সম্প্রতি নেটফ্লিক্স এর ওয়েব সিরিজ ‘শি’তে (She) নজর কেড়েছেন অভিনেত্রী অদিতি পোহানকার। তিনিই এই সিরিজের নায়িকা বা বলা যেতে পারে তিনিই হলেন ‘শি’। পুলিশ কনস্টেবল ভূমিকা পরদেশির চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। মুম্বইয়ের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের থেকে উঠে আসা লাজুক, ভীতু, মুখচোরা ভূমিকা এক আন্ডারকভার অপারেশনে বেশ্যার ছদ্মবেশে বিপদের মুখে পড়ে কীভাবে নিজের আসল সত্তাকে খুঁজে পায় সেটাই সিরিজের মূল গল্প। পরিচালক ইমতিয়াজ আলির লেখা (সহ-লেখক দিব্যা জহরি) এই সিরিজ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় এবং সমালোচিত হয়েছে। মুম্বইয়ে ঘরবন্দি অদিতি কথা বললেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সঙ্গে। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
কেমন লাগছে, নিশ্চয়ই অনেক মেসেজ পাচ্ছেন ?
অদিতি: হ্যাঁ, দিনে এত বেশি মেসেজ আসছে যে কুল পাচ্ছি না। সেইসঙ্গে দিনে চোদ্দো-পনেরোটা করে ইন্টারভিউ দিচ্ছি। পনেরো হাজার কমপ্লিমেন্ট পাচ্ছি। আমার বাড়িটা সি-ফেসিং। ব্যালকনি থেকে অন্যদের ব্যালকনি, ঘরের ভিতর অবধি দেখা যায়। এখন সবাই COVID-19-এর কারণে বাড়িতে। আমি ব্যালকনি থেকে দেখতে পাচ্ছি অনেকের ল্যাপটপে ‘শি’ চলছে। এই অস্থির সময় দাড়িয়েও এই দৃশ্য দেখে নিজের আনন্দ চেপে রাখতে পারছি না।
২০১৪ সালে নিশিকান্ত কামাতের মারাঠি ছবি ‘লয় ভারি’তে প্রথম আত্মপ্রকাশের পর এটাই আপনার জাতীয় স্তরে প্রথম সাফল্য?
অদিতি: হ্যাঁ, সেই কারণেই আমি খুব খুশি। জানি এখন আনন্দ প্রকাশের সময় নয়। বাট আই কান্ট হাইড মাই হ্যাপিনেস। চারপাশে তাকিয়ে দেখলে খারাপ লাগে ঠিকই কিন্তু নিজের আনন্দের জন্য আমি নিজেকে দোষ দিতে পারছি না। এই দিনটার জন্য আমি অনেক অনেক পরিশ্রম করেছি। আর যেহেতু সবাই বাড়িতে, তাই অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ ‘শি’ দেখে ফেলেছে। ( হাসি)
[ আরও পড়ুন: এরকম শুটিং কোনও দিন করব ভাবিনি: অরিন্দম শীল ]
২০১৪ সালের পর এতটা সময় লাগল?
অদিতি: এর মধ্যে আমি অনেক বিজ্ঞাপন করেছি। পরিচালক সুজিত সরকারের সঙ্গেই তিনটে। এছাড়া দক্ষিণের ছবিও করেছি। আমি পপুলার ছবিতে সুযোগ পেতেই পারতাম। কিন্তু একটা ব্রেক নিয়েছিলাম ২০১৫ সালে। আমির খানের ছবি ‘দঙ্গল’-এর জন্য ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছে গিয়েছিলাম অডিশন দিয়ে। কিন্তু সেই সময়ে আমার পায়ে একটা চোট ছিল। মহারাষ্ট্রের হয়ে হান্ড্রেড-টু-হান্ড্রেড মিটার স্প্রিন্টারে অংশ নিয়েছিলাম। একটা হাঁটুর সার্জারি করার প্রয়োজন পড়ে। তিনমাস কিছু করা সম্ভব ছিল না। আমি জানতাম না যে শেষ পর্যন্ত আমি সিলেক্টেড হয়েছিলাম কিনা, কিন্তু আমাকে সরে আসতে হয়েছিল নিজে থেকেই।
ওহ তাই নাকি! ‘দঙ্গল’-এ কোন চরিত্রের জন্য অডিশন দিয়েছিলেন?
