সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর রাখঢাক নয়। এবার সরাসরি শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারতকে চিঠি দিল বাংলাদেশ। সোমবার মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে জানান, ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নোট ভার্বাল বা সরকারিভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশে তাঁর বিচার হবে। এই মুহূর্তে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে ঢাকার উপর চাপ বাড়াচ্ছে দিল্লি। মনে করা হচ্ছে, পালটা কৌশল হিসাবে হাসিনা কার্ড খেলছে ইউনুস সরকার।
রবিবার, হাসিনাকে দ্রুত গ্রেপ্তারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশকে ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। বলা হয়, ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত হাসিনার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিস জারি করতে হবে। আর সেই মর্মে ইন্টারপোলকে আবেদন জানাক বাংলাদেশ পুলিশ। সরকারি আইনজীবী জানান, যুদ্ধাপরাধ আদালতের নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যে ইন্টারপোলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আগে আজ সকালে ইউনুস সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, "ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। আগামী দিনে যা হবে এই চুক্তি মেনেই হবে। শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।" এরপরই বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়ে দেন, বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতদিন মুজিবকন্যা হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতকে বার্তা দিয়ে দেখা গিয়েছে একাধিক উপদেষ্টাকে। কয়েকদিন আগে ইউনুসও জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত নির্দেশ দিলেই হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারতের কাছে আবেদন করা হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করে আসলে বদলাই নিতে চাইছে ইউনুস সরকার। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশ থেকে মুজিবের স্মৃতি মুছে ফেলতে তৎপর হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নাম মুছে গিয়েছে হাসিনার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরেছে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে। এমনকি মুজিবের বদলে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ছবি নতুন নোট ছাপা হচ্ছে। পাঠ্যবই থেকেও সরছে মুজিবের লেখা, হাসিনার ছবি। ফলে ইউনুসের শাসনে বদল নয় বদলার দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এখন তাদের লক্ষ্য হাসিনাকে কারাগারে বন্দি করে ক্ষমতা ধরে রাখার রাস্তা তৈরি করা।
এদিকে, ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরির ঢাকা সফরের কয়েকদিনের মধ্যেই এই চিঠি পাঠিয়ে কূটনৈতিক দিক দিয়ে দিল্লিকে উভয় সংকটে ফেলেছে বাংলাদেশ। একদিকে, পুরনো বন্ধু হাসিনা। অন্যদিকে, 'নতুন' বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় ঠিক করার চেষ্টা। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পদক্ষেপ কী হবে সেদিকেই তাকিয়ে ওয়াকিবহাল মহল।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনে রক্তাক্ত হয় বাংলাদেশে। গত ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থাণের জেরে ক্ষমতাচ্য়ুত হয়ে ভারতে চলে আসেন হাসিনা। কিন্তু ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ দমনে তৎকালীন হাসিনা প্রশাসনের ভূমিকাকে ভালো চোখে দেখেনি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত। আন্দোলন রুখে দিতে গণহত্যার নির্দেশ-সহ একাধিক মানবতা বিরোধী পদক্ষেপের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় হাসিনা প্রশাসনের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে। এই তালিকায় রয়েছেন খোদ শেখ হাসিনা, আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের-সহ ৪৬ জন।