shono
Advertisement

জীবনের ব্যস্ততায় বদলে গিয়েছে বাঙালির পিকনিক

শীতের রোদ মেখে লঞ্চে পিকনিকই এখন নয়া ট্রেন্ড৷ The post জীবনের ব্যস্ততায় বদলে গিয়েছে বাঙালির পিকনিক appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 05:01 PM Jan 24, 2019Updated: 05:01 PM Jan 24, 2019

সময় নেই। তাই পালটে গিয়েছে বাঙালির পিকনিক। খোঁজ নিলেন প্রীতিকা দত্ত

Advertisement

ঘাসে হিমের পরশ পড়তেই ল্যান্ডফোনে মা-মাসি-পিসির পিকনিক প্ল্যানিং। ক্রিকেট ব্যাট, ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট থেকে ধুলো ঝেড়ে সাফ করা। আগেভাগে বাসের বুকিং। পিকনিক ব্যাগে কড়াইশুঁটির কচুরি, নতুন আলুর দম, ছোটদের জন্য বাপুজি কেক। সব গুছিয়ে নিয়ে গান্ধীঘাট বা ব্যান্ডেল চার্চ বা ঘোলার বাগানবাড়ি। মা-কাকিমা আর সে দিন রান্নার দায়িত্বে নেই। এই একটা দিন পিকনিক স্পটে কচি পাঁঠার ঝোল আর সাদা ভাতের দায়িত্বে বাড়ির ছেলেরা।

সময়:
কিন্তু সে সব এখন ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। সেপিয়া টোনে চলে গিয়েছে সবটা। এখন যে একটুও সময় নেই বাঙালির। পিকনিক প্ল্যানিংয়ের পর বাস বুকিং, ডেকরেটরের কাছ থেকে বাসনপত্র জোগাড় করা, জলখাবারের ব্যবস্থা-অফিস-বাড়ির কাজ সামলে পিকনিকের জন্যেও খাটা মানে বাড়তি চাপ। জেন ওয়াই ভীষণ ব্যস্ত। তারা চায় পিকনিক হোক। কিন্তু সেটা এমন একটা জায়গায়, যেখানে এই বাড়তি চাপগুলো থাকবে না। শুধু যাওয়ার অপেক্ষা। সাউথ সিটি রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্সের বাসিন্দা চাকরিরতা মীনাক্ষী সরকার। তিনি বলছিলেন, “এখন ফ্যামিলি গেট-টুগেদার মানে ইকো পার্ক বা নিক্কো পার্ক। আত্মীয়স্বজনের বেশির ভাগই বিদেশে থাকেন। বাচ্চাকে নিয়ে একটা রবিবার ইকো পার্ক ঘুরিয়ে আনলেই সে খুশি। আগের মতো অত ঘটা করে পিকনিকের বাড়তি চাপ কে নেবে?” 

[মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভিতর ‘ডিপ্রেশনের’ দিস্তা…]

পিকনিক অনেক সহজ:
মা-বাবা আর তাঁদের সবেধন নীলমণি এক সন্তান। এই নিয়েই ছোট্ট সংসার। ফিস্ট বা পিকনিক কালচার উধাও হয়ে যাওয়ার পিছনে এটাই প্রধান কারণ বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কৌশিক পাণ্ডে। “আমি ছোটবেলায় তা-ও ঠাকুমা, জেঠু, কাকাকে দেখেছি। বাড়ির কাজকর্মে সবাই একসঙ্গে অংশ নিতেন। কিন্তু আমার অনেক বন্ধু ছোট থেকে এঁদের কাউকেই দেখেনি। ফ্যামিলি মানে ওদের কাছে
মা-বাবা। এ ধরনের পরিবারে পিকনিক হয় নাকি!” বলছিলেন কৌশিক। আসল কথা, পরিবারে মানুষ যত কমছে, কাজের চাপ বাড়ছে। স্বাভাবিক নিয়মে সাধারণ মানুষ আগের কনসেপ্টের পিকনিকে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ঢাল তলোয়ার নিয়ে ওয়েট করছে গুগল বাবাজি। ছোট সংসার তো কী? কারণ, বিগ বাস্কেটের মতো অ্যাপের মদতে পিকনিকের কমলালেবু এখন একটা ক্লিক দূরে। এই যেমন, পিকনিক গার্ডেনের রুদ্র। মা বাবা এবং এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলিকে নিয়ে বছরের শুরুতেই ঘুরে এলেন সুন্দরবন থেকে। সবটাই একা। একটা মোবাইলের ভরসায়।

