দুলাল দে, দোহা: আগেরদিন পোল্যান্ডকে হারিয়ে উঠেই সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তুলেছিলেন প্রশ্নটা। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ফের সেই প্রসঙ্গটা নিজেই তুললেন আর্জেন্টিনার কোচ স্কালোনি। রীতিমতো বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলার ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের নকআউটে ম্যাচ খেলতে নামতে হচ্ছে। ফুটবলাররা তো ঠিকভাবে রিকভারি করার সুযোগটাও পেল না!’’
আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা বলেন, তাঁদের জন্য স্কালোনি বরাবরই খুব বাজে কপি। টানা দু’ঘণ্টা কথা বলে যাবেন, কিন্তু নিজের ডিফেন্স এতটাই স্ট্রং যে, কপিটা লেখার জন্য একটা যুতসই কোট পাবেন না। দু’ঘণ্টা সাংবাদিক সম্মেলন শেষে দেখলেন, আপনি কোচ হলে যা বলতেন, দল বা প্রতিপক্ষ নিয়ে ঠিক তা-ই বলেছেন স্কালোনি। আর্জেন্টিনার (Argentina) সাংবাদিকদের বক্তব্য কতটা সত্যি, তা দোহায় আর্জেন্টিনা শিবির কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা এতদিনে হাড়ে হাড়ে বুঝে গিয়েছেন। সেই স্কালোনি যখন পরপর দু’দিন কোনও একটা ইস্যুতে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, বুঝতে হবে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মারাত্মক কিছু একটা ঘটেছে।
[আরও পড়ুন: ভারতীয় শিবিরে বড় ধাক্কা, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন শামি!]
বিশ্বকাপের অভিযান শুরুর মুখেই সৌদির কাছে হেরে গিয়ে পুরো দলটা যে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে প্রবেশ করেছিল, সেই চাপটা অবশ্য এখন আর নেই। মেসিদের জন্য এখন প্রতিটা ম্যাচ এক-একটা ফাইনাল। মাঠের বাইরে ফুটবলাররা যাতে কোনওরকম মানসিক চাপে না ভোগেন, পোল্যান্ড ম্যাচ জেতার পরের দিন ফুটবলারদের বন্ধু, পরিবার, আত্মীয়দের কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর আর্জেন্টিনার ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল। সবাই মিলে বার্বিকিউ করেন। সেই প্রসঙ্গ তুলেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলতে নামার আগে বিরক্ত স্কালোনি বলছিলেন, ‘‘পোল্যান্ড ম্যাচ খেলে আমরা যখন ঘুমাতে গেলাম, তখন দোহায় ভোর চারটে। বৃহস্পতিবার ফুটবলারদের রিকভারি করার দিন। সবাই যাতে খোশমেজাজে থাকেন, তাই পরিবারের সবাইকে ডাকাও হয়েছিল ক্যাম্পে। আর শুক্রবার বেশি প্র্যাকটিসও সম্ভব না। কারণ, শনিবার আমরা খেলতে নামব। তা হলে এত কম সময়ের মধ্যে বিশ্বকাপের মতো আসরে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতিটা সারব কী করে?’’
প্রস্তুতি বলতে গিয়ে যেটা আসল কারণ, সেটা নিয়ে অবশ্য কিছুই বলতে চাননি স্কালোনি। ডি মারিয়ার মাসল ইনজুরি। যে কারণে ভাল খেলা সত্ত্বেও পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধেই তাঁকে তুলে নিতে হয়েছিল। মাসল ইনজুরির জন্য প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁকে খেলাতে না পারলে অবশ্যই তা স্কালোনির চিন্তার কারণ। আর তাতেই পুরো ক্রীড়াসূচি নিয়ে মারাত্মক বিরক্ত আর্জেন্টাইন কোচ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ডি মারিয়া একান্তই যদি খেলতে না পারেন, তখন কী করবেন স্কালোনি?
আগেরদিন পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে চোট পেয়ে ডি মারিয়া যখন মাঠ ছেড়েছিলেন, লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে মাঠে নামিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ। লিয়ান্দ্রো অবশ্য ডি মারিয়ার মতো অতটা আক্রমণাত্মক নন। কিছুটা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বলা যায়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁকেই শুরু থেকে ডি মারিয়ার জায়গায় খেলাবেন কি না তা নিয়ে এদিন কোনও মন্তব্য করতে রাজি হলেন না স্কালোনি। আর্জেন্টিনার টিম সূত্রে খবর, ডি মারিয়ার পরিবর্ত হিসাবে আরও বেশ কিছু নাম ভেবে রেখেছেন আর্জেন্টাইন কোচ। পাপু গোমেজ, পাওলো দিবালা এবং অ্যাঞ্জেল কোরেয়া।
যে ২৬ জনের দল নিয়ে স্কালোনি কাতার বিশ্বকাপে (FIFA World Cup 2022) এসেছেন, তার মধ্যে গ্রুপ লিগের খেলায় ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ ফুটবলারকেই খেলিয়ে ফেলেছেন। তবু মাঠে সামান্য সময়ের জন্যও নামার সুযোগ পাননি দিবালা। আর্জেন্টিনার সাংবাদিকরা বলাবলি করছিলেন, ‘‘চোট সেরে উঠছে বলে হয়তো খেলানো হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই মাঠে নামানো হতে পারে দিবালাকে।’’ আর্জেন্টিনা দলে এখন একটাই ভাল খবর, পেনাল্টি মিসের পরও দল শেষ ষোলোয় পৌঁছনোয় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন মেসি। শুক্রবারের প্র্যাকটিসেও যেটুকু সময় সাংবাদিকদের দেখতে দেওয়া হয়েছে, তাতে বেশ হাসিখুশি মুখেই মাঠে আসেন তিনি। প্র্যাকটিস শুরুর আগে বলের উপর বসে সতীর্থদের সঙ্গে হাসতে হাসতে গল্পও করছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা।
[আরও পড়ুন: অভিষেকের হাইভোল্টেজ সভার আগে ভূপতিনগরে বিস্ফোরণ, নিহত তৃণমূল নেতা-সহ ৩]
প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। এশিয়া থেকে যার বিশ্বকাপে অন্তর্ভুক্তি। সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে থামিয়ে দিয়ে স্কালোনি বললেন, ‘‘এই বিশ্বকাপে আর কেউ এগিয়ে-পিছিয়ে নেই। আর মাথায় রাখবেন, অস্ট্রেলিয়া কিন্তু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নকআউটে আসেনি। ওদের ডিফেন্স মারাত্মক শক্তিশালী। আমি শুধু আমাদের দলের খেলা নিয়েই বেশি ভাবছি।’’ অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলারদের কথা বলছিলেন আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রডরিগো ডি পলও। ‘‘ওদের ফুটবলাররা শুধুমাত্র শক্তিশালীই নয়, ওরা মারাত্মক দ্রুত গতির। ম্যাচটা খুব সহজ হবে না আমাদের জন্য।’’
ম্যাচটা খুব সহজ হবে না বুঝতে পেরেই হয়তো সব কিছু নিয়েই মারাত্মক বিরক্ত স্কালোনি। শুধু একটাই ভরসার জায়গা তাঁর দলে। হাতে লিওনেল মেসি (Lionel Messi) নামে একজন ফুটবলার রয়েছেন। যে দলে মেসি রয়েছেন, সেই দলকে আটকাতে গেলে বিপক্ষর যে ঘুম উড়বেই এই কথা বলাই বাহুল্য।