shono
Advertisement

Breaking News

রাজনীতির ময়দান অচেনা, সৌরভ কি সঠিক সময়ের অপেক্ষায়?

বাংলায় নায়ককে নিয়ে পরচর্চা বরাবর বেশি হয়।
Posted: 02:03 PM May 11, 2022Updated: 02:03 PM May 11, 2022

কিংশুক প্রমাণিক: ডেনিস লিলি, ম্যালকম মার্শাল, ইমরান খান অথবা ইয়ান বোথামদের দুরমুশ করে সুনীল গাভাসকরের (Sunil Gavaskar) সেঞ্চুরি, অথবা ১৯৮৩ সালে ক্লাইভ লয়েডের দর্প চূর্ণ করে কপিল দেবের (Kapil Dev) বিশ্বকাপ জয়– ভারতীয়দের এতটাই গর্বিত করেছিল যে, কালক্রমে ক্রিকেট খেলা মানুষের মজ্জায়-মজ্জায়
ঢুকে যায়।

Advertisement

বিজাতীয় পেলে-মারাদোনার ফুটবল জাদুতে পাগল একটি দেশে ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন সানিরাই।
বিশ্ব সকারের নিরিখে ভারতীয় ফুটবলের অন্তঃসারশূন্য দশা যে হতাশার সৃষ্টি করেছিল, তা থেকে স্বস্তি দিয়েছিল ওই সময়ের বাইশ গজের বিক্রম। বঙ্গ জাতি সেই বীরপুজোয় গা ভাসিয়েও খানিক অসুখী ছিল এই কারণে যে, পোড়া বাংলায় কি একজনও ক্রিকেটার তৈরি হয় না যে চার-ছক্কার বান ডেকে মাঠে রাজ করবে?

[আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ব্যাংকে ইজরায়েলের সেনার গুলিতে মৃত্যু মহিলা সাংবাদিকের, অভিযোগ ওড়াল তেল আভিভ]

একবিংশ শতকের শেষ লগ্নে সেই খেদ আমাদের মিটিয়ে দেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) নামে এক লড়াকু যুবক। ‘প্রিন্স অফ ক্যালকাটা’ তাঁর শৌর্যে হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অধিনায়কের আসন ছিনিয়ে নিয়ে দেশকে দেখান বাঙালি রক্তের তেজ। শত্রুকে এক ইঞ্চি জায়গা না ছেড়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চোখে চোখ রেখে লড়াই। ভারতীয় ড্রেসিং রুমের দুমড়ে যাওয়া মেরুদণ্ডটি তিনি সোজা করে দিয়েছিলেন বললেও ভুল হবে না। বাঙালি জাতির ছাতি ৫৬ ইঞ্চি করে দেয় মহারাজের বিজয়। তাঁর দর্পে আবার ঘোষিত হয়– ‘হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো’। 

ফুটবল ও ক্রিকেট-বোধ আমার কৈশোরেই জাগ্রত হয়। স্কুল-কলেজ, পরে অফিস কামাই করে একটা গোটা দিন নষ্ট করে খেলা দেখার বদভ্যাস খুব ছিল। এবং আর-পাঁচটা বাঙালির মতো আমিও সৌরভের বিরাট ফ্যান।তাঁর বিজয়ে হাসতাম। পতনে কাঁদতাম। তাঁকে যখন ভারতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হল, রাগে-অভিমানে খেলা দেখাই ছেড়ে দিই! ক্রোধ তখন এমনই যে রাহুল দ্রাবিড় বিদেশিদের কাছে হারলে মনে মনে খুশিই হতাম।
এসবই আসলে ‘ঘরের ছেলে’-কে ঘিরে আবেগের বহিঃপ্রকাশ। যদিও শুরুর দিকে তাঁর ভাবসাব দেখে ‘এচড়েপাকা’ মনে হত। কতদূর কী করতে পারবে সন্দেহ ছিল। তিরিশ বছর আগে অস্ট্রেলিয়াগামী ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন যেদিন, সেদিন থেকে আঠারো-পেরনো তরতাজা বাঁ-হাতির জায়গা হয় বুকে। ওদিকে, তখন শচীন তেণ্ডুলকরকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে গিয়েছে।

