সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়: গোয়েন্দার চরিত্রে রয়েছেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী (Chiranjit Chakraborty) এবং সংগীত পরিচালকের চরিত্রে রয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। স্ত্রী মেঘার চরিত্রে রয়েছেন অরুণিমা ঘোষ। চিরঞ্জিৎ এবং শাশ্বত দু’জনেই অসাধারণ এবং অরুণিমা ঘোষের অভিনয় এই ছবিতে একটি বড় পাওনা। ২০ বছরের বড় অত্যাচারী স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের রসায়ন- প্রবল ঘৃণা এবং রাগ, আবার একই সঙ্গে প্রচ্ছন্ন ভালবাসা, যা ফুটে উঠেছে অরুণিমার অভিনয়ে ছোট ছোট অভিব্যক্তির মধ্যে। অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রে দর্শনা বণিক, বরুণ চন্দ, ডলি বসু, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী প্রমুখেরাও বেশ মানানসই। ছবির দৃশ্যায়নে পাহাড়ি নদীর ধারে পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হওয়ার দৃশ্যটি মন ছুঁয়ে যায়।
সংগীত পরিচালকের আকস্মিক মৃত্যু দিয়েই এই গল্পের শুরু এবং সেই সূত্রে গোয়েন্দা চন্দ্রকান্ত সেনের আবির্ভাব। তারপর ক্রমান্বয়ে পরতে পরতে রহস্য উন্মোচন। চলচ্চিত্রের মূল বুনিয়াদ চিত্রনাট্যের প্রসঙ্গে বলতেই হবে যে পরিচালক কোথাও খামতি রাখেননি। সাধারণত থ্রিলার ছবিতে ঘটনা পরম্পরা এবং যুক্তি এই দুটিকে সমান্তরালভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে পরিচালকদের মুন্সিয়ানা। গল্প যত এগোয় প্রত্যেকটি চরিত্র স্পষ্ট হতে থাকে। যখন বদরাগী, অত্যাচারী সংগীত পরিচালক স্ত্রীকে বলে ওঠেন, ‘কেন আমার উপর কি একটু অভিমান করা যায় না’, তখন মানুষের চরিত্রের মধ্য়ে বিচিত্র রং, স্ববিরোধের দিকগুলো সামনে চলে আসে। ‘আ স্ক্য়ান্ডেল ইন বোহেমিয়া’ নামক কাহিনিতে শার্লক হোমস এক ভদ্র মহিলার বুদ্ধির কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল। মহিলার বুদ্ধির ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে গিয়েছিল স্বাভাবিক ভাবেই। অয়ন চক্রবর্তী পরিচালিত ‘ষড়রিপু ২ জতুগৃহ’ (Shororipu 2) ছবিতে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন একজন চূড়ান্ত কাজ পাগল সংগীত পরিচালক এবং তাঁর পরিবার।
[আরও পড়ুন: রূপকথার মোড়কে বর্তমান সময়ের প্রতিফলন ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’]
পরিবার বলতে তাঁর স্ত্রী মেঘা যাঁর সঙ্গে গোয়েন্দা চন্দ্রকান্ত সেনের কথোপকথনের সূত্র ধরে ছবির গল্প এগোতে থাকে। সেখানে ক্রমশ এক আত্মসম্মান, জীবনবোধ, বিদ্রোহ, সমস্ত কিছু পরিষ্কার হয়ে ওঠে চন্দ্রকান্তের সামনে।
ষড়রিপু ২-এর সংগীত পরিচালক রূপম ইসলাম। রূপম তাঁর পরিচিত ঘরানার বাইরে গিয়ে ছবির গানগুলো কম্পোজ করেছেন। গানে কোমল পর্দার ব্যবহার অন্য়মাত্রা দিয়েছে। সব মিলিয়ে ‘ষড়রিপু ২ জতুগৃহ’ সত্যিই দেখার মতো একটি ছবি।
তবে গোয়েন্দার অ্যাসিস্ট্যান্ট মেয়েটির সব কথায় ফোড়ন কাটার ব্যাপারটা চিত্রনাট্য ও ছবির মূল মেজাজটা কোথাও কোথাও লঘু করে দিয়েছে। এ বিষয়ে পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী যদি একটু খেয়াল রাখতেন, তাহলে বড় ভাল হত।