কৃশানু মজুমদার: জেসন কামিংসের (Jason Cummings) সবুজ-মেরুন জার্সি পরা কেবল সময়ের অপেক্ষা। সূত্রের খবর, ৫ জুন সরকারি ভাবে কামিংসের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি ঘোষণা করবে মোহনবাগান (Mohun Bagan)। কাতার বিশ্বকাপ খেলা অস্ট্রেলিয়ার তারকা ফুটবলারের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরাও। পারথে ফোন ঘুরিয়ে জানা গেল, জেসন কামিংস ও তাঁর পরিবারও দিন গোনা শুরু করে দিয়েছেন। জেসন কামিংসের দাদা ডিন কামিংস (Dean Cummings) সাংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে বললেন, ”ভাই মোহনবাগানে খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। ওর কয়েকটা খেলা দেখতে আমি ভারতে যাব বলে স্থির করে রেখেছি।”
জেসনের থেকে বছর দুয়েকের বড় ডিন। তাঁর ডাকনাম ডিনো। মিডফিল্ডের খেলোয়াড় ডিন কামিংস ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ছাত্র। মর্গ্যান বলছেন, ”আমার কোচিংয়ে বছর দুয়েক সোরেন্টো এফসি-তে ছিল ডিন। ও মাঝমাঠের খেলোয়াড়। ডিনের ভাই জেসনের সঙ্গে আমার অবশ্য কখনও সাক্ষাৎ হয়নি।”
[আরও পড়ুন: ‘গুলি করতে হবে কুস্তিগিরদের’, বিস্ফোরক প্রাক্তন IPS, কী বললেন বজরং?]
ডিন কামিংস এখন সোরেন্টোর অধিনায়ক। গত শনিবার পারথ গ্লোরির বিরুদ্ধে খেলেছেন তিনি। ডিন বলছিলেন, ”গত শনিবার পারথ গ্লোরির বিরুদ্ধে আমাদের খেলা ছিল। আমি দুটো গোল করেছি। কিন্তু ম্যাচটা আমরা ৩-২ গোলে হেরে যাই।”
জেসন কামিংসের ক্লাব সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্স। ৩ জুন এ লিগের প্লে অফ ফাইনালে জেসন কামিংসের দলের মুখোমুখি মেলবোর্ন সিটি এফসি। তার পরেই মোহনবাগানের চুক্তিপত্রে সই করে দেবেন জেসন বলেই সূত্রের খবর। ডিন বলছেন, ”মোহনবাগান ক্লাব সম্পর্কে আমি শুনেছি। ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস। এরকম এক ঐতিহ্যশালী ক্লাবে খেলবে ভাই, এটা ভেবেই আমাদের সবার ভাল লাগছে। জেসন নিজেও ফুটছে ভিতরে ভিতরে। সেটা বেশ বুঝতে পারছি। কলকাতা যাওয়ার সম্ভাব্য দিনক্ষণ আমার পক্ষে এখনই বলা সম্ভব নয়, তবে আমার মনে হয় লিগের গ্র্যান্ড ফাইনালের পর কলকাতা যেতে পারে জেসন।”
মোহনবাগান ক্লাবের ঐতিহ্য, ইতিহাস সম্পর্কে অবগত জেসনের দাদা ডিন। সবুজ-মেরুন ভক্তদের সম্পর্কে খবরাখবরও রাখেন বিশ্বকাপারের দাদা। এই প্রতিবেদককে ডিন বলছিলেন, ”মোহনবাগান ফ্যান্স আর ব্রিলিয়ান্ট। প্রিয় দলের পাশে ওঁরা থাকেন সবসময়ে। আবেগপ্রবণ সমর্থকরা দলের জন্য চিয়ার করেন। আর নিজে খেলোয়াড় বলেই জানি সাপোর্টারদের ওই সমর্থন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। গ্যালারি থেকে সমর্থকদের উৎসাহ মাঠের ভিতরে খেলোয়াড়দের রক্তের গতি বাড়িয়ে দেয়। ভাল খেলার ইচ্ছা জাগে মনের ভিতরে। দুর্দান্ত সমর্থকদের জন্য আমার বার্তা, নতুন মরশুমে জেসনের কাছ থেকে অসংখ্য গোল পেতে চলেছেন আপনারা। আপনাকে আগেই আমি বলেছি, ভাই মোহনবাগানের হয়ে নেমে পড়লে আমিও যাব ভারতে খেলা দেখতে।”
সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনার্সের বিপজ্জনক স্ট্রাইকার জেসন। অস্ট্রেলিয়ার এ লিগ থেকে তাঁর নতুন ঠিকানা যে এবার মোহনবাগান, তা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে বিদেশের সংবাদপত্রেও। এত বড় মাপের এক ট্রান্সফারের দিকে তাকিয়ে ফুটবলবিশ্বও।
এহেন জেসন কামিংস কি কখনও সবুজ মাঠে মুখোমুখি হয়েছেন দাদা ডিনের? বিশ্বকাপারের দাদা ডিনো বলছেন, ”জেসন যখন হিবসের (হাইবারনিয়ান) হয়ে খেলত, সেই সময়ে ওর বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। আমি তখন এডিনবার্গ সিটি-র খেলোয়াড়।” ম্যাচের ফলাফল এখন আর মনে করতে পারেন না ডিন। তবে জানালেন তাঁর ভাইয়ের দলই ম্যাচটা জিতেছিল। দুই ভাই সেই সময়ে স্কটল্যান্ডের ক্লাবে খেলতেন। বছর পাঁচেক আগে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন ডিন কামিংস। তাঁর ভাই জেসন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে লড়েছেন ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসির সঙ্গে।
কাতার বিশ্বকাপে স্কিলের মঙ্গলকাব্য লিখে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন আর্জেন্টাইন মহানায়ক। সেই মঞ্চেই খেলেছেন জেসন। কিলিয়ান এমবাপের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে লড়তে দেখা গিয়েছে অজি তারকাকে। ভাইয়ের গর্বে গরিয়ান ডিন বলছেন, ”মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখে সবাই। সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়া দারুণ ব্যাপার।”
নতুন মরশুমে সবুজ-মেরুন জার্সিতে বলকে কথা বলাবেন বিশ্বকাপার। এখন থেকেই আশায় বুক বাঁধছেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। হুয়ান ফেরান্দোর আক্রমণভাগ যে অন্য দলগুলোর রাতের ঘুম কেড়ে নেবে তা এখন থেকেই বলে দেওয়া যায়। ভাইয়ের হয়ে দাদা ডিন ভারতের অন্য ক্লাবগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ”জেসন দুর্দান্ত এক গোলস্কোরার। মনে রাখবেন, ওর বাঁ পা কামান দাগে।”