মহম্মদ আজহারউদ্দিন হয়তো অনেক বড় ক্রিকেটার, কিন্তু তাঁর অধিনায়কোচিত জ্ঞান নিয়ে বহু প্রশ্ন ছিল। সুযোগ না দিয়ে ড্রেসিং রুমেই বঙ্গসন্তানকে বসিয়ে রাখেন। পাড়ার মাঠে খেলায় না নিলে আমিও রেগে গিয়ে উইকেট উলটে দিয়েছি। সৌরভও যে দাদা তুমি কার গেরুয়া শিবিরে কি নাম লেখাবেন সৌরভ? গত বিধানসভা ভোটের সময় এই আলোচনা দারুণভাবে উসকে যায়। চূড়ান্ত বুদ্ধিমান ‘দাদা’ নিজস্ব নেটওয়ার্কে বুঝতে
পারেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই বাংলার ভোট ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনে দাঁড়ালে মান যাবে, মুখও পুড়বে। তাই বিনীতভাবে মোদি-শাহদের জানিয়ে দেন– এবার ছেড়ে দিন। এমন কাণ্ড করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তিনিও বিদ্রোহী হলেন। ‘আমি মহারাজ, আমি জলের বোতল বইতে আসিনি’ বলে অস্বীকার করলেন সহ-খেলোয়াড়দের জন্য পানীয় নিয়ে যেতে।

বেশ করলেন! একেই তো বলে ‘বাপের বেটা’! তারপর হয়তো সৌরভ জলের বোতল বয়েছেন। কিন্তু সেদিন ছিল একজন অন্ধ অধিনায়কের বিরুদ্ধে আলোর প্রতিবাদ। পরদিন সেই খবর সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় দেখার পর পুলকিত হয়েছিল বাংলা। আমার মতো আপামর বাঙালির মনে হয়েছিল, চণ্ডী গাঙ্গুলির ছেলের ধক আছে। এ তো পোলা নয়, আগুনের গোলা!

বঙ্গজাতি বরাবর তার সাহসী সন্তানদের বীরপুজো করে এসেছে। নেতাজির ‘দিল্লি চলো’-র ডাক হোক, ফাঁসির দড়ি বরণ করে ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান, অথবা মাস্টারদা, বিনয়-বাদল-দীনেশ থেকে মহানায়ক উত্তমকুমার, রাজনীতির জে্যাতি বসু, মমতা বন্দ্যোপাধায়, সবার পুজো যুগে যুগে এই বঙ্গে হয়েছে তাঁদের বিক্রমের জন্য।

সেই রাজ্যের ছেলের সাহস দেখে তৃপ্ত হয় সবাই। তাঁকে ঠেকানো যায়নি। অাবার ডাক। এক সুযোগে একশো। জীবনের প্রথম টেস্ট ইনিংসে বিলেতের মাঠে সেঞ্চুরি। পরে অস্ট্রেলীয় বাহিনীর অসভ্য স্লেজিং বুক পেতে সয়ে বিসব্রেনে সেঞ্চুরি। একের পর এক গৌরবের অধ্যায়। অধিনায়ক হিসাবে পর পর সাফল্য। ঐতিহ্যের লর্ডসে সাহেবদের পুঁতে দিয়ে মাঠে জামা উড়িয়ে সেলিব্রেশন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ট্রফি ফসকে না গেলে সৌরভের সাফলে্যর ইতিহাসটা রূপকথার গল্পকেও হয়তো হার মানাত। যাই হোক, এবারে কাজের কথায় আসি।

