আলাপন সাহা: গল ফেস রোড ধরে সোজা মিনিট দশ-পনেরো গেলেই ওয়ালেওয়াটা বিচ। বেশ কয়েকটা দোকন-পাট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিচের সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই আবার ওয়ালেওয়াটা রেল স্টেশন। বিকেলের দিকে জায়গাটা বেশ জমজমাট। কলম্বোর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজনেরা আসেন। দেখা গেল, কেউ কেউ রাগবি খেলছেন। প্রেমিক-প্রেমিকারা হাত ধরাধরি করে ঘুরছেন। কেউ বাবা-মা’কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে এসেছেন। কিন্তু সবার মধ্যে রবিবাসরীয় ফাইনাল নিয়ে চর্চাটা একইরকম চলছে। যা বিগত কিছুদিন ধরেও এখানে ছিল না। এমনকী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ঘিরেও ভীষণরকমের নিরুত্তাপ ছিল কলম্বো। শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka) ফাইনালে ওঠার পর থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে। খবর নিয়ে জানা গেল, প্রেমদাসা স্টেডিয়ামের কাছাকাছি একটামাত্র টিকিট কাউন্টার খোলা হয়েছিল। মুহূর্তে সব টিকিট নিঃশেষিত। তাই দ্রুত কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হল। সন্ধে পর্যন্ত মাত্র একশো টিকিট গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড আর হসপিটালিটি বক্সের ছিল। রাতের মধ্যে তাও শেষ, কিছুই পড়ে নেই।
রবিবারের ফাইনাল ঘিরে এখানকার উন্মাদনার আঁচটা শ্রীলঙ্কা ফাইনালে ওঠার পর টের পাওয়া যাচ্ছিল। গ্রুপ পর্বে ভারতের (Indian Cricket Team) কাছে হারলেও দাসুন শনাকার টিম যেরকম পারফর্ম করেছিল, সেটাই আশা বাড়িয়ে দেওয়ার একটা বড় কারণ। অনেকেই বলাবলি করছেন, ফাইনালেও রোহিতদের (Rohit Sharma) বড়সড় চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলবে শ্রীলঙ্কা। ভারতও হয়তো সেটা খুব ভাল করেই জানে। তাই আগের দিন শুভমান গিলও বলে দিয়েছেন, ‘‘এই ধরনের স্লো-টার্নার উইকেটে রান তাড়াটা আমাদের আরও ভাল রপ্ত করতে হবে। সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। নৈশালোকে এখানে রান তাড়া করার কাজটা একটু কঠিন হচ্ছে।’’
[আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে শুভেচ্ছার বন্যা, গুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধনে মোদি]
শুভমানের (Subhman Gill) বক্তব্য থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার-টসে জিতলে রোহিত যে প্রথমে ব্যাট করে নিতে চাইবেন, সেই ব্যাপারে কোনও ধোঁয়াশা নেই। তবে যেটা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকছে, সেটা হল রবিবারের প্রেমদাসার বাইশ গজের চরিত্র। সুপার ফোরে র্যাঙ্ক টার্নারে ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ধরে নিচ্ছে, এবারও সেরকম কিছু হবে। তাই আপাতত তিন স্পিনারের ভাবনাই রয়েছে। এর মধ্যে আবার অক্ষর প্যাটেল বাংলাদেশ ম্যাচে চোট পেয়েছেন। তড়িঘড়ি দেশ থেকে ওয়াশিংটন সুন্দরকে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এদিন দুপুরেই টিম হোটেলে ঢুকে পড়লেন ওয়াশিংটন। যদি শেষমেশ টার্নার হয়, তাহলে রবিবার শার্দূল ঠাকুরের জায়গায় সম্ভবত খেলবেন তিনি।
শুক্রবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলায় এদিন আর কেউই মাঠমুখো হননি। বরং সবাই হোটেলেই যে যার মতো করে বিশ্রামে কাটালেন। শ্রীলঙ্কা অবশ্য সকালে ঘণ্টা দুয়েক ট্রেনিং করল। ভারতের মতো তাদেরও চোট-সমস্যা রয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চোট পেয়েছিলেন তারকা স্পিনার মহেশ থিকসানা। এদিন জানিয়ে দেওয়া হল, থিকসানা ফাইনালে নেই। তাঁর বদলে সাহান আরাচিগেকে নিয়ে আসা হয়েছে। অফস্পিনার। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন অভিজ্ঞতা নেই। মাত্র দুটো ম্যাচ খেলেছেন। থিকসানার না থাকাটা ভারতীয় দলে কাছে একটা অ্যাডভান্টেজ হতে পারে। তবে বিপক্ষে কে আছে আর কে নেই, নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না টিম ইন্ডিয়া। বরং বাংলাদেশের কাছে হারের পর আরও বেশি সতর্ক হয়ে নামছেন রোহিত-বিরাট কোহলিরা। যদিও শুভমান বলছেন, ওই হারের কোনও প্রভাব ফাইনালে পড়বে না। এটাও ঠিক যে শেষ ম্যাচে পাঁচজনকে বিশ্রাম দিয়ে নেমেছিল ভারত। ফাইনালে বিরাট-হার্দিকরা সবাই ফিরছেন। পুরো শক্তির ভারত যে অবশ্যই ফাইনালে ফেভারিট হয়ে নামবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু রোহিতরা সেসব মাথাতেই আনছেন না। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবারও এশিয়া কাপ জয়ের সামনে ভারত। শুধু আর একটা হার্ডল বাকি। সেটা জিতে বিশ্বকাপে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে নামাই এখন রোহিতের ভারতের মূলমন্ত্র।