দুলাল দে: আগে যে কোনও জুনিয়র ফুটবলার নির্বাচনের সময় এরকমই তো কত অভিযোগ উঠত। মাঠের ধারে ফুটবলার নির্বাচন করার জন্য অন্তত পাঁচ-ছ’জন নির্বাচক। তার উপর দলের চিফ কোচ। এর বাইরে ময়দানের সব বিভিন্ন দাদাদে’র নাম শোনা যেত। ওর ফুটবলার। ওমুকের ফুটবলার। লোক ধরাধরি, ভারতীয় ফুটবলের বিভিন্ন ইকুয়েশনের প্যাঁচ-পয়জার অতিক্রম করে কত যোগ্য জুনিয়র ফুটবলার শেষ পর্যন্ত আর মূল দলে সুযোগ পায় না। ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের (AIFF) উদ্যোগে প্রযুক্তির সৌজন্যে এবার জুনিয়র ফুটবলার নির্বাচনে বোধহয় এই ‘নির্বাচক’ সিষ্টেমের অবলুপ্তি ঘটতে চলেছে।
দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে প্রতিভাবান ফুটবলার খুঁজে বের করার জন্য ‘ট্যালেন্ট সার্চের পাইলট প্রজেক্ট’ চালাচ্ছে এআইএফএফ। ঠিক ছিল, কেরালা, মিজোরাম, গোয়ার পাশাপাশি মণিপুর থেকে প্রতিভা খুঁজে বার করার জন্য এই পাইলট প্রজেক্ট চালানো হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য শেষ মুহূর্তে মণিপুরকে বাদ দিয়ে সেই জায়গায় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনেক আগের থেকেই ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়ে রয়েছে জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের। সম্প্রতি ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন কর্তারা জুনিয়র ফুটবলার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের উপর জোর দিতে গিয়ে আলোচনায় আনেন জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের প্রসঙ্গ।
[আরও পড়ুন: ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিপণ্ণ পশ্চিমে’, হামলার পরে প্রথম প্রকাশ্য ভাষণে স্বমহিমায় রুশদি]
কারণ, চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে টেকনিক্যাল সাহায্য করার কথা জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের (DFB)। ঠিক হয়, এই কয়েকটি রাজ্য থেকে প্রতিভাবান ফুটবলারদের একটি ‘ডাটা ব্যাংক’ তৈরি করা হবে। যখনই জাতীয় দলের বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দল গঠন হবে, এই ডাটা ব্যাংক থেকে ফুটবলার নেওযা হবে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে হবে এই ট্যালেন্ট সার্চ? সেই পুরনো দিনের মতো স্পটার না হলে রাজ্যগুলিতে কয়েকজন নির্বাচক পাঠিয়ে? পরামর্শ নেওযা হয় জার্মান ফুটবল ফেডারেশন থেকে। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে পরামর্শ আসে, কোনও কোচ, নির্বাচকের দরকার নেই। জার্মানিতে এখন যেভাবে ট্যালেন্ট সার্চ চলছে, ঠিক সেভাবেই ভারতীয় ফুটবলেও কাজ হবে। কিছুদিন আগেই নিউটাউনে ফেডারেশনের সেন্টার অফ এক্সলেন্সে জার্মানি থেকে দু’জন বিশেষজ্ঞ এসেছিলেন বেশ কিছু যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা নিয়ে। কোনও টেকনিক্যাল লোকজন নন। এরা শুধুই প্রযুক্তির ঠিক ঠাক প্রয়োগ জানেন। তাতে মাঠের এক পাশে দো তলা সমান বাড়ির উচ্চতায় একটি ক্যামেরা রাখা হয়েছে। নীচে বেশ কিছু মনিটর। এবার পাঁচজন করে দুটো দল গড়ে খেলতে দেওযা হয়েছে। ফুটবলাররা কোন স্পিডে দৌড়চ্ছেন, কার ড্রিবল কত ভাল, কার বডি ফেইন্ট ভাল, কার হেডিং ভাল, কার এনডিওরেন্স ভাল, সব ওই ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরে ধরা পড়েছে। আর প্রত্যেক ফুটবলারের আলাদা আলাদা করে রিপোর্ট ধরা পছেড়ে জার্মানদের সঙ্গে থাকা প্রযুক্তিতে।
[আরও পড়ুন: ভয়াবহ আর্থিক সংকটে অন্ধকারে আর্জেন্টিনা! মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছল ১০০ শতাংশে]
এবার প্রযুক্তির সাহায্যে সব ফুটবলারের রিপোর্ট আলাদা আলাদা করে বিশ্লেষণ করে জানানো হবে ফেডারেশনকে। দেখা গেল, অনূর্ধ-১৪ কোনও ফুটবলারের বেসিক যা গুন, ততে ইউরোপের জুনিয়র ফুটবলারদের সমান। তাতে যে ক’জন জুনিয়র ফুটবলার এই পর্যায়ের চিহ্নিত হবে, অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন ঠিক করেছে, সেই জুনিয়র ফুটবলারদের ইউরোপে পাঠিয়ে ট্রেনিং দিতে। যাতে শুরু থেকেই ইউরোপীয়ান ফুটবলারদের সঙ্গে ট্রেনিং করিয়ে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়া যায়।
একই সঙ্গে ফেডারেশনের হাতে তৈরি থাকবে এক ঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলারের রিপোর্ট। কোন ফুটবলারকে জাতীয় শিবিরে ডাকতে হবে, তার জন্য আর দরকার পড়বে না, কোনও ফুটবল বিশেষজ্ঞর মতামত। যন্ত্রই সব ঠিক করে দেবে। শুধু যন্ত্রর যন্ত্রনায় না পড়লেই হল।