পৌষালী দে কুণ্ডু: ছেলে না কি মেয়ে? বাহ্যিক রূপের সঙ্গে হাবভাবের অমিল দেখলেই এমন ফিসফিস, গুঞ্জন। কখনও সরাসরি আক্রমণ। মেয়েলি স্বভাবের পুরুষ কিংবা পুরুষালি নারীকে দেখলে তার লিঙ্গ জানার জন্য উৎসাহের শেষ থাকে না। কেউ কেউ হিজড়ে বলে কটাক্ষ করতেও ছাড়েন না। প্রতি মুহূর্তে অপমান, ব্যঙ্গ, তীর্যক চাহনি ছুড়ে এদের প্রান্তিক করে দিতে চায় সমাজ। এমনিতেই নিজের শরীরের সঙ্গে মনের অনবরত সংঘাতে কৈশোর থেকেই রক্তাক্ত হতে থাকে এদের মন। তার উপর বাবা-মা-ভাই-বোন-বন্ধু-পড়শি-সহকর্মী-সহ বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে লড়াই।
[স্মৃতি ফিকে করতে পারে অ্যালকোহল, বাঁচতে মেনুতে রাখুন এই খাবারগুলি]
এরা রূপান্তরকামী। মানসিক ও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। অন্তর্দ্বন্দ্ব শুধু মনের সঙ্গে শরীরের। কেউ ছেলের শরীর নিয়ে মেয়ে হতে চায়। মেয়েলি ভঙ্গিমায় বেশি স্বচ্ছন্দ। কারও নারীদেহে পুরুষের মন। পোশাক, চালচলন, কথাবার্তা একদম ছেলেদের মতো। মনোবিদরা সাধারণত এদের জেন্ডার ডিসফোরিয়ায় আক্রান্ত বলেন। এটা কোনও অসুখ নয়। চাইলেই মনোবিদের কাছে কাউন্সেলিং করে হরমোনথেরাপি ও সার্জারি করিয়ে পছন্দের লিঙ্গে রূপান্তরিত হতে পারেন রূপান্তরকামীরা। বর্তমানে লিঙ্গ পরিবর্তন করলে কোনও আইনি জটিলতায় পড়তে হয় না। চিকিৎসার শেষে আদালতে গিয়ে হলফনামা দিয়ে (এফিডেফিট করে) লিঙ্গ পরিবর্তনের কথা জানাতে হবে। এরপর পরিবর্তিত লিঙ্গের উল্লেখ-সহ সরকারি পরিচয়পত্র পাওয়া যাবে। তবে রূপান্তরকামীরা অনেকেই খরচের কথা ভেবে হাতুড়ের কাছে বা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করান। যার পরিণতি বেশ কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়। তাই সব সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে জেন্ডার রিঅ্যাসাইনমেন্ট ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
[পুজোয় প্রচুর খেয়ে ওজন বাড়িয়েছেন? মেদ ঝরাতে ডায়েটে রাখুন এগুলি]
বিদেশের মতো এখনও এ দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবনযাপন করতে পারে না এলজিবিটি গোষ্ঠী। মূলস্রোতের বেশিরভাগ মানুষই এদের এড়িয়ে গিয়ে, প্রান্তিক করে রেখে, ন্যায্য সুবিধা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করে বিভেদের প্রাচীর গড়ে রেখেছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে সমকামিতা অবৈধ নয়। প্রাচীন আইন সংশোধনের মতোই এবার এদের প্রতি সমাজের মানসিকতা বদলানোর সময় এসেছে। একটু সহমর্মিতা, সহযোগিতা, পাশে থাকার আন্তরিক চেষ্টা কি আমরা করতে পারি না? শীঘ্রই হোক সেই শুভক্ষণের সূচনা।
The post লিঙ্গ পরিবর্তন অস্ত্রোপচারে ভয়? রইল সহজ কিছু টিপস appeared first on Sangbad Pratidin.