অর্ণব আইচ: শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে শিক্ষিকার চাকরি দিতে পারেননি কুন্তল ঘোষ। তাই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টেরেটের জেরার সময় কুন্তলের বিরুদ্ধে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরই ‘দাদা’ শান্তনু। আদালতে পেশ করা ইডি’র চার্জশিটে কুন্তল ঘোষের এই ‘অসফলতা’র প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
ইডি জানিয়েছে, জেরার মুখে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় স্বীকার করেন যে, হুগলির বাসিন্দা রাহুলদেব ঘোষ তাঁরই মাধ্যমে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা দেন। তার জন্য শান্তনুর চাহিদামতো টাকাও দেন ওই চাকরিপ্রার্থী। তারই ভিত্তিতে তিনি শিক্ষকের চাকরিও পান। কীভাবে ওই ব্যক্তি চাকরি পেয়েছেন, সেই তথ্য জানাতে গিয়ে ইডিকে শান্তনু জানান, রাহুল তাঁর বন্ধু ছিলেন। একসঙ্গে দু’জন হুগলির বলাগড়ে রাজনীতিও করতেন। তাই রাহুলের অ্যাডমিট কার্ডের তথ্য তিনি কুন্তল ঘোষকে দিয়েছিলেন। কুন্তল প্রভাবশালীদের সাহায্যে ওই প্রার্থীর জন্য প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরির ব্যবস্থা করেন। তিনি শিক্ষকপদে নিযুক্তও হন। এতে কুন্তলের উপর আরও বিশ্বাস তৈরি হয় শান্তনুর।
[আরও পড়ুন: ভালবেসে কাছাকাছি যুগল, ‘অস্বস্তি’তে সহযাত্রী, ফের বিতর্কের কেন্দ্রে দিল্লি মেট্রো]
তাই নিজের পরিবারের লোকেদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন শান্তনু। তিনি স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্যালিকার টেট পরীক্ষার তথ্যও কুন্তলকে দেন। এর সঙ্গে বলাগড়ের আরও কয়েকজনের নামও দেন কুন্তল ঘোষকে। যদিও শেষ পর্যন্ত কুন্তল শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ও শ্যালিকার চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেননি। তবে পরে এটাও ধরা পড়ে যে, কুন্তল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও এসএসসির একাধিক ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে চাকরিপ্রার্থীদের জাল ফল প্রকাশ করেছেন। ইডি আধিকারিকদের মতে, যেহেতু শান্তনু ও কুন্তল একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে একসঙ্গে রাজনীতি করতেন ও শান্তনু কুন্তলকে ‘ভাই’ বলতেন, তাই জাল ওয়েবসাইটে শান্তনুর স্ত্রী, শ্যালিকা ও পরিচিতদের নাম তুলতে চাননি কুন্তল ঘোষ। আবার শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ইডি’র জেরায় জানান যে, তাঁর সংস্থা ইভান কনট্রেডের পুরো ব্যবসা তিনিই দেখতেন।
যদিও ওই সংস্থার দুই ডিরেক্টর হচ্ছেন তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাকেশ মণ্ডল নামে আরও একজন। শান্তনুর দাবি, মালিক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সংস্থার কর্ণধার নিলয় মালিকের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক লেনদেন হয়। নিলয় ঠিকাদারের কাজ করলেও সরকারি ঠিকাদার হয়ে উঠতে পারেনি বলে তাঁর আক্ষেপ ছিল। তখনই নিলয়ের সঙ্গে অলিখিত চুক্তি হয় শান্তনুর। নিলয়কে সরকারি টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন শান্তনু। যদিও ওই সংস্থাটি তিনি কিনে নেননি। যদিও শান্তনু নিলয় মালিক ও সুপ্রতিম ঘোষের নামে তিনটি সম্পত্তি কেনেন। তার মধ্যে একটি সম্পত্তি কেনা হয় অয়ন শীলের কাছ থেকে।
অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজোনের নামে চুঁচুড়ার এবিএস টাওয়ারে চারতলায় একটি ফ্ল্যাট সুপ্রতিম ঘোষের নামে কেনার সময় শান্তনু সুপ্রতিমকে চার লাখ টাকা নগদে দেন। সেই টাকা সুপ্রতিম অয়নকে ব্যাংকের মাধ্যমে দেন। বাকি ৬ লক্ষ টাকা অয়নকে নগদে দেওয়া হয়। এভাবেই নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল টাকা শান্তনু ও অয়ন সম্পত্তি কিনতে খরচ করেন বলে জানিয়েছে ইডি।