সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ‘আচ্ছা, মানবতা বড়, না জাত-ধর্ম? রক্তের রং তো তোমারও লাল। আমারও।’ মুক্তিদেবী এবং তাঁর সাধের ‘হুলোবেড়াল’ থুড়ি তারেকেরও তো রক্তের রং একই। কিন্তু তার পরিচয়, সে তারেক আলি। আর প্রবীণ ভদ্রমহিলা যিনি গোবিন্দধামের কর্ত্রী যিনি স্বাধীনচেতা, মুক্তমনা, সাহিত্যমনস্কা, একাধারে যুক্তিবাদী এবং সময় বিশেষে প্রতিবাদীও বটে, তিনি মুক্তিদেবী। আদ্যোপান্ত গোবিন্দভক্ত। বাড়িতে রাধাগোবিন্দের বিগ্রহ রয়েছে। নিত্যপুজো হয়। আর জন্মাষ্টমী হলে তো কোনও কথাই নেই। এলাহি আয়োজন। তাঁরই ঝলক মিলল শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায়ের ‘গোত্র’র ট্রেলারে। বাস্তব জীবনের কাহিনি মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি হয়েছে ‘গোত্র’। যে গল্প শিবপ্রসাদের নিজের জীবনের।
[আরও পড়ুন: টানা ১৮ ঘণ্টা শুটিং, সেটেই জ্ঞান হারালেন বরুণ ধাওয়ান ]
দুর্গাপুজো হোক কিংবা সত্যনারায়ণ পুজো, ওদিকে ইদ হোক বা মহরম, সমাজে কিন্তু এখনও ভাগ করা থাকে, কারা কোন পুজো করবে আর কোন উৎসবে অংশগ্রহণ করবে। মন্দির-মাজারে তাই ধর্ম নিরপেক্ষভাবে প্রার্থনা করতে যাওয়ার উপর একটা অলিখিত বিধিনিষেধ রয়েই গিয়েছে। তারেকের মজহব কিংবা মুক্তিদেবীর ধর্ম, কোনটা শেখায় আমাদের মানবতাকে পৃথক করতে? সওয়াল করেছেন পরিচালকজুটি শিবপ্রসাদ এবং নন্দিতা। কেন একটা মুসলমান ঘরের ছেলে হিন্দুর বাড়িতে জন্মাষ্টমীর দিন গোবিন্দভোগ পরিবেশন করতে পারবে না? সমাজের কাছে তা কেন গ্রহণযোগ্য হবে না! এ সমাজ কী মেনে নেবে মুক্তিরাণীর ছেলে হিসেবে তারেক আলিকে? প্রশ্ন তুলেছে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ‘গোত্র’। “তুমি শুধু আমার ‘তারক’। আলি না গুহ, আমি জানতে চাই না।” গোবিন্দধামে একজন যখন প্রহরে প্রহরে নমাজ পড়ে আরেকজন তখন তিন বেলা রাধামাধবকে ফুল-জল দেন। একই ছাদের তলায় তথাকথিত ভিন্ন গোত্রের মা-ছেলের কাহিনি ‘গোত্র’।
‘গোত্র’ই হয়তো সমাজকে শেখাবে একসঙ্গে বসে সিন্নি-খই এবং শিমুই পায়েস লেহনের স্বাদ কেমন৷
তা মুক্তিদেবী এবং তারেকের গল্প মাথায় এল কীভাবে? এই গল্প শিবপ্রসাদের মায়ের এবং তাঁর বাড়ির পরিচারকের। জানালেন পরিচালক শিবপ্রসাদ নিজেই। আর জানেন এই পরিচারকের খোঁজ কোথা থেকে পেয়েছিলেন শিবপ্রসাদ? নাইজেলের কাছ থেকে। নাইজেলের নিজস্ব একটি সংস্থা রয়েছে। যা জেল থেকে মুক্তি পাওয়া কারাবাসীদের নিয়ে কাজ করে। নাইজেলের সেই সংস্থা থেকেই শিবপ্রসাদ নিজের মায়ের দেখাশোনা করার জন্য ও বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে নিযুক্ত করেন সেই ছেলেটিকে। আর তাঁর চরিত্রটিকেই ‘গোত্র’তে তারেক হিসেবে চিত্রায়ণ করেন তিনি। তারেকের গেট টপকে যাওয়া থেকে সূচিবায়ুগ্রস্ত মুক্তিদেবীর চরিত্র সবই শিবপ্রসাদের রিয়েল লাইফের অনুপ্রেরণা। এ গল্প একান্তই শিবপ্রসাদের নিজের। প্রসঙ্গত, এর আগে ‘গোত্র’র সঙ্গে ‘সাঁঝবাতি’র গল্পের মিল থাকায় টলিউডের অন্দরে প্রযোজক-প্রযোজকে বেজায় চাপানউতোর হয়েছে৷
[আরও পড়ুন: মদ্যপ অবস্থায় বান্ধবীকে মারধরের অভিযোগ, পলাতক অভিনেতা লোকেশ ঘোষ]
ফেরা যাক, ‘গোত্র’র ট্রেলার প্রসঙ্গে। প্রোমোটারের চরিত্রে দেখা যাবে খরাজ মুখোপাধ্যায়কে। মুক্তিদেবীর সাধের গোবিন্দধামে তাঁর নজর পড়ে। একসময়ে বিশ্বাস এবং বিশ্বাসহীনতার মাঝে ঝুলতে থাকে তারেক। অতীতের কালো ছায়া থেকে বেরিয়ে মুক্তিদেবীর গোবিন্দধাম, তাঁর বিশ্বাসের প্রহরী হিসেবে কি মান রাখতে পারবে তারেক ওরফে নাইজেল? বাকি গল্প জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে জন্মাষ্টমী অবধি। তবে এই জন্মাষ্টমীতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোবিন্দধামের গল্প দেখার নিমন্ত্রণ কিন্তু ইতিমধ্যেই আপনাদের দিয়ে দিয়েছেন গৃহকর্ত্রী মুক্তিদেবী। কে বলতে পারে ‘গোত্র’ই হয়তো সমাজকে শেখাবে একসঙ্গে বসে সিন্নি-খই এবং শিমুই পায়েস লেহনের স্বাদ কেমন৷
The post অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, ‘গোত্র’তে সেই গল্পই তুলে ধরেছেন পরিচালক শিবপ্রসাদ appeared first on Sangbad Pratidin.