অভিরূপ দাস: পাঁকের মধ্যেই ফুটে থাকে নয়নাভিরাম পদ্ম। দশ বছরের রাখি বায়েনও তেমনই। চূড়ান্ত মেধাবী। ক্লাসে দ্বিতীয় হয়নি কখনও। তার মা লোকের বাড়ি বাসন মাজেন, ঘর মোছেন। বাবা মদ্যপ, প্রায়শয়ই হুঁশ থাকে না। কলকাতার (Kolkata)দক্ষিণ শহরতলির রাখি বায়েনের পড়াশোনা থমকে গিয়েছিল আচমকা। কিন্তু রাখির মেধার বিচ্ছুরণ দেখে তাকে ফের স্কুলে ফেরানো হয়। উদ্যোগ নিয়েছেন কলকাতা পুরসভার ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তী এবং যুব নেতা রাহুল ঘোষ। আবার বইখাতা, পেন-পেন্সিল নিয়ে সময় কাটাবে রাখি। আবার তার মার্কশিট ভরে উঠবে নম্বরে।
রাখি বায়েন ভরতি হয়েছে দক্ষিণ শহরতলির আদর্শ শিক্ষায়তন স্কুলে। নতুন করে তার শিক্ষাজীবন শুরুর নেপথ্যে অনেকটা কৃতিত্বই প্রখ্যাত ত্বকরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক লাহিড়ীর। তাঁর বাড়িতেই কাজ করে রাখির মা। কয়েকদিন আগের কথা। বাড়ির পরিচারিকাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত দেখে কারণ জানতে চান ডা. লাহিড়ী। পরিচারিকা জানান, আচমকাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে দশ বছরের মেয়ের পড়াশোনা। কারণ? কালিকাপুরের যে প্রাইমারি স্কুলে (Primary School)রাখি পড়ত, তা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। রাখির নিরক্ষর পরিবার তা জানত না। এরপর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হলে যে নতুন স্কুলে ভরতি করাতে হবে, সে সমন্ধে কোনও ধারণাও ছিল না ওঁদের।
[আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ‘মুখ্যমন্ত্রীর মুখ’ তিনিই, স্পষ্ট ইঙ্গিত প্রিয়াঙ্কার]
এসব শুনে রাখির আগেকার মার্কশিট দেখতে চান ডা. লাহিড়ী। এবং বিস্মিত হন। বাংলায় ৮০ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯০ শতাংশ, অঙ্কে রাখির প্রাপ্ত নম্বর ৮৭ শতাংশ! চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী জানিয়েছেন, ”এমন মেধাবী কন্যার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, হতেই পারে না।” মেধাবী (Intelligent) মেয়েকে দ্রুত স্কুলে ভরতি করানোর জন্য কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন ডা. লাহিড়ী। কাউন্সিলর সেসময় কোভিড (COVID-19) পজিটিভ। নিভৃতবাসে বসেই রাখির ভরতির যথাযথ ব্যবস্থা নেন অনন্যা। কাউন্সিলরের কথায়, ”ভরতির তারিখ পেরিয়ে গিয়েছিল। পরিবারটি নিরক্ষর। অত খোঁজ খবর রাখে না। আমি প্রিন্সিপালকে অনুরোধ করি, একটু দেখুন। মেয়েটি যেন লেখাপড়া শিখতে পারে।”
রাখিকে ভরতি নিয়েছে আদর্শ শিক্ষায়তন। রাখীর মা তনুশ্রী বায়েন বলেছেন, ”আমরা মুখ্যসুখ্য মানুষ। ডাক্তারবাবু এগিয়ে না এলে কিছুই হত না।” অনন্যা জানিয়েছেন, মেয়েদের স্বাবলম্বী করার জন্যেই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য সমস্ত মেয়েদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসা। মেয়েটির জন্য কিছু করতে পেরে আমি গর্বিত।