বন্ড মার্কেটে সরকারি সংস্থা প্রধান খেলোয়াড়দের মধ্যে অগ্রণী। কিন্তু যদি স্বল্প পুঁজি লগ্নি করতে হয়, তাহলে এগোতে হবে সতর্কভাবে। বন্ড মার্কেটে আদর্শ বিচরণের রূপরেখা জানালেন সোমকান্তি সরকার
ইনভেস্টমেন্টের ধরন-ধারণ যে পাল্টে যাচ্ছে তা আর নতুনভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। মার্কেটের যে দিকে নজর দেবেন, পরিবর্তন কম-বেশি চোখে পড়বেই। এখন অনেক নতুন লগ্নিকারী বাজারে আসছেন, পুরনো মানুষরা তাঁদের অভ্যাস পাল্টে অভিনব প্রোডাক্ট বা পরিষেবা নেওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠছেন, এও দেখতে পারছি। স্টক বা ইকুইটি ফান্ড নিয়ে তাঁদের আগ্রহ তো পরিষ্কার, তবে ইদানিং নানা কারণে বন্ডের ক্ষেত্রটি বিস্তৃত হচ্ছে, সুদ-সংক্রান্ত চিন্তা থাকা সত্বেও। বন্ড বা অন্য ঋণপত্রের মাধ্যমে পোর্টফোলিওতে ভিন্নতর অ্যাসেট আনা, অর্থাৎ ডাইভারসিফেশনের পথ প্রশস্ত করে তোলা, এও একটি বড় উদ্দেশ্য আজকের দিনে। এই নিয়েই আমার লেখা।
[আরও পড়ুন: কিনে ফেলুন স্বপ্নের গাড়ি, আকর্ষণীয় অফারে কার লোন দিচ্ছে পিএনবি]
ফিক্সড-ইনকামের বাজার, প্রথমেই বলে রাখি, খুব গভীর এবং বিশাল-মাপের। হ্যাঁ, প্রাতিষ্ঠানিক ইনভেস্টরগণ (ব্যাংক, ইনসিওরেন্স সংস্থা, ফান্ড হাউস ইত্যাদি) এখানে বিরাট ভূমিকা পালন করে। তার তুলনায় রিটেল লগ্নিকারীর অংশগ্রহণ সীমিত বললেই চলে। তাও ছোট বিনিয়োগকারী যেন কখনওই না ভাবেন তিনি এই বাজারে ব্রাত্য। তবে ঠিকই ধরেছেন, স্বল্প পুঁজি যদি তাঁকে বিনিয়োগ করতেই হয়, কিছু সাধারণ কথা না জেনে নিলেই নয়। বৃহদাকার প্রাতিষ্ঠানিক ইনভেস্টর তো উন্নতমানের গবেষণা সম্বল করে বিপুল সম্পদ বন্ড মার্কেটে কাজে লাগাতে পারেন, তুলনায় ক্ষুদ্র লগ্নিকারী যেন খুব সাবধানে পা ফেলেন।
এবার বলে রাখি যে, রিটার্ন সম্বন্ধে একটি আবছা ধারণা কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে পাওয়া সম্ভব হয়, কারণ, বন্ড ইল্ড বা সেই জাতীয় কিছু পরিসংখ্যানের হদিশ পাওয়া তুলনায় সোজা। তবে, সর্বদা তেমন হয় না – বহু সময় মার্কেট গভীরভাবে বিস্মিত করে তোলে পোড় খাওয়া লগ্নিকারীদের। এও জেনে রাখুন, সরকার বা সরকারি সংস্থা বন্ড মার্কেটে প্রধান ‘প্লেয়ার’দের মধ্যে অগ্রণী। এদেশের সবচেয়ে বড় “বরোয়ার” সরকার। সরকারি সংস্থাগুলি অনেকাংশে বিরাট ভূমিকা নিতে সক্ষম এই বাজারে।
দু’টি কথা মনে রাখুন, সুবিধা হবে।
(ক) নিয়মিত ফিক্সড রিটার্ন (সুদ) পাওয়া সম্ভব।
(খ) প্রিন্সিপাল ফেরত একটি প্রধান শর্ত
তবে, এই স্থায়ী বাইনারির বাইরে যা বাকি থাকে তা হল ঋণপত্রের ট্রেডিং, যা সেকেন্ডারি মার্কেটে হয়ে থাকে। তবে তার ব্যাপারে বহু ধরনের নীতি আছে, নিয়মবলীর বহর কিছু কম নয়। তবে বন্ড ইনভেস্টর সেখানেও সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ করে রিটার্ন পেতে পারেন। এক্ষেত্রে এও জেনে রাখা ভাল যে রেটিং খুব জরুরি একটি বিষয়। উচ্চ মানের রেটিং-যুক্ত বন্ডের একটা আলাদা স্থান আছে এবং এক অর্থে তার ঝুঁকিও কম সেই কারণেই। বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক ভাল রেটিং-এভাবেও বিষয়টি দেখতে পারেন।
যদি সাধারণ লগ্নিকারীর বন্ডে বা ঋণপত্রে লগ্নি করতে চান, তাহলে তাঁর সামনে একটি বৃহৎ সম্ভার। তালিকা দেখুন-
ক) কর্পোরেট সংস্থার (সরকারি, বেসরকারি দুইই) ঋণপত্র। বন্ড, নন-কনভার্টেবল ডিবেঞ্চার ইত্যাদি।
খ) সরকারি সিকিউরিটিজ, ‘গিল্ট’ বলে চিহ্নিত।
গ) ট্যাক্স বাঁচানোর জন্য একটি আলাদা শ্রেণীভুক্ত করা বন্ড ও অনুরূপ সিকিউরিটিজ।
উপরের সূচিটি ছোটই রাখলাম। স্থানাভাবে আরও নির্দিষ্টভাবে শ্রেণীবিন্যাস করতে পারলাম না।বন্ড মার্কেট যে এই মুহূর্তে খুব নিশ্চয়তা দিচ্ছে তা নয়। সুদ পরিবর্তনের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছে অর্থনৈতিক কিছু ট্রেন্ড। আর সে জন্য ঋণপত্রের বাজারে আছে অস্থিরতা। মুদ্রাস্ফীতির হার তো জানেনই। বাকি রইল ক্রেডিট রিস্ক-বিনিয়োগকারীরা জানেন, সম্প্রতি কিছু ‘ক্রেডিট ইভেন্ট’ ঘটার কারণে অনভিপ্রেত কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
এত সত্ত্বেও, মরুভূমির বালুরাশির মাঝে যেমন হঠাৎ মরুদ্যান দেখা যায়, ঋণপত্রের বাজারেও পাওয়া যায় কিছু উল্লেখযোগ্য বিকল্প। ভাল রেটিং, সুষ্ঠু ট্রেডিং করার সুযোগ, সুদের হারের যথার্থতা-এ সবই বিনিয়োগকারীর পক্ষে সুবিধাজনক হিসাবে গণ্য হয়। অপেক্ষায় থাকলে আপনিও পেয়ে যাবেন সুযোগ।
লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