[হাতে অল্পদিনের ছুটি? শহরের অদূরে এই ৮ জায়গা হতে পারে আপনার গন্তব্য]

লঞ্চেও পিকনিক:
এই আগ্রহ হারানো থেকেই কিন্তু পিকনিক এখন ‘মডার্ন ডে লুক’ নিচ্ছে। মানুষ এখন এমন জায়গায় যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন যেখানে সব কিছুই রেডিমেড। বাড়তি খাটনি নেই। শুধু বডি ফেললেই হল। কেটারিং এজেন্সি রয়েছে খাওয়াদাওয়ার দায়িত্বে। বোর্ডগেম বা গানবাজনাও সঙ্গে পাবেন চাইলে। হোটেল ছাড়া এমন জায়গা কি আছে? প্রশ্নটা কঠিন হলেও উত্তরটা সহজ। ঋতা লাহিড়ী শেয়ার করলেন তাঁর নতুন অভিজ্ঞতার কথা। পরিবার সমেত তাঁদের মাছরাঙা দ্বীপে লঞ্চে পিকনিকের কথা বলছিলেন তিনি। মনের মতো পিকনিক স্পট না পেয়ে লঞ্চে পিকনিক করার আইডিয়াটা তাঁরা পেয়েছিলেন টিনএজার নাতনির কাছে। তার পরই সামান্য রিসার্চ করে টাকি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মাছরাঙা দ্বীপে ইছামতীর বুকে লঞ্চে পিকনিক। ঋতা লাহিড়ী একা নন। পিকনিক গার্ডেনের তাপ্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও বলছিলেন দেউলটিতে সুবর্ণারেখার উপর লঞ্চে করে পিকনিকের কথা। সারাদিন গঙ্গা-ইছামতী বা সবুর্ণরেখার বুকে কাটানোও কিন্তু একটা এক্সপিরিয়েন্স। শীতের রোদ গায়ে মেখে কেজো কথা দূরে সরিয়ে লঞ্চে পিকনিক এখন বেশ জনপ্রিয়।

[শহরের বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই চেনা শব্দগুলো]

রিসর্ট বিলাস: 
পিকনিকের সব উদ্দেশ্য ‘সলভ’ করবে রিসটে ডে-আউট। গ্রামীণ ব্যাকগ্রাউন্ডে পুলসাইড পার্টি, বিয়ারে চুমুক কিংবা ডিজে নাইট, সব পাবেন এখানে। ছুটির দিনে এখন অনেকের গন্তব্য রাজবাড়ি বাওয়ালি, ফোর্ট রায়চক বা ডায়মন্ড হারবার। হোটেল রুম চাইলে সেটা বুক করতে পারেন। না হলে শুধু ডে-আউট প্যাকেজও রাখে সব ক’টা রিসর্ট। তাতে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, পুলে দাপাদাপি, লনে খেলা, সব ইনক্লুডেড। পিকনিকের পুরো মাথাব্যথা যখন এত সহজে আউটসোর্স করে দেওয়া যাচ্ছে, কেনই বা কেউ পড়ে থাকবে পুরনো দিনের পিকনিকে?

The post জীবনের ব্যস্ততায় বদলে গিয়েছে বাঙালির পিকনিক appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement