সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় থাকা মানেই তো শুধু বন্যপ্রাণ রক্ষা কিংবা বিপদ থেকে রক্ষায় নিরন্তর সংগ্রাম নয়। সেখানকার বাসিন্দাদেরও তো জীবনে একটু আলো, একটু আনন্দের ছোঁয়া আসবেই। অন্তত সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় উৎসবের দিনগুলোও যেন ওদের কাছে ফিকে, ঠিক আর পাঁচটা দিনের মতো। তারউপর এ বছর আবার জোড়া বিপর্যয়। করোনা (Coronavirus) এবং আমফান (Amphan)। ঘরের নিরাপদ আশ্রয়টুকুও উড়ে গিয়েছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে। জঙ্গলের বিপদ যেন ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে। এই অবস্থায় ওদের ভরসা দিতে, জীবন সংগ্রামের শরিক হতে বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যঘ্র সংরক্ষণ সংস্থা ‘শের’। পুজোর আগে সুন্দরবন-সহ তিন জেলার প্রত্যন্ত জঙ্গল এলাকার প্রায় আড়াই হাজার বাসিন্দার হাতে তুলে দিয়েছে নতুন জামাকাপড়।
সুন্দরবন, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় যাদের বসবাস, তাদের সবসময়েই কোনও না কোনও বিপদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। জঙ্গলমহলে প্রায়শয়ই হাতির উপদ্রব। তাদের তাণ্ডব সামলে দিন কাটাতে হয়। বাঘ সংরক্ষণে লাগাতার নানা কাজের পাশাপাশি ‘শের’ (SHER) এই মানুষজনের জীবনেও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলে। বরাবরই এঁদের নিরাপত্তার দিকে নজর রয়েছে এই সংস্থার। কারণ, ‘শের’ মনে করে যে জঙ্গল লাগোয়া এলাকার মানুষজনই সে অর্থে জঙ্গলের অভিভাবকসম। তাঁরাই বন্যপ্রাণের ভয় এড়িয়ে তাদের সঙ্গে রেখে সহাবস্থানের পক্ষে। তাই তাঁরা ভাল না থাকলে, জঙ্গলও ভাল থাকবে না। বছরের নানা সময়ে এই জঙ্গলের বাসিন্দাদের সাহায্যার্থে তাই হাত বাড়িয়ে দেয় ‘শের’। এই তো, আমফান পরবর্তী সুন্দরবনের অসহায় মানুষজনকেও খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি স্যানিটাইজার, মাস্ক, সাবান, গ্যাস স্টোভ-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় একাধিক জিনিস দিয়ে সাহায্য করেছিল।
[আরও পড়ুন: খাঁটি বাঙালিয়ানা! ধুতি-পাঞ্জাবি পরে মহাষষ্ঠীতে ভারচুয়াল মাতৃবন্দনা করবেন মোদি]
গত ৫ বছর ধরে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোতেও (Durga Puja) উপহারের ডালি নিয়ে ‘শের’-এর সদস্যরা হাজির হয়ে যান জঙ্গল সংলগ্ন প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে। ছোট থেকে বড় সকলের হাতে তুলে দেন নতুন জামা, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। তবে এবছর হারানোর অঙ্কও তো বেশি এসব এলাকার বাসিন্দাদের। তাই ‘শের’-এর উপহারও খানিকটা বেশি।
[আরও পড়ুন: বিশ্বাসে মিলায় বস্তু! ভাঙন রুখতে ‘মা পদ্মা’র পুজোর আয়োজন মুর্শিদাবাদের এই গ্রামে]
৩ থেকে ৯ বছর বয়সি দরিদ্র শিশুদের জন্য জামা, মহিলাদের জন্য হ্যান্ডলুমের শাড়ি আর পুরুষদের জন্য ধুতির প্যাকেট হাতে নিয়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপস্থিত হন সংস্থার সদস্যরা। পাশাপাশি হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বনাঞ্চলের ছোট, বড়দের মধ্যেও নতুন পোশাক বিতরণ করা হয়। ‘শের’-এর কর্ণধার জয়দীপ কুণ্ডু নিজে তাদের হাতে উপহার তুলে দেন। সবমিলিয়ে এবছ প্রায় ২৪০০ জনকে পুজোর আগে নতুন বস্ত্র উপহার দিল ব্যঘ্র সংরক্ষণ সংস্থাটি।
গোটা পরিকল্পনা ‘শের’-এর মুখ্য উপদেষ্টা পরিচালক-অভিনেতা অরিন্দম শীলের। উপহার বিতরণে সময় উপস্থিত ছিলেন তিনিও। এছাড়াও ছিলেন সুন্দরবনের ব্যঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস ও রেঞ্জ অফিসার বিপ্লব ভৌমিক। এভাবেই বনাঞ্চলের বাসিন্দাদের কাছেও পুজোর আনন্দ উপভোগ্য করে তুললেন তাঁরা সকলে।