সুব্রত বিশ্বাস ও শুভঙ্কর বসু : প্রতিবারই গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) উপলক্ষে বাড়তি লোকাল ট্রেন দেওয়া হয়। এবার বাড়তি একটি এক্সপ্রেস ট্রেন দিল পূর্ব রেল। তাও মুর্শিদাবাদের যাত্রীদের সাগর মেলায় আসার সুবিধার জন্য। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত ট্রেন চালাতে রেলের কাছে আবেদন করেছিল রাজ্যও।
গঙ্গাসাগর মেলার কোভিড বিধি নিয়ে এদিন নবান্নে রাজ্য-রেল বৈঠক হয়। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে এ বছর মেলা এড়ানোর আরজি জানিয়েছেন। আশা করা যায়, মহামারীর কারণে তীর্থযাত্রী সমাগম আগের বছরগুলোর তুলনায় কম হবে। রেল এই বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট হয়েও রাজ্যের ভিতর বাড়তি এক্সপ্রেস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পূর্ব রেলের প্রিন্সিপাল চিফ অপারেশন ম্যানেজার ইউ কে বল বলেন, “রাজ্যের এই মেলায় প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। মুর্শিদাবাদের দিক থেকে কম ট্রেন থাকায় বিশেষ মেলা এক্সপ্রেস চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
[আরও পড়ুন : গড়বেতা থেকে ফের তৃণমূলকে তোপ, আসন্ন নির্বাচনে বাংলা দখলের লক্ষ্যে অনড় শুভেন্দু]
আগামী ৭ থেকে ১৬ জানুয়ারি ট্রেনটি লালগোলা-শিয়ালদহের মধ্যে চলাচল করবে। ওই ট্রেনের সঙ্গে কাকদ্বীপের লিংক ট্রেন রাখা হবে শিয়ালদহে। মোট আটটি জেনারেল কামরা থাকবে ওই ট্রেনটিতে। লালগোলা ও শিয়ালদহ দু’দিক থেকেই ট্রেনটি ছাড়বে সাড়ে তিনটের সময়। এছাড়া ১২ থেকে ১৬ জানুয়ারি শিয়ালদহ থেকে নামখানা, কাকদ্বীপের মধ্যে ৬৭টি বাড়তি লোকাল চালাবে পূর্ব রেল। কোভিড বিধি মেনে ট্রেনে যাত্রা করতে হবে। মানতে হবে রাজ্যের বেঁধে দেওয়া সব প্রোটোকলও।
এদিন নবান্নে বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রীও জানান, গঙ্গাসাগর মেলা ঘিরে বিশেষ প্রস্ততি শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত বাস, ভেসেল, বার্জের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ‘সাগরবন্ধু’ নামে ৮০০ জনের টিম তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি বাসে একজন করে সাগরবন্ধু থাকবেন। এবার ট্রেন যাত্রার জন্য কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তেমনই বাসযাত্রীদেরও প্রয়োজনে মেলা প্রাঙ্গনে ঢোকার আগে কোভিড পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে বাস কলকাতা ছাড়ার আগে ময়দানে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন : জমি দখলের প্রতিবাদ করায় প্রহৃত ক্যানসার আক্রান্ত পেট্রোল পাম্প মালিক, কাঠগড়ায় তৃণমূল]
পুণ্যার্থীদের কথা ভেবে মেলা প্রাঙ্গনে থাকছে ৩০০টি নন-কোভিড বেড, দুটি এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স. ১০০ সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্স, গ্রিন করিডরের ব্যবস্থা। এছাড়া, কোভিড হাসপাতাল, আইসোলেশন সেন্টার, কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থাও থাকছে। অশান্তি ও বিপদ এড়াতে চলবে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি। মুখ্যমন্ত্রীর বাছাই করা পুলিশ আধিকারিকদের উপর থাকছে নিরাপত্তার দায়িত্ব। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৮ থেকে ১৬ জানুয়ারি যে সমস্ত সরকারি কর্মচারী, পুলিশকর্মী, সংবাদকর্মীরা মেলা প্রাঙ্গনে থাকবেন তাঁদের জন্য ৫ লক্ষ টাকার প্যাকেজ রাখা হবে।
এদিকে দুর্গোৎসব, কালীপুজো ও বর্ষবরণের পর প্রত্যাশামতোই এবার গঙ্গাসাগর মেলায় জনসমাগম এড়াতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হল কলকাতা হাই কোর্টে। মামলাকারী সেই অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মী অজয় দে। যিনি আগের সবক’টি মামলা দায়ের করেছিলেন। এবার তাঁর আর্জি, করোনার সংক্রমণের ভীতি এখনও বজায় রয়েছে। পাশাপাশি এই ভাইরাসের নতুন প্রজাতিরও হদিস মিলেছে। গঙ্গাসাগর মেলায় শুধু এ রাজ্য নয় ভিন রাজ্য থেকে বহু পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটবে। ফলে মেলাচত্বরকে কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে ঘোষণা করুক আদালত। একইসঙ্গে বাবুঘাট চত্বরকেও কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।