বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, কান্নুর, কেরল: এক দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে পার্টি। সাকুল্যে একটি পুরসভা বা গুটিকয় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের বাইরে ঝুলি ফাঁকা। তারপরও চেয়ার দখলের মোহ কাটেনি। সরকারি পদ জুটবে না বুঝেই পার্টির পদ দখলে মরিয়া আলিমুদ্দিনের উপর থেকে নিচুতলা। রাজ্য পর্যন্ত তা প্রত্যক্ষ করেছেন কমরেডকুলের নেতারা। এবার শেষ যুদ্ধ শুরু কমরেডদের। পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢোকার জন্য একইরকম গুঁতোগুঁতির ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা আলিমুদ্দিনের। কারণ বয়সের বাধায় বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র বা রবীন দেবদের মতো বেশ কয়েকজনের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ যাওয়া কয়েকদিনের অপেক্ষা। তাঁদের শূন্যস্থান পূরণে সক্রিয় নতুনরা। শুরু হয়েছে লবি, পাল্টা লবির লড়াই। নেতা ধরতে তৎপর ছাত্র-যুব থেকে মহিলা নেতৃত্ব। তবে পার্টির শীর্ষ কমিটি থেকে অব্যাহতি নিলেও আসল চাবিকাঠি সেই অশীতিপর বিমান বসুর হাতেই।
আগামিকাল, বুধবার থেকে কেরলের কান্নুরে শুরু হবে সিপিএমের (CPM) তেইশতম পার্টি কংগ্রেস। কান্নুর মালয়ালি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের (Pinarayi Vijayan) গড় বলেই পরিচিত। তারপর স্বাধীনতার পর এবারই পার্টিকে পরপর দু’বার ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছেন পিনারাই। কার্যত তাঁকে ‘গিফট’ দিতেই কান্নুরে পার্টি কংগ্রেস করার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। তবে আরব সাগরের ধারের রাজ্যে পার্টি ক্ষমতায় থাকলেও পার্টি কংগ্রেসে চর্চার অন্যতম বিষয়বস্তু অবশ্য বাংলা। তাই বঙ্গ সিপিএমের কোন কোন নতুন মুখ কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোতে জায়গা পাবেন, ই কে নায়নার অ্যাকাডেমির দেওয়ালে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে আলোচনা। বেঁধে দেওয়া বয়সসীমায় সরে যেতে হবে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েটকে। সেই শূন্যস্থান পূরণে আলিমুদ্দিনের অন্দরে ‘কাটাকুটি’-র খেলা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে খবর। যা নিয়ে আশঙ্কায় দলের একটা বড় অংশ।
[আরও পড়ুন: সঞ্জয় রাউতের জমি-ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করল ED, রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ শিব সেনার]
আশঙ্কার কারণ, নিচের দিকে পার্টির অভ্যন্তরীণ কমিটিতে ঢোকার প্রবণতা। বিভিন্ন এলাকা থেকে সম্মেলন শেষে প্রাথমিকভাবে নেতৃত্বের হাতে যে তথ্য এসেছে, তা বিস্ময়কর। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সাধারণত ভোটাভুটি এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আলিমুদ্দিন। কিন্তু এবার সেই নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে নিচুতলা। ফলে পার্টির শীর্ষ কমিটিতে ঢুকতে বঙ্গজ কমরেডরা প্রতিযোগিতায় নামবেন বলে নিশ্চিত আলিমুদ্দিন। সেই ‘খেলা’-ও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
বয়সসীমার কারণে বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ ৮-১০ জনকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে যেতে হবে।
শূন্যপদ পূরণ করা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। সাধারণত রাজ্য কমিটির সিনিয়র নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান। সেক্ষেত্রে অশোক ভট্টাচার্যর কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢোকার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ এমনিতেই উত্তরবঙ্গ থেকে পার্টির শীর্ষ কমিটিতে কোনও প্রতিনিধি নেই। রাজ্য কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। সম্মান দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে।
[আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে বাংলায় ঢোকার চেষ্টা? ত্রিপুরায় গ্রেপ্তার ৩ JMB জঙ্গি]
তবে এবার রাজ্য কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যেভাবে ছাত্র-যুবদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তাতে শীর্ষ কমিটিতেও তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ছাত্রনেতা ময়ূখ বিশ্বাস, যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও মহিলা সংগঠন থেকে কনীনিকা ঘোষ, প্রাক্তন সর্বভারতীয় যুবনেতা তাপস সিনহা, বর্তমান যুবনেতা অভয় মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নিতে পারেন বলে আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর। তবে তাপস ও অভয়ের ক্ষেত্রে অন্য সমস্যা রয়েছে। দু’জনেই জেলা ও রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন। পার্টির নিয়ম অনুযায়ী একজন দু’টির বেশি কমিটিতে থাকতে পারেন না। এ ছাড়াও কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, উত্তর ২৪ পরগনার পলাশ দাস, সিটু নেতা অনাদি শাহু রয়েছেন এই দৌড়ে।
সবটাই নির্ভর করছে সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও রবীন দেবরা কাকে চাইবেন তার উপর। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য জানান, সাধারণত বয়স ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উত্তরণ হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন গত পার্টি কংগ্রেসে অনেক সিনিয়র নেতাকে টপকে শীর্ষ কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছিলেন প্রাক্তন যুবনেতা আভাস রায়চৌধুরিকে পার্টির শীর্ষ কমিটিতে জায়গা দেওয়ায় প্রশ্ন ওঠে। ফলে আগামী শনি ও রবিবার দু’দিন আসল ‘খেলা’ হবে বলেই মনে করছেন তিনি।