shono
Advertisement
Mahananda

'বিষকন্যা' মহানন্দার জল সরবরাহের পরামর্শ কার ছিল? প্রশ্নের মুখে শিলিগুড়ির মেয়র

ভারত সরকারের দেওয়া রিপোর্টে দেশের ৩৫১টি নদীর মধ্যে অন্যতম দূষিত নদী মহানন্দা।
Published By: Subhankar PatraPosted: 02:38 PM Jun 01, 2024Updated: 02:38 PM Jun 01, 2024

স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি : 'বিষকন্যা' মহানন্দার জল মারাত্মক 'কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া'-র আঁতুড় ঘর। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষায় কয়েক বছর আগেই তথ্য সামনে এসেছিল, এই নদীর জল ছুঁলেই বিপদ। চর্মরোগ তো বটেই, হতে পারে পেটের ভয়াবহ সংক্রমণ। সেই বিপজ্জনক নদীর জল পানের জন্য সরবরাহের পরামর্শ পুরনিগমকে কে দিয়েছিল, এবার সেটাই জানতে চাইছে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুক্রবার সন্ধ্যায় সভা করে তারা ওই দাবি তুলেছে। তাদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে মহানন্দার জল পান করে অনেকে অসুস্থ হয়েছেন। এখন কে নেবে এই দায়!

Advertisement

মহানন্দা (Mahananda River) যে সাক্ষাৎ বিষকন্যা নতুন কথা নয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ২০২১ সালে লোকসভায় মারাত্মক দূষণের তালিকায় দেশে কত নদী রয়েছে জানতে চেয়েছিলেন রাজস্থানের (Rajasthan) সাংসদ নিহালচন্দ্র চৌহান। জবাবে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখওয়াত (Gajendra Singh Shekhawat) যে ৩৫১টি নদীর নাম উল্লেখ করেন। তার মধ্যে রাজ্যের ১৭টি নদী ছিলো। ওই নদীগুলোর মধ্যে মহানন্দা-সহ উত্তরের চারটি নদীর নাম আছে। স্বভাবতই মহানন্দা (Mahananda River) যে মারাত্মক দূষিত নদী যারা সামান্য খোঁজ রাখেন প্রত্যেকের জানা। এই নদীর জল এতটাই দূষিত যে স্নানেরও অযোগ্য বলে অনেক আগে জানিয়েছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা।

কারণ, শিলিগুড়ির (Siliguri)  চম্পাসারি ও ফুলবাড়ি এলাকা থেকে সংগ্রহ করা লিটার প্রতি মহানন্দার জলের নমুনা পরীক্ষায় ৪৮ হাজার একক মারণ কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার খোঁজ পেয়েছিলেন তাঁরা। অথচ লিটার প্রতি জলে ১০ একক কলিফর্মের অস্তিত্ব স্বাভাবিক মনে করা হয়। এছাড়াও রয়েছে উদ্বেগজনক অম্লতা এবং উষ্ণতার মাত্রা। শিলিগুড়ি শহরের লাইফ লাইন ওই নদীকে রক্ষার জন্য মহানন্দা বাঁচাও কমিটির সাধারণ সম্পাদিকা জ্যোৎস্না আগরওয়াল ২০২১ সালের ১৯ জুন 'ন্যাশনাল গ্রিণ ট্রাইব্যুনাল'-এর দ্বারস্থ হন।

[আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় ওভারহেডের তার ছিঁড়ে বিপত্তি, জখম ২, দীর্ঘক্ষণ ব্যাহত ট্রেন চলাচল]

যদিও এর অনেক আগেই ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে বামফ্রন্ট সরকার মহানন্দা নদী দূষণমুক্ত করতে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছিল। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। সেই টাকায় এসজেডিএ নদীর পাশে ভূগর্ভস্থ নালা তৈরি করে শহরের নিকাশির জল শহরের বাইরে নৌকাঘাট এলাকায় দুটি পুকুরে ফেলার ব্যবস্থা করে। সেখানে জল শোধনের পর নদীতে ফেলার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি মাঝপথে থমকে যায়।

'হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন'-এর কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু প্রশ্ন তুলেছেন এসব ঘটনা পুর নিগমের অজানা নয়। কিন্তু এর পরও তাদের ওই বিষাক্ত নদীর জল পানীয় হিসেবে শহরে সরবরাহের পরামর্শ কে দিলেন? পুর নিগম সব জেনেও পরামর্শ মেনে নিলো কেন? তিনি অভিযোগ করেন, প্রায় তিন দশক থেকে মহানন্দাকে দূষণমুক্ত করার দাবিতে পরিবেশপ্রেমীদের আন্দোলন চলছে। শহরে একাধিকবার অবস্থান আন্দোলন হয়েছে। সেসবে যে পুর নিগমের কর্তারা কর্ণপাত করেননি বিষাক্ত জল পানের জন্য সরবরাহের সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট। শুক্রবার হিলকার্ট রোডে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় ঘুরেফিরে উঠেছে ওই অভিযোগ। অনিমেষবাবু বলেন, "কে ওই সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিয়েছেন সেটা মানুষ জানতে চায়। পাশাপাশি এটাও জানাতে হবে তাঁর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"

[আরও পড়ুন: ডোমকলে তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়িতে ব্যাপক বোমাবাজি, নেপথ্যে বাম-কংগ্রেস!]

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাত হাজার ফুট উঁচু কার্শিয়াংয়ের মহালদিরাম পাহাড়ের পাগলাঝোরা থেকে উৎপন্ন হয়ে মহানন্দা সমতলে নেমেছে। শিলিগুড়ির প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করে তেতুলিয়া দিয়ে বাংলাদেশ ছুয়ে ফের ভারতে প্রবেশ করেছে। উৎসের আশপাশের জল স্বচ্ছ থাকলেও ৩৬০ কিলোমিটার যাত্রাপথের বেশিটাই বিষাক্ত। জঙ্গল ভেদ করে শিলিগুড়িতে নেমে নদী মারাত্মকভাবে দূষিত হয়েছে। এখানে শহরের ৯৪টি নিকাশি নালার জল মহানন্দায় মিশেছে। রয়েছে নদীর দু'পাশের খাটাল, শুয়োরের ফার্মের বর্জ্য। বিভিন্ন বস্তি ও কারখানার বর্জ্য ফেলা হয় নদীতে। এছাড়াও চলে শৌচকর্ম। ওই কারণে অনেকদিন থেকে মহানন্দার জল স্নানের অযোগ্য হয়েছে। শিলিগুড়ি দিয়ে বয়ে চলা নদী সম্পর্কে এমনই তথ্য উঠে এসেছে এক সমীক্ষা রিপোর্টে। সেখানে জানানো হয়েছে নদীর জল ছুঁলেই বিপদ। চর্মরোগ অনিবার্য। পেটে গেলে ভয়াবহ সংক্রমণ হতে পারে। কয়েকদিন পুর নিগমের সরবরাহ করা জল পান করে ঠিক সেটাই হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বস্তি এলাকায় পেটের রোগ ছড়িয়েছে। মহানন্দাপাড়ের কুমোরটুলি ও গভমেন্ট শ মিল এলাকার বাসিন্দারা জানান, টাইম কলের জলে দুর্গন্ধ পেয়েই তাঁদের সন্দেহ হয়। কিন্তু তার আগেই বাড়ির লোকজন পান করে পেটের রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যদিও ওই বিষয়ে পুর নিগমের কর্তাদের বক্তব্য মেলেনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • 'বিষকন্যা' মহানন্দার জল মারাত্মক 'কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া'-র আঁতুড় ঘর।
  • দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষায় কয়েক বছর আগেই তথ্য সামনে এসেছিল, এই নদীর জল ছুঁলেই বিপদ।
  • সেই বিপজ্জনক নদীর জল পানের জন্য সরবরাহের পরামর্শ পুরনিগমকে কে দিয়েছিল, এবার সেটাই জানতে চাইছে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
Advertisement