সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বনৌষধি গ্রাম তৈরি থেকে যোগাসনের প্রশিক্ষণ। মাস্ক, স্যানিটাইজার বানানো থেকে লোকশিল্প ও অ্যাপের মাধ্যমে ধারাবাহিক সচেতনতার প্রচার। সেইসঙ্গে পুণর্গঠনে চাষাবাদের কাজে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কৃষিকাজের খুঁটিনাটি তুলে ধরে জীবন-জীবিকাকে সচল রাখা। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে ক্লাসের পাঠ দান। একসঙ্গে একাধিক কাজ। বিশ্বজুড়ে মহামারী মোকাবিলায় ‘করোনা প্রতিরোধক গ্রাম’ গড়ে জাতীয়
স্বীকৃতি পেল বাংলার প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয় সিধো-কানহো-বিরসা।
ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া ২৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টে অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মত বাংলার এই বিশ্ববিদ্যালয়ও জায়গা করে নিয়েছে। তাদের সায়েন্স-টেকনোলজি
এন্ড ইনোভেশন (Science-Technology and Innovation) হাবের নানা কাজ ওই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। যাকে করোনা মহামারী নিকেশে বড় সাফল্য হিসাবেই দেখছে বিপ্লবীদের নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য দীপক কর বলেন, “এটা জাতীয় স্বীকৃতি। ভারত সরকারের বি়জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের রিপোর্টে ১৯ থেকে ২৪ পৃষ্ঠায় করোনা মোকাবিলায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাজের কথা উল্লেখ রয়েছে।”
[আরও পডুন: উলটপুরাণ! বাংলায় ভরসা নেই, হায়দরাবাদেই কাজে ফিরছেন শ্রমিকরা]
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা মোকাবিলায় মার্চ থেকে মে তিন মাসের প্রেক্ষিতে যা কাজ হয়েছে তার ভিত্তিতেই কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের ওই রিপোর্ট। ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের সায়েন্স এন্ড
টেকনোলজি ইন্টারভেনশন একটি প্রকল্প রয়েছে। যেখানে সমগ্র পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় ওই প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পায়।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের বিধি অনুযায়ী তফসিলি জাতি ও উপজাতি গ্রামগুলিতে এই কাজ করছে। করোনা মোকাবিলায় এই প্রকল্পের কাজ চলছে পুরুলিয়ার ১২টি ব্লকের বাছাই করা ২০টি গ্রামে। সেখানে সচেতনতা, অভ্যাস, খাদ্যাভাস, ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার শিখিয়ে ‘ইমিউন ভিলেজ’, ‘বনৌষধি গাঁ’ বা ‘নিম-গুলঞ্চ গ্রাম’ গড়ে তোলা হচ্ছে। এককথায় ‘করোনা প্রতিরোধক গ্রাম।’ কেমন সেই গ্রাম? আদা, হলুদ, তুলসীর মত ভেষজ উদ্ভিদের বীজ বিলি সেইসঙ্গে গোলমরিচ, দারচিনি, লবঙ্গ চারা প্রদান করে গ্রামে গ্রামে রোপণ করা হয়েছে। প্রাণায়াম, সূর্যপ্রণাম-সহ নানা যোগাসনের পাঠ দেওয়া চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নিজেরাই নয় গ্রামের মানুষজনকে মাস্ক, স্যানিটাইজার তৈরির কাজে যুক্ত করেছে।
[আরও পডুন: দুর্নীতির অভিযোগে বিক্ষোভের জের, বাতিল চুঁচুড়া পুরসভার নিয়োগ প্রক্রিয়া]
আবার এই পরিস্থিতিতেও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সচল রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন। অ্যাপের মাধ্যমে চলছে চাষাবাদের পাঠ দান। এছাড়া ত্রাণ বিলি, কমিউনিটি কিচেন-সহ নানান সামাজিক কাজও হয়েছে। সবমিলিয়ে, করোনা আবহে সবরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা বজায় রেখে মহামারী মোকাবিলায় নতুন পাঠ দিল প্রান্তিক সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়।
ছবি: সুনীতা সিং।
The post করোনা মোকাবিলায় একসঙ্গে একাধিক পদক্ষেপ, জাতীয় স্বীকৃতি লাভ পুরুলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের appeared first on Sangbad Pratidin.