অদিতি: সেটা ঠিক বলতে পারব না। তবে অডিশনে আমাকে গীতার চরিত্রেই অভিনয় করতে বলা হয়েছিল।
বুঝতে পেরেছি। এই ওয়েব সিরিজে যখন প্রথম আপনাকে কল গার্লের পোশাকে দেখা যায়, তখন বেশ জড়তা ছিল। তারপর যেই আপনার ব্যকগ্রাউন্ড জানা যায়, তখন বোঝা যায় কেন এই জড়তা। আপনি নিজে ইম্প্রভাইস করেছেন নাকি পরিচালককেই ফলো করেছেন।
অদিতি: এই ক্রেডিট আমি নিজেকেই দেব। ভূমিকা পরদেশি এমন একজন যে খুব সাধারণ একটি মেয়ে। অল্প বয়েসে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না বলেই বর ছেড়ে দেয়। মা বোনকে নিয়ে তার সংসার। সেখানে হঠাৎ তাকে একটি আন্ডারকভার অপারেশনে বেশ্যা সেজে এক দুঁদে ক্রিমিনালকে (অভিনয়ে বিজয় বার্মা) ধরতে হবে। এই চরিত্রকে বোঝার জন্য ভূমিকার ব্যকগ্রাউন্ড নিয়ে ভেবেছি। এবং স্টাডি করেছি। ভূমিকা কীভাবে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে। তার এতদিনকার ঘুমিয়ে থাকা সেক্সুয়ালিটি কীভাবে জাগতে পারে এবং শেষ দৃশ্যে আমরা দেখি তার মধ্যেকার রাখঢাক সরিয়ে আসল মেয়েটা বেরিয়ে এসেছে।
এর জন্য কাউকে ফলো করেছেন?
অদিতি: সেভাবে বলতে গেলে বলব ভিলে পার্লের এক রেস্তোরার বাইরে কিছু মহিলা কনস্টেবলের কথা। ওখানে বেশ কিছু মহিলা পুলিশ থাকত। এমনিতে খুব সাধারণ, বসে গল্প করত। কিন্তু পার্কিংয়ে ঝামেলা সামলাতে সেই মেয়ের অন্য রূপ দেখেছি। ভূমিকাও তো এমনই এক সাধারণ মেয়ে।
‘গালি বয়’ খ্যাত বিজয় বার্মার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? আপনাদের মধ্যে বেশ ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে রয়েছে। শুধু তাই নয়, রয়েছে যৌন নির্যাতনের দৃশ্যও।
অদিতি: আমরা দুজনেই খুব নড়ে গিয়েছিলাম। আমাদের থেকেও বেশি নড়ে গিয়েছিল সেটের লোকজন। সবাই জানে আমি খুব হাসিখুশি মানুষ। সেখানে তেমন একজনের এতটা অপমান! আমি চেষ্টা করতাম নিজেকে চরিত্রের মধ্যে রাখতে। বাড়ি ফিরে স্নান করতাম ভাল করে। একেবারে ভিতরে নিয়ে নিলে নিজেরই ক্ষতি।
[ আরও পড়ুন: ‘জয়ার জন্মদিন মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ’, স্ত্রীর হয়ে অনুরাগীদের বার্তা অমিতাভের ]
বিশেষ করে হোটেলের মধ্যে যে দৃশ্য!
অদিতি: হ্যাঁ, বিজয় খুবই ভাল। ভীষণ সুইট। প্রত্যেকবার কিছু বলেই, সিন হয়ে গেলে সরি বলত। এও বলেছে ‘আজিব সা লগ রহা হ্যায় ইয়ার। ম্যায় ইয়ে ক্যায়া কর রাহা হু! তু ঠিক হ্যায় না ইয়ার?’ আমি বলতাম ‘তু টেনশন না লে, ম্যায় ঠিক হু, তু সিন কর।’ বিজয় খুবই হেল্পফুল অভিনেতা। আমরা একসঙ্গে ওর বাড়িতে বসে এই লাইনগুলো প্র্যাকটিস করেছি।
কখনও অসস্তি হয়নি ?
অদিতি: আমাদের টিমটা দুর্দান্ত। তবে মুম্বইয়ের রাস্তায় ওই অল্প পোশাকে শুট করতে দুই-এক দিন একটু অসুবিধে হয়েছে। রাস্তার লোকজন চলে এসে উলটোপাল্টা বলত। আমাদের ডিওপি খুব হেল্প করেছে।
এরপর আপনাকে কোন চরিত্রে দেখা যাবে? কী ধরনের কাজ করতে চান?
অদিতি: দেখুন চুল উড়িয়ে দেওয়া যে নায়িকার রোল সেটা আমি সহজেই পেয়ে যাবো। আমার চুল খুবই সুন্দর। কিন্তু আমি পারফরম্যান্স ওরিয়েন্টেড রোল করতে চাই। শুধুই সুন্দর মুখ হয়ে থাকতে চাই না। আই ওয়ান্ট টু চেঞ্জ দা ফেস অফ ইন্ডিয়ান সিনেমা। আই মাইট সাউন্ড ওভার কনফিডেন্ট বাট আই অ্যাম ইয়ং অ্যান্ড আই অ্যাম লুকিং ফরওয়ার্ড টু ডু ইট। এরপর প্রকাশ ঝা পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘আশ্রম’-এ আমাকে দেখতে পাবেন। সম্প্রতি এয়ার হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন কবে কী হবে জানি না। এই সিরিজেও আমার চরিত্র খুব স্ট্রং। একজন উনিশ বছর বয়েসি মেয়ের চরিত্রে আমাকে দেখা যাবে। ভাল হয়েছে কাজটা সবাই বলছে। আমিও জান প্রাণ দিয়ে ব্যাটিং করেছি বলতে পারেন।
The post ‘শি’ খ্যাত অদিতি এবার প্রকাশ ঝায়ের ওয়েব সিরিজে appeared first on Sangbad Pratidin.