রমেন দাস: দীর্ঘ ৫ বছর পর নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে ফের লাল ঝড় উঠেছে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় জেএনইউতে (JNU)। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এবিভিপিকে (ABVP) হারিয়ে বড় জয় পেয়েছে বামেরা। ৩০ বছর পর দলিত প্রার্থী হিসেবে জেএনইউ-র ছাত্র সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ধনঞ্জয়। এই ঘটনায় রীতিমতো খুশি রাজ্যের বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই (SFI)। তৃণমূল ও বিজেপিকে একযোগে নিশানায় নিয়ে বাংলাতেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুললেন এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে।
জেএনইউতে বামেদের জয়ে উৎসাহিত দেবাঞ্জন তৃণমূল ও বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “গোটা দেশজুড়ে পড়াশোনার উপর আক্রমণ চলছে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছে বিজেপি-আরএসএস। প্রায় একই কাজ এরাজ্যে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রশ্ন করবে না, এমন প্রজন্ম তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল-বিজেপি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “বাংলার মাটিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ গণতন্ত্র নষ্ট করছে। হিম্মত থাকলে ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের ডাক দিক রাজ্যে। আমরা দেখিয়ে দেব।” তবে জেএনইউতে জয় পেলেও বাংলায় বামেদের খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “বিজেপির সংগঠন সব জায়গাতেই হারবে, আমাদের বিশ্বাস বাংলা থেকেও উড়ে যাবে। জেএনইউয়ে বামেদের সংগঠন শক্তিশালী তাই ওখানে জিতেছে। এখানে লাভ নেই কোনও। বাংলায় কটা কলেজে এবিভিপি আছে তারই কোনও ঠিক নেই। ওদের দিয়ে কিছু হবে না!”
[আরও পড়ুন: বসন্তে পলাশের রং JNU-তে, তিন দশক পর দলিত সভাপতি পেল ছাত্র সংগঠন]
এদিকে জেএনইউতে লজ্জার হার প্রসঙ্গে এবিভিপি রাজ্য সম্পাদক অনিরুদ্ধ সরকার বলেন, “জেএনইউ বেশি ভোটে হারেনি এবিভিপি। বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এক হয়ে লড়ে অল্প ভোটে আমাদের হারিয়েছে। বারবার বলেছি, ব্রাত্য বসুর ক্ষমতা নেই রাজ্যে ছাত্র নির্বাচন করানোর। ওরা নির্বাচন করাতে চাইছে না কারণ, ওরা বুঝতে পারছে নির্বাচন হলে এবিভিপি জিতবে। বহু কলেজে খুব ভালো ফল করব আমরাই।”
[আরও পড়ুন: ফের লাল পতাকা উড়ল জেএনইউ-তে, ছাত্র সংসদের ভোটে ভরাডুবি গেরুয়া শিবিরের]
প্রসঙ্গত, কোভিডের (COVID-19) জন্য ২০১৯ সালের পর থেকে নির্বাচন হয়নি জেএনইউ-তে। শেষ নির্বাচনে এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষের নেতৃত্বে ক্ষমতায় এসেছিলেন বামেরা। গত কয়েকবছর ধরেই সেখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছে বাম সংগঠনগুলি। অবশেষে এবারের নির্বাচনে ভরপুর উৎসাহে অংশ নেন JNU পড়ুয়ারা। গত ২২ মার্চ নির্বাচন হয় জেএনইউ-তে। ভোটদানের হার মোট ৭৩ শতাংশ, যা গত এক যুগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা যায়, চার আসনেই পরাজিত হয়েছে এবিভিপি।
তবে জেএনইউতে নির্বাচন হলেও বাংলায় ছাত্র সংসদের নির্বাচন আজও অথৈ জলে। ২০১৭ সালে শুরুতে শেষবার রাজ্যজুড়ে হয়েছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। যদিও তারপর ছাত্র ইউনিয়ন তুলে দিয়ে কাউন্সিল নিয়ে এসেছে তৃণমূল সরকার। যা নিয়ে তীব্র বিতর্কও দানা বাঁধে শিক্ষামহলের অন্দরে। নির্বাচনের দাবিতে পথে নামতেও দেখা যায় প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পড়ুয়াদের। সরকারের তরফে অবশ্য একাধিকবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইঙ্গিত দেওয়া হলেও গত ৭ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে নির্বাচন প্রক্রিয়া। এই পরিস্থিতির মাঝেই এবার রাজ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরব হল বাম ও বিজেপির ছাত্র সংগঠন।