সন্দীপ্তা ভঞ্জ: লকডাউনে এই গৃহবন্দি জীবন আমাদের কত কিছুই না শিখিয়েছে! শিখিয়েছে পারস্পারিক বোঝাপড়া। ব্যস্ত জীবনে যেদিকে আমরা তাকানোর সময় হয়তো পেতাম না ছোট ছোট ভুল-ত্রুটিগুলো আমাদের নজর এড়িয়ে যেত, সেই অগোছালো ‘পাজেল’গুলোকেই যেন একসূত্রে বেঁধে দিয়েছে এই গৃহবন্দি জীবন। সম্পর্কের সূক্ষ্ম খাঁজগুলোয় জমে থাকা ধুলো ঝেড়ে-মুছে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। পুরনো রাগ-বিদ্বেষ ভুলে, পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব মিটিয়ে একসঙ্গে ডাইনিং টেবিলে গোটা পরিবারকে নিয়ে এসেছে। এই বা কম কী! কিন্তু আদতেও কি মানুষের মনের পরিবর্তন হচ্ছে? নাকি পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝে চলার জন্য শুধু একটা ভান? প্রশ্ন তুলেছে শিলাদিত্য মৌলিকের নতুন ছবি ‘বারান্দা’। মানুষের মধ্যে পরিবর্তন যতই আসুক না কেন, মানসিকতা যে সেই একইরকম থেকে যায়, তারই এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরল এই শর্ট ফিল্ম।
ফের এক ভিন্ন স্বাদের ছবি নিয়ে ফের হাজির পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক। দুই ভাইয়ের সম্পর্ক, মান-অভিমানই এই শর্ট ফিল্মের প্রতিপাদ্য বিষয়। দিন কয়েক আগেই মুক্তি পেয়েছিল শিলাদিত্যর ‘একটি তারা’। ভাইরাস কবলিত পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত এক নায়িকার গল্প নিয়ে তৈরি করেছিলেন সেই ছবি। ‘একটি তারা’র বিষয়বস্তু যে দর্শকমনে বেশ সাড়াও ফেলেছিল, তা বলাই বাহুল্য। দিন কয়েক কাটতেই আবারও সিনেপ্রেমীদের জন্য চমৎকার এক ছবি নিয়ে এলেন পরিচালক। ১১ মিনিটের এই শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেন সাহেব চট্টোপাধ্যায় এবং ইশান মজুমদার। দুই ভাইয়ের ফোনালাপকে আবর্তিত করেই এগিয়েছে গল্প। তাদের পরস্পরের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে সেই যাবতীয় মান-অভিমান।
দুই ভাইয়ের ঝগড়ার মূল কারণ তাদের পৈতৃক বাড়ির বারান্দা। ছোট ভাইয়ের প্রিয় বারান্দা দিতে নারাজ দাদা। যে কারণে অশান্তি এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে অতীতে যে আইনের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাদের। যার জেরে দুই ভাইয়ের কথা বলা বন্ধ। এমনকী কেউ কারও মুখ পর্যন্ত দেখে না। কিন্তু হঠাৎ এক লকডাউনের সকালে ছোট ভাই ফোন করে বসে দাদাকে। সেখান থেকেই গল্পের শুরু। কথা বলতে বলতে দুজনেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। শৈশবের স্মৃতি রোমন্থনে মগ্ন হয়ে ওঠে তারা। হঠাৎ যখন মনে হয় পুরনো সম্পর্ক জোড়া লাগল বলে, তখনই গল্পে টুইস্ট আসে। ভাই দাদার কাছে একটা সিগারেটের আবদার করে বসে। নানা অছিলায় এবারেও দাদা সিগারেট দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। ব্যস! ফের সেই ‘পুনঃমূষিক ভবঃ’ গোছের ব্যাপার। কথায় কথায় ঝগড়া পৌঁছয় চরমে। পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার জন্য সম্পর্ক খুন হওয়া কিংবা তিক্ততা আসার মতো এমন ঘটনা কিন্তু বাস্তবে আমাদের চারপাশে প্রায়ই দেখা যায়।
[আরও পড়ুন: সৌমিত্র-সাবিত্রীর সঙ্গে একফ্রেমে রুদ্রনীল, মুক্তি পেল ভিন্ন স্বাদের ছোট ছবি ‘কেয়ার অফ চ্যাটার্জি’]
শিলাদিত্যর কথায়, “মানুষের মধ্যেকার স্বার্থপরতা কখনোই যায় না। মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো খুবই কঠিন। মানুষ মুখে যা বলে আর মনে যা থাকে, অনেকসময়েই তাতে কোনও মিল থাকে না। আমার মতে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্কের মধ্যে বিভেদরেখা টানার জন্যে শুধুমাত্র একটা বারান্দা যেমন তুচ্ছ ব্যাপার, ঠিক ততটাই তুচ্ছ একটা সিগারেটের জন্য বাক-বিতণ্ডায় জড়ানো।” মানুষের এই স্বার্থপর রূপ তুলে ধরতেই প্রতীকী হিসেবে সিনেমায় দুই ভাইয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন শিলাদিত্য। প্রবাসী বাঙালিদের কাছেও ‘বারান্দা’ ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছে। সম্পাদনা করেছেন অনির্বাণ মাইতি। মিউজিকের দায়িত্বে বিশাখ জ্যোতি।
[আরও পড়ুন: ‘খাবারের কোনও জাত-ধর্ম হয় না’, রমজানে দুস্থদের খাবার বিলি করছেন অভিনেত্রী সানা খান]
The post লকডাউনের জেরে মানসিকতার পরিবর্তন কি আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন তুলল পরিচালক শিলাদিত্যর ‘বারান্দা’ appeared first on Sangbad Pratidin.