সুকুমার সরকার, ঢাকা: উপচার্যের পদত্যাগ-সহ নানা দাবিতে টানা আটদিনের অনশন ভেঙেছেন শ্রীহট্টের-সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বুধবার অনশনরত শিক্ষার্থীদের জলপান করিয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক। এর আগে হাসপাতালে ভরতি অনশনরত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীদের একজন নাফিসা আঞ্জুম ইমু।
[আরও পড়ুন: ‘জাতীয় নিরাপত্তায় কাঁটা রোহিঙ্গারা’, রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি বাংলাদেশের বিদেশ সচিব]
অনশন ভাঙানোর পর লেখক মহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “আমি এখানে আসার আগে আমার সঙ্গে সরকারের অনেক উচ্চপর্যায় থেকে কথা হয়েছে। আমি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে এখানে এসেছি। আমি তাঁদের অনুরোধ করবো, আমাকে যে কথাগুলো তাঁরা দিয়েছেন, সেই কথাগুলো যেন রক্ষা করেন।” একইসঙ্গে, গ্রেপ্তার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মু্ক্তি দেওয়া এবং পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রত্যাহার করার জন্যও তিনি আবেদন জানান। এই বিষয়ে আন্দোলনকারী নাফিসা আঞ্জুম ইমু বলেন, “ঢাকা থেকে জাফর স্যার এসে বলার পর, স্যারের কথা আমরা কেউ ফেলতে পারিনি। স্যারের কথা তো আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি, ভরসা করি। স্যারের কথায় সবাই আশ্বস্ত হয়েছে যে, অনশন ভাঙ্গবে।” তিনি আরও বলেন, অনশনকারীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সবাই একসঙ্গে অনশন করতে শুরু করেছিলেন, তাই অনশনও একসঙ্গে ভেঙেছেন। হাসপাতালে যাঁরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারাও ক্যাম্পাসে এসে অনশন ভেঙেছেন।”
গত মঙ্গলবার পুলিশ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে আটক করে আন্দোলনকারীদের অর্থ সহায়তা দেবার অভিযোগে। গত সপ্তাহে বুধবার বেলা তিনটে থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ছাত্রীদের একটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রভোস্টের দুর্ব্যবহার এবং হলে বিছানা সংকট ও খাওয়ার সমস্যা সমাধানের দাবিতে দিন দশেক আগে শুধু ওই হলের ছাত্রীদের যে আন্দোলন শুরু হয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়।
গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের পিটুনি, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও গুলি কাণ্ডের পর থেকে আন্দোলন জোরদার হয়। উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি।আন্দোলন সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে এবং শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সেটিও মেনে নেয়নি শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য-সহ বেশ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এসব ব্যাপারে উপাচার্যের কোনও বক্তব্য অবশ্য পাওয়া যায়নি। তবে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে ‘অযৌক্তিক’ বর্ণনা করে বাংলাদেশের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, এমন দাবি সম্পর্কে রাষ্ট্রের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়।