগামুসি’ পোকা৷ ভয়ের কথা হল, সাদা চামড়ার দেশে এই পোকার সংক্রমণ সহজেই ধরা যায়৷ কারণ, এই পোকা যেখানে কামড়ায় সেখানে কালো দাগ পড়ে যায়৷ কিন্তু আমাদের চামড়ার রং শ্যামলা বা কালো হওয়ার জন্য এই দাগ বোঝা যায় না৷ তাছাড়া এই পোকা শরীরের পোশাকে ঢাকা অংশেই দংশন করে বেশি৷
কলকাতা পুরসভার কানেও পৌঁছেছে এই পোকার খবর৷ দু’দিন আগে সৌমী সাহাকে দেখতে হাসপাতালে যান কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউত৷ ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে রোগের উৎস জানতে পারেন৷ তার পরই তিনি বিষয়টি পুরসভাকে জানান৷ পুরসভার আশঙ্কা, ডেঙ্গুর ছদ্মবেশে হয়তো এই রোগ ডালপালা ছড়াচ্ছে কলকাতায়৷ অপূর্ববাবু অবশ্য জনিয়েছেন, সময়মতো চিকিৎসা হলে চিন্তার কিছু নেই৷ যে কোনও বয়সের মানুষের হতে পারে এই রোগ৷
The post পোকার কামড়ে অজানা জ্বর appeared first on Sangbad Pratidin.