সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্রীশ্রীচণ্ডী তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলে- ‘নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ’! অর্থাৎ সকল দেবতার শক্তি নিঃশেষিত হয়ে যে সম্মিলিত প্রতিমূর্তি গড়ে উঠেছে, তিনিই দেবী দুর্গা। নানা দেবতার তেজোজাতা এই দেবীর রূপও নানাবিধ। কোথাও তিনি দশভুজা, কোথাও বা ষোড়শভুজা, কোথাও বা তাঁকে স্তুতি করা হয়েছে অষ্টাদশভুজা এবং সহস্রভুজারূপেও!
কিন্তু দ্বিভুজা দেবী দুর্গা?
দুর্গাপূজার আড়ম্বরটি যেমন বর্তমানে এই বঙ্গের নিজস্ব, দ্বিভুজা দনুজদলনীও তেমনই এই বঙ্গেরই এক গ্রামের অধিষ্ঠাত্রী। জেলার নাম পশ্চিম মেদিনীপুর। গ্রামের নাম ভাসানপুকুর। পিংলা থেকে অদূরে এই ভাসানপুকুরেই তিনটি পরিবারে পূজা পান দ্বিভুজা দেবী দুর্গা। এবার পুজোয় তাই আপনার গন্তব্য হতেই পারে ভাসানপুকুর। শহর থেকে দূরে নিরালায় দুর্গাপুজোর এমন সাবেকি আমেজ মেলা ভার!
ভাসানপুকুরের পালবাড়িতে দুর্গা দ্বিভুজা তো বটেই! পাশাপাশি তাঁর রূপটি অভয়ার! অর্থাৎ এই বাড়ির প্রতিমায় দেবীর হাতে কোনও অস্ত্র নেই! বিশ্বসংসারকে তিনি ভয়ে ত্রস্ত করে তুলছেন না। বরং, তাঁর সৌম্য, স্নিগ্ধ বঙ্গলক্ষ্মী রূপেরই জয়জয়কার এই পুজোয়। প্রায় পাঁচশো বছর আগে হুগলির কৃপারাম পাল ভাসানপুকুরে ভদ্রাসন পাতেন। তখন থেকেই শুরু হয় এই অভয়া পূজা। আগে পুজোয় মোষ বলি হলেও এখন পাঁঠা বলি হয়। এছাড়া এই পুজোর আরও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত এই পুজোয় চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের বণিকখণ্ড গান করা হয়।
এছাড়া ভাসানপুকুরের জিতনারায়ণ পালের বাড়ির দুর্গাপ্রতিমাও দ্বিভুজা। তার সঙ্গেই চোখ টানবে কালীতলার লালপাকাতে চৌধুরি বাড়ির পুজো। এখানেও দেবী পুজো পান দ্বিভুজা রূপে।
ভাসানপুকুরের এই তিন দ্বিভুজা দুর্গা যেন বা মহালক্ষ্মী, মহাকালী, মহাসরস্বতীর ত্রিবিধ রূপেরই বহির্প্রকাশ! যুগের পর যুগ গিয়েছে, সময়ের চাকা ঘুরেছে নিজের নিয়মে। যাঁরা পত্তন করেছিলেন এই তিন বাড়িতে দ্বিভুজা দেবীপূজা, কালের নিয়মে বিলীন হয়েছেন দেবীপাদপদ্মেই।
কিন্তু, দেবী তাঁদের পূজার অধিকার ছেড়ে কোথাও থিতু হননি। ভক্তকে রক্ষা করতে আজও তিনি স্বমহিমায় অচলা ভাসানপুকুরে। এই পুজোয় তাই আপনার ঘোরার তালিকায় থাকতেই পারে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই গ্রাম। দুর্গাপুজোর আমেজ আর ভিড় থেকে দূরে ছুটি- দুই পাওনা হবে এখানে।
কী ভাবে যাবেন: যে কোনও ট্রেনে এসে নামুন মেদিনীপুর স্টেশনে। সেখান থেকে ভাড়ার গাড়িতে ঘণ্টা দেড়েকের পথ পেরিয়ে চলে আসুন ভাসানপুকুর। ঢাকের বাদ্যিই আপনাকে আপনা-আপনি নিয়ে যাবে একেকটি পুজোবাড়িতে।
কোথায় থাকবেন: ভাসানপুকুরে থাকার জায়গা পাবেন না। তাই ডেরা হোক শহর মেদিনীপুর। সেখানেই পকেট বুঝে বেছে নিন মনের মতো ঘর।
The post দ্বিভুজা দুর্গার গ্রামে appeared first on Sangbad Pratidin.