সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হাবরার: তখন অবিভক্ত বাংলা। চারিদিকে জল আর জঙ্গল। এরই মাঝে বাংলা ১১৫০ সালে বাবা বিহারীলালের হাত ধরে ফলতার মালা মহিরামপুর গ্রামে এসে রাজ্যপাট শুরু করেন জমিদার কালীকৃষ্ণ দেব। ১১৫২ সালে ফলতার মহিরামপুর গ্রামেই প্রথম মা উমার আরাধনা শুরু করেন তিনি। মহা ধুমধাম করে আজও চলছে সেই পুজো। করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতিতে ভারচুয়ালি অষ্ঠমীর অঞ্জলি দিতে পারেন দূর-দূরান্তে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যরা।
দেবসরকার পরিবারের প্রবীণ সদস্য পঁচাত্তর উর্দ্ধ বয়সী অসিত দেবসরকার জানান, একসময় পুজোকে কেন্দ্র করেই বসতো বিরাট যাত্রাপালা। কলকাতার (Kolkata) এমন কোনও বড় দল ছিল না যে সেখানে যাত্রা করতে যায়নি। পরিবারের অন্য দুই সদস্য তাপস দেবসরকার, মনোজ দেবসরকাররা বলেন, সেসময় সবার প্রবেশাধিকার ছিল না এই জমিদার বাড়ির পুজোয়। মহিলাদের স্থান ছিল ঘরের মধ্যে। তবে আস্তে আস্তে সেই নিয়মের বেড়াজাল একটু একটু করে শিথিল হতে শুরু করে। পরবর্তীতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পুজো হয়ে ওঠে গোটা গ্রামের পুজো।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বাধা মারণ ভাইরাস, আড়ম্বরহীন রায়গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ‘বিদ্রোহী’ ক্লাবের পুজো]
এখন সবটাই অতীত। একটু একটু করে ফিকে হয়ে গিয়েছে পুজোর রং, হারিয়েছে জৌলুস। সেই দালানবাড়ি আর নেই। সবটাই ঢেকেছে সবুজ আগাছায়। ইঁটের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে সুরকি। আজও রীতি মেনে পুজো হলেও বসে না সেই যাত্রাপালা। তবে রীতি মেনে চলে আসছে পুজোর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে পাঁঠাবলির রেওয়াজ, জানিয়েছেন দেবসরকার পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা জানিয়েছেন, "অষ্টমীতে দু'বার পাঁঠাবলি হয়। সকালে একবার এবং সন্ধিপুজোর সময় আর একবার মায়ের কাছে পাঁঠাবলির রেওয়াজ এখনও রয়েছে। নবমীতে কিছু ফলও বলি দেওয়া হয়। এমনকি সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত এক বিরাট থালায় প্রায় ১৩১ কেজিরও বেশি চাল দিয়ে তৈরি হয় নৈবেদ্য। যেখানে দুর্গা, লক্ষ্মী ,সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, জয়া-বিজয়া, নবগ্রহ ইষ্ট দেবতা আর নারায়ণের নামে দেওয়া হয় নৈবেদ্য।"
জনশ্রুতি আছে, এই দেবসরকার পরিবারেই নাকি মা উমা মাংস ও মণ্ডা খেতে এসেছিলেন কোনও এক পুজোয়। বছর দুয়েক আগেও পুজোর চারটে দিন পরিবারের সদস্যরা দেশ বিদেশ থেকে এসে মিলিত হতেন এই দেবসরকার বাড়িতে। পরিবারের নবীন প্রজন্মের এক সদস্য সায়নীর কথায়, "করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর থেকে পরিবারের সদস্যদের কথা মাথায় রেখেই চালু করা হয়েছে এক নতুন নিয়ম, যেখানে ভারচুয়ালি দেশ-বিদেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা মায়ের অঞ্জলি দিতে পারেন।" কালের নিয়মে একটু একটু করে পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছুই, আজ জমিদার নেই, নেই জমিদারীও কিন্তু প্রাচীন রীতি ঐতিহ্যকে এখনও বয়ে নিয়ে চলেছেন দেবসরকার পরিবার।