২২ গজে যাঁর চোখ দেখে বলে দেওয়া যেত আজ শেন ওয়ার্ন অথবা ওয়াকার ইউনুসের কপালে কতটা দুঃখ আছে, সেই দাদার চোখে এখন মায়ার খেলা। অ-ক্রিকেটীয় জগতের ছায়াজাল। সৌরভ যে রাজনীতির পিচে ব্যাট করতে চান, সেটা বোঝা গিয়েছিল বিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময়। যে ‘পাওয়ার প্লে’ দেখিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করলেন, তা কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব ছিল না।
স্বাভাবিকভাবেই সেই থেকে জল্পনা– গেরুয়া শিবিরে কি নাম লেখাবেন সৌরভ? গত বিধানসভা ভোটের সময় এই আলোচনা দারুণভাবে উসকে যায়। চূড়ান্ত বুদ্ধিমান ‘দাদা’ নিজস্ব নেটওয়ার্কে বুঝতে পারেন, মমতা বন্দে্যাপাধ্যায়ের হাতেই বাংলার ভোট ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনে দাঁড়ালে মান যাবে, মুখও পুড়বে। তাই বিনীতভাবে মোদি-শাহদের জানিয়ে দেন– এবার ছেড়ে দিন।
কিন্তু…।
বাংলায় নায়ককে নিয়ে পরচর্চা বরাবর বেশি হয়। তাঁর কীর্তিতে যেমন ধন্য-ধন্য হয়, তেমনই জল্পনার অংশটিও আতশকাচের নিচে রেখে মন্থন করা হয়। সৌরভকে নিয়ে তাই চর্চা উসকে গিয়েছে যে, ‘দাদা তুমি কার?’
তুমি তো বাম আমলে ছিলে সুভাষ চক্রবর্তী, অশোক ভট্টাচার্যর পুত্রসম। জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা তোমাকে কদর করতেন। ২০১১ সাল থেকে তোমার নজর নবান্নে। এখন অমিত শাহ আসছেন বাড়িতে ভোজ খেতে। বিষয়টি দাদার ‘সুবিধাবাদ’ বলে যাঁরা ব্যাখা করছেন, তাঁদের দোষ দেওয়া যায় কি?

বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরাট ক্যারিশমার মোকাবিলা করার মতো নেতা বিজেপিতে নেই। শাহরা জানেন, দাদার রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে। তাই বিধানসভা ভোটের সময় ‘না’ শুনেও আবার কি চেষ্টা হচ্ছে? বিসিসিআই-এর ‘প্রতিদান’ চাইছেন কি তাঁরা? বড় ব্যাটসম্যান তিনিই, যিনি জানেন কোন বল ছাড়তে হয়, কোন বল মারতে হয়। সৌরভের এই ক্রিকেটীয় জ্ঞান তুখড়। পাটা পিচে তিনি যেমন স্টেপ আউট করে বল মাঠের বাইরে ফেলতে জানেন, তেমনই ঘূর্ণি পিচে পিছনের পা’টা ঠিক কোথায় রাখতে হয় তা-ও বিলক্ষণ জানা।

কিন্তু, রাজনীতির মাঠ আলাদা। এখানে সময় বড় ফ্যাক্টর। সৌরভ কি তাই অপেক্ষা করেছেন? জিইয়ে রেখেছেন সম্ভাবনা। স্ত্রী ডোনার কথায় উসকে গিয়েছে আগুন। বাইশ গজ থেকে ‘দাদাগিরি’-র মঞ্চ অথবা ‘বিসিসিআই’-এর প্রসিডেন্ট, সব কাজেই সৌরভ সফল। রাজনীতিতেও হবেন।
কার্যত এ-কথাই বলেছেন ডোনা। অতএব…

জীবনের প্রথম ভুল যদি হয় বিশ্বকাপ ফাইনালে টসে জিতে রিকি পন্টিংকে ব্যাট করতে পাঠানো, তাহলে দ্বিতীয় ভুলটা কী? এর উত্তর মহারাজই জানেন। আমাদের দেখার কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

[আরও পড়ুন: ধপাস! নাতির সঙ্গে সমুদ্রে ঘুরতে গিয়ে সৈকতে পা পিছলে পড়ে গেলেন মদন মিত্র, ভাইরাল ভিডিও]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement