অভিরূপ দাস: পেটের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল রোগী। হাসপাতাল শুরু করে দিল হার্টের চিকিৎসা। জোর করে করা হল অ্যাঞ্জিওগ্রাম। হার্টের কোথাও সমস্যা না পেয়ে চিকিৎসকরা যখন দিশেহারা বন্ড লিখে রোগীকে হায়দরাবাদে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। সেখানেই আল্ট্রা সাউন্ড করে দেখা যায় হার্টের কিস্যু হয়নি। সমস্যা তো অগ্নাশয়ে। গলব্লাডার স্টোনের জন্যেই পেট ব্যথা করছিল। হায়দরাবাদে অস্ত্রোপচার করে এখন সুস্থ বছর ষাটের কৃষ্ণকুমার গুপ্ত। দুর্গাপুরের বাসিন্দা ভুল চিকিৎসা করার জন্য হেলথ ওয়ার্ল্ড নামে বেসরকারি ওই হাসপাতালের (Nursing home) বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। গোটা ঘটনা জরিপ করে হেলথ ওয়ার্ল্ডকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে স্বাস্থ্য কমিশন।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন দিলীপবাবু। গলস্টোন রোগীর হার্টের চিকিৎসা? কীভাবে হচ্ছিল তা ভেবে পাচ্ছে না কমিশনও। দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালের বক্তব্য রোগী যখন ভরতি হয় তখন তিনি বাইরের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে আল্ট্রা সাউন্ড করিয়ে এসেছিলেন। সেই রিপোর্টটাকে নির্ভুল ভেবেই চিকিৎসা চলছিল। যদিও এই অজুহাত মানতে চায়নি স্বাস্থ্য কমিশন। কমিশনের চেয়ারম্যানের কথায়, রোগী যখন এসেছেন তখন হাসপাতালেরও একবার আল্ট্রাসাউন্ড করে নেওয়া উচিত ছিল।
অন্যদিকে পার্থ সারথী পাল নামে আসানসোলের এক ব্যক্তি তাঁর বাবা সুবোধকুমার পালের মৃত্যুর জন্যেও দায়ী করেছে দুর্গাপুরের এই হেলথ ওয়ার্ল্ড হাসপাতালকেই। পার্থবাবুর দাবি বাবার ভুল চিকিৎসার কারণেই এমনটা হয়েছে। এদিন সেই শুনানি শুরুর সময় দেখা যায় হাসপাতাল সুবোধকুমার পালের জায়গায় শংকর পালের কেস হিস্ট্রি নিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রেও কমিশন এবং অভিযোগকারী উভয়েরই মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে হাসপাতালকে। সত্ত্বর ১০ হাজার টাকা রোগীর পরিবারকে এবং ১০ হাজার টাকা কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মহুয়া মৈত্রর দায়ের করা অভিযোগের চার্জশিট খারিজ, কলকাতা হাই কোর্টে স্বস্তি বাবুলের]
এদিকে, পায়ে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে পুড়িয়েই দিলেন চিকিৎসক! ভয়ঙ্কর এ ঘটনা দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের। উত্তর কলকাতার নন্দরাম সেন স্ট্রিটের বাসিন্দা বছর তেইশের পারমিতা পোদ্দার পড়ে গিয়েছিলেন বাড়িতে। পায়ের হাড় টুকরো টুকরো হয়ে যায়। অস্ত্রোপচার করতে তিনি ভরতি হন আলিপুরের সিএমআরআই হাসপাতালে। ২৩ জুন তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। টানা পাঁচ ঘন্টার অস্ত্রোপচার শেষে দেখা যায় ঝলসে গিয়েছে পায়ের একটা অংশ। রোগীর পরিবারের দাবি, ডানদিকে অস্ত্রোপচার হয় কিন্তু পায়ের বাঁদিক কী করে পুড়ে গেল? চিকিৎসকদেরই গাফিলতি এটা।
পরিবারের লোকেরা অভিযোগ জানান রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। জবাব চাইতে ডেকে পাঠানো হয় হাসপাতালকে। সিএমআরআই কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই ধরণের অস্ত্রোপচারে একটি প্লেট ব্যবহার করা হয়। তড়িদাহত সেই প্লেট অত্যন্ত গরম থাকে। শরীরের মাংসল কোনও অংশে (নিতম্ব, থাই) এই প্লেটটি স্পর্শ করা থাকে। কিন্তু মেয়েটি যেহেতু অত্যন্ত রোগা তাই প্লেটের তাপেই তার শরীরের ওই অংশ পুড়ে গিয়েছে। এমন জবাবে খুশি নয় স্বাস্থ্য কমিশন। তারা গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সিএমআরআই-কে। পাশাপাশি পেটে টিউমার নিয়ে ভরতি হওয়া এক রোগীর অস্ত্রোপচারে গন্ডগোলের জেরে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালকেও চিকিৎসার মোট খরচ থেকে রোগীর পরিবারের হাতে ৯১ হাজার টাকা তুলে দিতে বলেছে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন।