গৌতম ব্রহ্ম: চরক-শুশ্রুতে তো উল্লেখ ছিলই। এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র (World Health Organization) জার্নালেও উঠে এল। তিল ও তিসিতে মজুত করোনারোধী শক্তিকে মুক্তকণ্ঠে মান্যতা দিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক মঞ্চও। এবং এক্ষেত্রে তিলে মজুত রাসায়নিক উপাদান সিসেমিনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ বলছে, সার্স কোভ-২-র ক্রিয়াশীল অংশে (সিওয়াইএস ১৪৫) যুক্ত হয়ে ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণকে আটকায় সিসোমিন। ফলে মানবদেহে বিষাণু বা ভাইরাস বিস্তারের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। এছাড়া তিলে সঞ্চিত আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) দ্বিস্তরীয় আবরণ নষ্ট করে দিতে সক্ষম বলেও দাবি করেছেন দুই বঙ্গ গবেষক।
আইসিএমআরের (ICMR) জাতীয় পুষ্টি বিভাগের পৃথা ঘোষ এবং দক্ষিণেশ্বরের হীরালাল মজুমদার মেমোরিয়াল কলেজের প্রাণিবিদ্যা শাখার সহকারী অধ্যাপক এস. রেহান আহমেদ। তাঁদের যৌথ গবেষণাপত্রটির রিভিউ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে হু-র পত্রিকা ‘গ্লোবাল লিটারেচার অন করোনা ভাইরাস ডিজিজ’ অংশে। যেখানে তিলের মতো তিসিকেও ভাইরাসনাশক হিসাবে দাবি করা হয়েছে। গবেষণাপত্রের তথ্য উল্লেখ করে উদ্ভিদবিদ্যা বিশারদ ঋত্বিক আচার্য জানিয়েছেন, নানা ফরম্যাটে তিল ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঠেকায়। করোনা ভাইরাসের ২২৯ ই মডেলে দেখা গিয়েছে, তিলের লিনোলেয়িক অ্যাসিড ও এরাকিডোনিক অ্যাসিড ভাইরাস সংক্রমণকে রুখছে। আবার তিসির ওমেগা-৩ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডে যে প্রোটেক্টিন পাওয়া যায়, তা করোনা ভাইরাসের এমআরএনএ স্থানান্তরকে প্রতিহত করে ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণকে আটকে দেয়। ফলে রোগ সংক্রমণ হ্রাস পায়। এছাড়াও এটি আইএল-৬-এর মাত্রাকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ঋত্বিকের দাবি, এই প্রোটেক্টিনটিই (প্রোটেক্টিন-ডিআই) হল অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধের মুখ্য উপাদান। উপরন্তু তিসিতে থাকা মজুত ওমেগা-৩ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড করোনা সংক্রমণের জেরে শরীরের ভিতরে মাথা তোলা সাইটোকাইন স্টর্মকে প্রতিহত করে এবং তার পাশাপাশি রিঅ্যাক্টিভ অক্সিজেন স্পেসিসের উৎপাদনকে বন্ধ করে।
[আরও পড়ুন: কিডনিতে পাথর জমলেও চিন্তা নেই, জেনে নিন কীভাবে হবেন বিপন্মুক্ত]
তিল ও তিসির অ্যান্টিভাইরাল ক্ষমতা হু-র পত্রিকায় মান্যতা পাওয়ায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা খুশি। আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা. তুষার মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “চরক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদের সব পুঁথিতে তিলের অ্যান্টিভাইরাল গুণের উল্লেখ রয়েছে। আয়ুর্বেদের বহু ওষুধ বানাতে তিলের তেল ব্যবহার হয়। অনুতেল হিসাবে তিল তেল নাকে দেওয়ার প্রচলন বহু দিনের। ভারত সরকার প্রকাশিত করোনার আয়ুশ প্রোটোকলেও তিল তেল ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।” তুষারবাবুর দাবি, তিল ও তিসি মানবদেহে মজুত ন্যাচারাল কিলার কোষ, টি-সেলকে সক্রিয় করে এবং বি-সেল, আইজিএম-কে শক্তিশালী করে, ফলে ইনেট ইমিউনিটির (Immunity) মাত্রা বৃদ্ধি পায়।