সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রবিবার রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না মেট্রোর নিত্যযাত্রীরা। নববর্ষের রাতে আচমকা কুঁদঘাট মেট্রো স্টেশনে আটকে যায় নন-এসি রেক। আলো-পাখা বন্ধ হয়ে সে এক আতঙ্কের পরিবেশ। জানলার কাচ বেঙে কোনওরকমে বেরলেন যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিদিনই যেন যাত্রার ঝুঁকির বেড়ে যাচ্ছে। রবিবারের ঘটনার পরে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন মেট্রোযাত্রীরা। গোটা ঘটনায় মেট্রো কর্তৃপক্ষের দিকেই অভিয়োগের আঙুল উঠেছে। অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ রেক চালাচ্ছে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ। তার জেরেই কোনওদিন সুড়ঙ্গের মধ্যে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে রেক। কোনওদিন প্ল্যাটফর্মে পৌঁছেও খুলছে না দরজা। কোথাও আবার দরজা একবার খুলে গেলে আর আটকাচ্ছে না।
[বাঙালি আবেগ ছুঁতে বর্ষবরণের উৎসবকেই হাতিয়ার বিজেপির]
সোমবার সকালেও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের ছবিটা স্পষ্ট। তাঁদের অভিযোগ, এই গরমে ভিড়ে ঠাসা নন-এসি রেক যদি গন্তব্যে পৌঁছে দরজা না খোলে, তাহলে কি পরিস্থিত হতে পারে বুঝতেই পারছেন। এই নিত্যদিনের সমস্যাকে সঙ্গী করেই যাতায়াত করেন যাত্রীরা। গোটা ঘটনা দেখেও যেন দেখে না কর্তৃপক্ষ। এই অভিযোগই যেন প্রমাণিত হল রবিবার রাতে। ঠিক কী ঘটেছিল গতকাল?
রাত তখন সাড়ে ন’টা। কুঁদঘাট স্টেশনে ঢুকছিল কবি সুভাষগামী নন-এসি রেক। আচমকাই বিকট শব্দ। আগুনের ঝলকানি। সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল ট্রেন। বন্ধ হয়ে গেল রেকের আলো, পাখা। সবে মাত্র দু’টো কোচ তখন কুঁদঘাট স্টেশনে ঢুকেছে। বাকি চারটি কোচ তখনও স্টেশনের বাইরে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার রাতে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু করে দিলেন ওই ট্রেনের যাত্রীরা। স্টেশনের ভিতরে থাকা কোচ দু’টির দরজা খুললেও বাইরে থাকা কোচগুলির দরজা ছিল বন্ধ। স্টেশনের বাইরে থাকা কোচের দরজা ভেঙে আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে বের হতে থাকেন যাত্রীরা। শিশুরা আর্তনাদ করতে থাকে। তাদের অভিভাবকরা বুকে জাপটে ধরে প্রাণে বাঁচতে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। দিশেহারা হয়ে পড়েন বয়স্ক যাত্রীরাও।
[‘অশালীন আচরণ’-এর প্রতিবাদে ট্যাংরায় সংঘর্ষ-বাড়ি ভাঙচুর, আহত চার মহিলা]
এক যাত্রীর কথায়, বিকট শব্দ শুনে ও আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখে তাঁরা ভেবেছিলেন, কোনও বিস্ফোরণ ঘটেছে। তাই রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। নববর্ষের দিন হওয়ায় অন্যান্য রবিবারের তুলনায় এদিন স্বাভাবিকভাবেই মেট্রোয় ভিড় ছিল যথেষ্ট। ফলে কুঁদঘাট স্টেশনের মধ্যে বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। আগুন আতঙ্কের পর মেট্রোয় পাওয়ার অফ করে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় থার্ড লাইনের। বন্ধ করে দেওয়া হয় মেট্রো পরিষেবা।
যাত্রীদের অভিযোগ, নন-এসি রেক পুরনো হওয়াতেই এই বিপত্তি। পুরনো রেকের সমস্যা নিয়ে যাত্রীরা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানালেও কোনও ফল হয়নি। সংশ্লিষ্ট মেট্রোটিতে বিকট শব্দ ও আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখা গেলেও বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পরই কুঁদঘাট স্টেশনে ছুটে যান মেট্রো রেলের ইঞ্জিনিয়াররা। মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক করতে মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনের ডাউন লাইন দিয়ে আপ ট্রেন চালানো হয়। পাশাপাশি যে ট্রেনটিতে এই বিপত্তি ঘটে, সেটিকে কবি সুভাষ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এদিন মেট্রোয় পাওয়ার ট্রিপ করার ঘটনা ঘটেছে। কুঁদঘাট স্টেশনে ঘটনাটি ঘটে। মেট্রোর আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্বিঘ্নে যাত্রীদের উদ্ধার করেন। কয়েকজন যাত্রীর মেট্রোর কাচ ভাঙার ঘটনাটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” তাঁর কথায়, থার্ড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগের সমস্যার জন্যই এই বিপত্তি।
তবে যাত্রীরা এসব যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে নতুন রেক চালক মেট্রো। নিয়মিত হোক নজরদারি। এক মহিলা নিত্যযাত্রী সংবাদমাধ্যমের সামনে কহ্ভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘একেই তো মেট্রোয় মহিলাদের নিয়দিন হয়রান হতে হয়। তার উপর মেট্রো কর্তৃপক্ষ যদি ঠিক সময়মতো, নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে না দিতে পারে, তাহলে দরকার কি এমন লাইফ-লাইনের?’ মেট্রো ছাড়া এক পা-ও চলবে না একথা স্বীকার করে নিয়েও নিত্যযাত্রীদের একাংশ বলছেন, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ হোক রেকগুলির। স্টেশনে মোতায়েন থাকুক নিরাপত্তারক্ষী, ইঞ্জিনিয়ররা। রবিবার রাতে মেট্রোর হেল্পলাইনে ফোন করেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
দেখুন ভিডিও:
[ভিডিওটি তুলেছেন: শুভময় মণ্ডল]
[দুধের শিশুকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন দিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক!]
The post কলকাতা মেট্রোয় আগুন-আতঙ্ক! দরজা-জানলার কাচ ভেঙে বেরলেন যাত্রীরা appeared first on Sangbad Pratidin.