নন্দন দত্ত, সিউড়ি: লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর এই প্রথম বীরভূমে প্রকাশ্য জনসভা করল তৃণমূল। বাড়তি পাওনা হিসাবে সেখানে পাওয়া গেল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। কিন্তু সেই সভায় দেখা গেল না এলাকার সাংসদ শতাব্দী রায়কে, কোর কমিটির তিন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অনুব্রত ফিরে আসায় ফের কি দলে ফাটল দেখা গেল। পাশাপাশি মুরারইয়ের মতো এলাকায় মঞ্চ দখল করে রাখল বোলপুরের কিছু অনুব্রত ঘনিষ্ঠ নেতা। যাকে ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সভামঞ্চে।
জনসভার শুরুতেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ল মুরারইয়ের ডুমুর গ্রাম পঞ্চায়েতের
টনি শেখ ও নবাব শেখ গোষ্ঠীর লোকেরা। সভা শেষে নবাবের ছেলে সহ দুজনকে বেধড়ক মারধর করে দলের অন্য গোষ্ঠীর ছেলেরা। তাঁদের দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হল।যা আসলে এলাকার ব্লক সভাপতি বিনয় ঘোষের সঙ্গে কাজলপন্থী আলি খানের লোকেদের মধ্যে লড়াই।মুররাই দুই ব্লকে ভাঙল সভামঞ্চ। যদিও মুরারইয়ের পশুহাটের সভা থেকে অনুব্রত মন্ডল খোঁজ করলেন কাজল শেখের। দুবার নাম ধরে ডাকলেন। শেষে জানালেন হয়ত কোনও কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু আদতে জেলার চার গুরুত্বপূর্ণ নেতা প্রকাশ্যে কিছু না জানালেও তাদের যে সেভাবে সন্মানের সঙ্গে ডাকা হয়নি তার অনুগামীরা তা জানিয়েছেন।
অনুব্রত জেলায় ফিরলে জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, কর্মী থেকে রাজনৈতিক মহলে স্বভাবিক আগ্রহ ছিল। তিনি কি রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেবেন? নাকি ফের সক্রিয় হবে জেলার বাঘ? কিন্তু তিনি ফিরেই নিজস্ব কিছু নিয়ম চালু করলেন। বাড়িতে রাজনীতি নয়। দলীয় দপ্তরে কথা হবে কর্মীদের সঙ্গে। এতদিন সর্বত্র সঙ্গে ছিল মেয়ে সুকন্যা। রাজ্য থেকে অনুব্রতকে সভাপতি রেখে জেলায় ছ’সদস্যের কোর কমিটিকে সক্রিয় রেখে দিল রাজ্য নেতৃত্ব। কারণ অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে এই সদস্যরা পঞ্চায়েত থেকে লোকসভা
অনুব্রতর থাকাকালীন পরিস্থিতির থেকেও ভাল ভোটে দলকে জয়ী করেছে।
একইসঙ্গে একটা ঐক্যের ছবি সর্বত্র ফুটে উঠেছিল। নিয়ম করে প্রতি মহকুমায় ঘুরে ঘুরে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করতেন ওই কমিটির সদস্যরা। অনুব্রত মণ্ডল ফিরে এসে সেই কোর কমিটির কোনও বৈঠক করলেন না। এমনকি অঞ্চলের নেতৃত্বের সঙ্গে জেলা কমিটির বৈঠক না করেই একরকম একতরফাভাবে বিজয়া সম্মেলনের দিন ঘোষণা করে দিলেন। সেই কর্মসূচি অনুযায়ী জেলার ১৯ টি ব্লকের মধ্যে ১০ দিন সভা হবে। ১৭ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ১৬ টি ব্লকে সভা হবে। কিন্তু শুরুর দিনেই দলের চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাট মহকুমারই বাসিন্দা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা
সভাধিপতি কাজল শেখ, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ অনুপস্থিত। সেখানে মঞ্চে রইলেন বোলপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বিকাশ রায়চৌধুরী, কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ, গগন সরকার, প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা।যারা সকলেই বোলপুরের।স্বভাবতই বোলপুর লবি ফের সক্রিয় হওয়ায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে দলে।এসব নিয়ে অনুব্রত প্রকাশ্যে কোনও বার্তা দেননি। সবাইকে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই একজোট হয়ে চলার আবেদন করেছেন। যা প্রথম সম্মেলনে কিছুই মানা হয়নি বলে দলের অনেকের মত।